২৮ অক্টোবর, ২০২৫
ছবি: অভিযুক্ত দুইজন
ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রত্যেকটি দপ্তর। গোপনে সংযুক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে ফ্যসিস্ট সরকারের আমলে দায়িত্ব থাকা মাদরাসা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) জাকির হোসেনের সাথে। তার সময়ে অধিদপ্তরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা কর্মচারীদের কিছুটা উপর-নীচ পরিবর্তন পরিবর্ধন হলেও এখনও এসব দায়িত্বশীলদের সহযোগিতায় কলকাটি চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত ।
নেপথ্যে বিদ্যমান রয়েছে আওয়ামী ষড়যন্ত্র। রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে জামায়াতে ইসলামীর সাথে সম্পৃক্ত থাকা শিক্ষক দেখে দেখে বেতন ভাতা এবং সরকারি সুবিধা বন্ধ করতেন গত সরকারের যুবলীগ পরিচয়ধারী এই দাপুটে অফিসার।
অনুসন্ধানে তারই তথ্য মিলেছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক উপপরিচালক (প্রশাসন) জাকির হোসেনের এবং পরিদর্শক ইমন আমিরের যোগসূত্রে একক আধিপত্যের বিরুদ্ধে । গত বুধবার (২২ অক্টোবর) ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলাধ্বীন যশরা আয়েশা হাসান দাখিল মাদ্রাসার মোঃ বদরুল আলম নামে এক শিক্ষকের বেতন ভাতা ছাড়করনের একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে গঠিত শুনানির প্রতিবেদনের খোজ নিতে গিয়ে এমন তথ্য মিলেছে।
এর আগে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের (খুলনা) পরিদর্শক ইমন আমির স্বাক্ষরিত চিঠির জবাবে নির্ধারিত ২৯ ডিসেম্বর শুনানিতে পরিদর্শন কক্ষে স্বাক্ষী প্রমান সহ উপস্থিত হন ভুক্তভোগী শিক্ষক বদরুল আলম। যার চিঠিতে ডকেট নং ১১৭৭ (২৭/১২/২৫) এবং স্বারক- ৫৭.২৫. ০০০০.০১০.০৫. ২৪.০০২.৮৭০ উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রতিবেদন চাইতে গেলেই নানা অজুহাত দেখান পরিদর্শক ইমন আমির। এবং বারবার প্রতিবেদন চাওয়ার কারনে বদরুল আলমরে ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারটি ব্লক করে দেন ইমন আমির।
বিষয়টি নিয়ে নানা মহলের সচেতন ও সমাজিক এবং সরকারী, বেসরকারি সেচ্ছাসেবীদের মধ্যে নানা আলোচনা সনালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। কোন আইনগত জটিলতা না থাকলেও ঠিক কি কারনে বেতন ভাতা বঞ্চিত এই শিক্ষক।
পূর্বে মুঠোফোনে জেলা ও দায়রা জজ হাফিজুর রহমান বর্তমান (টাঙ্গাইল কর্মরত) ও মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সিনিয়র সহকারি সচিব এবং কয়েকজন মানবাধিকার নেতৃবৃন্দরা এই প্রতিবেদনে ব্যপারে খোজ নিয়েছেন ইমন আমিরের কাছ থেকে। তবে কোন কিছুতেই পাত্তা দিচ্ছেন না ইমন আমির , প্রশ্ন উঠেছে ইমন আমিরের শক্তির উৎস নিয়ে।
এঘটনায় ভুক্তভোগী সুত্রে জানা গেছে গত ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর শুনানিতে উপস্থিত হয়ে সকল ধরনের জবাব ও তার পক্ষে তথ্য প্রমান উপস্থাপন করেন বদরুল আলম, তবে কেন কি কারনে অনুপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসা সুপার মোখলেছুর রহমান তা আমাদের অজনা, জানেন শুধু ইমন আমির। মোঃ বদরুল আলম জানান, আমি আমার সকল প্রমানপত্র দাখিল করেছি এবং তারপর মহাপরিচালক মহোদয় আমার বেতন ভাতা চালু করতে নির্দেশ দিলে পরিদর্শক (ইমন আমির) আমার কাছ থেকে ১৬ কোডে জুনিয়র মৌলভী পরে বেতন ভাতা প্রত্যাশী মর্মে ৩০০ টাকার ট্রাম্পে স্বাক্ষর নেন । পরে তৎকালীন উপপরিচালক (প্রশাসন) জাকিরের নির্দেশ চলমান প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন ইমন আমির। এবং বদরুল আলমকে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী উল্লেখ করে জাকির উচ্চবাচ্য করে বলতে থাকেন আমি যতদিন দায়িত্বে আছি ততদিন বেতন ভাতা কোনভাবেই চালু করতে দেওয়া হবেনা। প্রশ্ন তৈরী হয়েছে কিসের ক্ষমতাবলে একটি অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের সিদ্ধান্তকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালো (সাবেক উপপরিচালক) জাকির হোসেন।
