২৪ নভেম্বর, ২০২৫
কাজল কান্তি দে,
ছবি: কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়ক দূর্ঘটনাস্থল
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যেন কিছুতেই মৃত্যুর তালিকা থেকে নামছে না। বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কটি এখন পরিচিতি পাচ্ছে ‘মৃত্যুর করিডোর’ হিসেবে। চলতি বছরের গেল ১০ মাসে এ মহাসড়কে ১৫৫টি দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৫০ জন আর আহত হয়েছেন ৩৫১ জন। এসব দূর্ঘটনার পেছনে অপ্রশস্ত সড়ক, বিপজ্জনক বাঁক, বেপরোয়া গতি, লবণাক্ততার কারণে পিচ্ছিল সড়ক, অবৈধ যানবাহন চলাচল ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জীবনের জয়গান আর পর্যটনের হাতছানি যেখানে, সেখানেই লুকিয়ে আছে এক মৃত্যুফাঁদ। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক- যা এখন অনেকের কাছে মৃত্যুর করিডোর। প্রতিদিনই এই মহাসড়কে ঝরছে প্রাণ, নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার।
পরিবহন সংস্থা ও গাড়ি চালক জানায়, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ধারণক্ষমতা পেরিয়েছে বহু আগেই। অপ্রশস্ত সড়ক, নেই কোনো সড়ক বিভাজক। যার ফলে সামান্য অসাবধানতায় ঘটছে মুখোমুখি সংঘর্ষ। আরেকটি বড় কারণ-লবণাক্ততা। লবণবাহী ট্রাক থেকে পানি পড়ে সড়ককে করে তোলে পিচ্ছিল। এছাড়া, বেপরোয়া গতি আর অদক্ষ চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা তো আছেই।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের হিসেবে, এই পথে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে অনেক বেশি। এছাড়াও অনুমোদন না থাকলেও এই মহাসড়কে চলাচল করে অনেক ফিটনেসবিহীন যান ও নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা।
কক্সবাজারের স্থানীয় এলাকার বাসিন্দারা বলেন, “প্রতিদিনই সড়ক দূর্ঘটনা হচ্ছে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। আর ঘুম থেকে ওঠে শুনতে পায় ২-৩টা সড়ক দূর্ঘটনা হয়েছে। বৃষ্টি আর শীতের কুয়াশা হলে সড়ক দূর্ঘটনার মাত্রাও বেড়ে যায়। আমরা এই মহাসড়কে জীবন নিয়ে ঘর থেকে বের হয়। আমরা যে আবার ঘরে ফিরব এটার কোন নিশ্চয়তা নেই।”
ডুলহাজারা স্থানীয় বাসিন্দা কবির আহমেদ খোকন বলেন, “কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যে পরিমাণ ৩ চাকার গাড়ি রয়েছে; তা বাংলাদেশের আর কোন মহাসড়কে আছে কিনা সন্দেহ রয়েছে। এই ৩ চাকার গাড়ির কারণে তো দূর্ঘটনা বেশি ঘটছে। এগুলো তো মহাসড়ক থেকে দূর করতে পারছে না প্রশাসন। এখন কাকে দোষ দিবেন?”
চকরিয়ার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা রহমত আলী বলেন, “কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি খুবই সরু। কিছু দূর পরপর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। লবণবোঝাই ট্রাক আর ৩ চাকার গাড়িগুলোর চলাচল বেশি। যার কারণে এই মহাসড়কে দূর্ঘটনা বেশি ঘটছে।”
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বাস চালক মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন বলেন, “কক্সবাজার একটি পর্যটন নগরী। বাংলাদেশের সকল এলাকার মানুষ এখানে যাতায়াত। কিন্তু রাস্তা ছোট, যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। তার ওপর ৩ চাকার দৌরাত্ম অনেক বেশি। এসব কারণে দূর্ঘটনা বেশি হচ্ছে।”
এদিকে হাইওয়ে পুলিশ বলছে, বেপরোয়া গতির যানবাহন ও অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে এই মহাসড়ক চারলেন কিংবা ছয়লেনে উন্নীত করা ছাড়া বিকল্প নেই মনে করেন বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ।
কক্সবাজারস্থ মালুমঘাট হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক জিয়া উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দূর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে যানবাহনের বেপরোয়া গতি। হাইওয়ে পুলিশ সড়কে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানে ৭০ থেকে ৮০ ওপরে গতি হলেই মামলা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ৩ চাকার গাড়ি গুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
কক্সবাজারস্থ বিআরটিএ কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, কক্সবাজার পর্যটন নগরী হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকরা গাড়িযোগে কক্সবাজার আসছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে মহাসড়কটি অনেক ছোট আর যানবাহনের পরিমাণ অনেক বেশি। যদি এই মহাসড়কটি ৪ থেকে ৬ লেনে উন্নীত করা হয় তাহলে দূর্ঘটনা কমে আসবে।
এদিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৬ লেন করার দাবিতে সরব রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার দাবি তাদের।
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৬ লেন উন্নীতকরণ বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক সুনীল বড়ুয়া বলেন, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যে মৃত্যুর করিডোরে পরিণত হয়েছে এটা থেকে আমাদেরকে বাঁচান। অতি দ্রুত মহাসড়কটিকে ৬ লেনে উন্নীত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। তা হলে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত।
সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী বলেন, “কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখন ফাইনাল রিপোর্টের অপেক্ষা আছি আমরা। ফাইনাল রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী প্রক্রিয়ার কাজগুলো শুরু হবে।
বিআরটিএ’র দেয়া তথ্য মতে, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম ১৫০ কিলোমিটার দূরত্বের এই মহাসড়কে চলতি বছরে মৃত্যু হয়েছে ১৫০ জনের আর আহত হয়েছে ৩৫১ জন।
Good news
Good