২৯ মে, ২০২৪
ছবি: কক্সবাজার জেলা সাব-রেজিস্টার অফিস
ঘুষ দুর্নীতির নিরাপদ সরকারী দপ্তর হয়ে উঠেছে কক্সবাজার রেজিষ্ট্রি অফিস। এ অফিসের সর্বত্র নিবন্ধন আইন বিরোধী নানা কর্মকান্ড বিদ্যমান । এসব শাখার কর্তাদের সকলেই অবৈধ আয়ে মশগুল।
প্রতিনিয়তই শাখার কর্তারা দাতা গ্রহীতা সেবা প্রার্থীদের পকেট কাটছে। জমি রেজিষ্ট্রি থেকে শুরু করে নিবন্ধনের ১৭টি কর্মকান্ডে তারা সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নিচ্ছে। সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের আমলাখানার সহকারীদের চাহিদা পূরণ না করলে জমি রেজিষ্ট্রি ও অন্য সকল কর্মকান্ড সম্পাদনে সেবা প্রার্থীরা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
অফিসের প্রধান সহকারী সমরেশ দে এসব ঘুষকান্ডে অন্য সহকারী ও তার আস্থাভাজনদের সহযোগিতা দিচ্ছেন বলে সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগ। তিনি এ পদে যোগ দিয়েই তার নিয়ন্ত্রণে একটি সিন্ডিকেটেরও উত্থান ঘটিয়েছেন।
এ সিন্ডিকেটে আরও রয়েছে অফিসের মোহরার, নকলনবিশ, দলিল লেখক থেকে শুরু করে গুটি কয়েক দালালও।
প্রধান সহকারী সমরেশ জমির মৌজা বুঝে দাতা গ্রহীতাদের ঘুষের প্রস্তাব দেন। তার এ চাওয়ায় বিপত্তি ঘটালে ঐ জমি নির্দিষ্ট দিনে রেজিষ্ট্রি নিবন্ধিত হয় না। তিনি ঘুষ কান্ডে সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করেন। এ চিহ্ন দেখেই সাব রেজিষ্ট্রার নিবন্ধনে স্বাক্ষর নতুবা ঐ দলিল বাতিল করে দেন। এতে করে সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে কর্মঘন্টাকালীন নানা বাদানুবাদ ও বিশৃংখল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধান সহকারী সমরেশের নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৭জনেরও অধীক সিন্ডিকেট সদস্য রয়েছে। এরা হলেন, দলিল লেখক সীতাকুন্ডের রফিক, নুরুল আলম, দালাল রফিক, অফিসের নৈশ প্রহরী নবাবসহ আরও কয়েকজন। এর মধ্যে প্রহরী নবাবের মাধ্যমে গোপন লেনদেন সম্পাদন করেন এ সিন্ডিকেট।
শুধু ঘুষ দুর্নীতি নয় এ অফিসে নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারও বেড়ে গেছে। এসব নিয়ন্ত্রণেও ভুমিকা নেই উর্ধ্বতনদের।
নকলনবিশদের কর্মকান্ড প্রধান সহকারীর পরিদর্শনের নিয়ম থাকলেও তিনি তা করেন না। এক্ষেত্রেও তিনি প্রয়োজনে আত্নীয়তার অজুহাতে হলেও নকলনবিশদের আশকারা দেন। প্রধান সহকারী সমরেশ ছাড়াও নকলখানার প্রধান ধনরঞ্জন দে’র বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ।
তিনিও নিবন্ধন আইন পরিপন্থি কর্মচারীদের নানা কর্মকান্ডে প্রচ্ছন্ন সহযোগিতা দিচ্ছেন। তার বিশ্বস্থ কর্মচারী আরিফের মাধ্যমে গোপনে প্রভাবশালীদের নকল সরবরাহ করেন। সরকারী নিয়মে দলিলের নকল উত্তোলনে ১ থেকে ২ মাস পর্যন্ত সময় লাগলেও মোটা অংকের টাকা পেলে তারা ২-৩ দিনের মধ্যে তা সরবরাহ করেন।
সাব রেজিষ্ট্রার কর্তৃক সপ্তাহে দুইদিন মহাফেজখানা পরিদর্শনের নিয়ম থাকলেও কালে ভদ্রে তা পালিত হয় এ অফিসে। নিয়মিত পরিদর্শন না হওয়ায় নকলনবিশরাও সরকারী কাজে ফাঁকি ও অবহেলার সুযোগ পাচ্ছেন।
গত তিন মাস পূর্বে এরকম অভিযোগে প্রায় ১৩জন নকল নবিশকে সাময়িক বহিস্কার করা হলেও রেজিষ্ট্রি অফিসের গুটি কয়েক দুর্নীতিবাজদের সহযোগিতায় তারা আবারও নিজ কর্মস্থলে বহাল রয়েছেন।
এ অফিসে রেজিষ্ট্রি কাজে ২% ঘুষ ব্যতীত দলিল নিবন্ধন করা হয় না। তবে প্রভাবশালী ও কতিপয় রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেন এ অফিসের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট। ঘাপলা থাকা দলিলে ঘুষের রেটও বেড়ে যায়।
প্রধান সহকারীর কাছে প্রস্তাবিত দলিল হস্তান্তরের পূর্বে দলিলের চেকার মোহরারকে নির্দিষ্ট পরিমান অনৈতিক দাবি না দিলে উক্ত দলিল চেকিং না করে কালক্ষেপন করেন। মোহরার রবিন্দ্রনাথ দে’র বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ভুরি ভুরি।
একই অফিসে মোস্তফা নামের আরেকজনের বিরুদ্ধে দাতা গ্রহীতাকে হয়রানির একাধিক অভিযোগ থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এ পর্যন্ত। শুধু তাই নয় নিবন্ধনের জন্য প্রস্তুতকৃত দলিলে জাতীয় পরিচয় হালানাগাদ সহ নানা প্রত্যয়নে গুজামিল রয়েছে বলে ঐ দলিল নিবন্ধন হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন অফিসের কর্তারা।
এসব বিষয়ে সদর সাব রেজিষ্ট্রির বক্তব্য জানতে চেয়ে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কল গ্রহণ না করায় বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।
Good news
Good