বদরুল আলমের শুনানির জবাব, প্রতিবেদনে প্রদানে খামখেয়ালী এবং তার বেতন ভাতা প্রদানে কোন আইনগত বাধা আছে কিনা এসব বিষয় জানতে সবশেষ গত ২২ অক্টোবর শুনানির প্রতিবেদন চাইতে গেলে পরিদর্শক ইমন আমির তার অস্বীকৃতি জানান এবং কোন ভাবেই রিপোর্ট প্রদানে মনযোগী কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি। পাস কাটিয়ে চলে যেতে যেতে রাগান্বিত হয়ে বলেন আমি রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছি। কোথায় দিয়েছেন এমন প্রশ্ন করতেই তিনি ক্ষেপে গিয়ে তেরে আসেন এবং বলেন, আপনি গিয়ে বলুন আমি টাকা খেয়ে (বদরুল আলমের) বিপক্ষে রিপোর্ট দিয়েছি। আর যা পারেন।
একই দিনে (অর্থাৎ শুনানির দিন) সাবেক উপপরিচালক জাকির কর্তৃক ভুক্তভোগী বদরুল আলমকে বেতন ছাড়া হবে মর্মে তার অনুগত কর্মচারী স্বাধীনের মাধ্যমে ব্যাংক চেকের খালি পাতায় স্বাক্ষর করতে চাপ প্রয়োগও করা করে। ফলে এঘটনায় সাবেক উপপরিচালক (প্রশাসন) জাকির হোসেন এবং পরিদর্শক ইমন আমিরের যোগসূত্রের বিষয়টি ঘনিষ্ঠতার প্রমান মিলেছে। সেকারনে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর স্বচ্ছতার ব্যপারে আপত্তি জানিয়েছেন মানবাধিকার নেতাকর্মীরা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থার মহাসচিব মোঃ একরাম উল্লাহ জানান, একটি পরিবর্তিত বাংলাদেশে এমন ঘটনা নিশ্চয় লজ্জাজনক এবং তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
পরে বিষয়টি বর্তমান উপপরিচালক (প্রশাসন) আরিফুল রহমান মজুমদারকে অবগত করলে তিনি আশ্বস্থ করেন এবং খতিয়ে দেখার জন্য সামনে উপস্থিত মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (চট্টগ্রাম) ড. ইসমাইল হোসেনকে দায়িত্ব প্রদান করেন।
এদিকে সরেজমিনে তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে গত ছয়বছর ধরে ঢাকায় মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরে নিয়মিত দৌড়ঝাপ করছেন নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার শিবগঞ্জের যশরা আয়েশা হাসান দাখিল মাদরাসার ইবতেদায়ী জুনিয়র মৌলভী বদরুল আলম। তিনি এই প্রতিবেদকে জানান, মাদরাসা অধিদপ্তরের সাবেক উপপরিচালক জাকির জামায়তে ইসলামীর সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারনে তাকে অন্যায়ভাবে বেতন ভাতা বন্ধ করে রেখেছেন। এবং বেশ কয়েকবার অপমানও করেছেন। তার বিরুদ্ধে গফরগাঁও উপজেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিস বেশ কয়েকবার তদন্ত করেও কোনো অভিযোগের প্রমাণ পাননি। ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা থেকেও বেতন ভাতা চালু করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল।
এমনকি তার বেতন ভাতা চালু করার বিষয়ে গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী আফিসার ( ইউএনও) লিখিত এবং মৌখিক নির্দেশ দেয়ার পরেও মাদরাসা সুপারের সহযোগিতায় দূর্নীতিবাজদের কারনে আজ পর্যন্ত স্বপদে যোগদান করতে পারছেন না এই শিক্ষক।
ভুক্তভোগী এই মাদরাসা শিক্ষক আরো জানান, তার ইনডেক্স কোড এন ২০৯৮৯৩৭, বেতন কোড ১৬ ইবতেদায়ি জুনিয়র মৌলভী। তিনি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত কোনো বেতন ভাতা পাননি। তার স্ত্রী এবং তিনি অসুস্থ। এবং মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাই তিনি তার বেতন চালু করতে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।