৩০ এপ্রিল ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
সারাদেশ / অপরাধ

বাসাইলে ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি কিনছে চায়না ‘ডেইরি ফিড’

২৮ ডিসেম্বর, ২০২২

ছবি: আর এ কারণে নদী থে‌কে অব্যাহতভা‌বে বালু উ‌ত্তোল‌নের ফ‌লে ই‌তোম‌ধ্যে এক‌টি ব্রিজ দেবে গে‌ছে এবং অ‌নেক ঘর-বা‌ড়ি নদী গ‌র্ভে বিলীন হ‌য়ে গে‌ছে

টাঙ্গাইলের বাসাইলে শতশত একর জমি ও শতাধিক ঘর-বাড়ি নিশ্চিহ্ন করে গড়ে তোলা হচ্ছে চায়না ‘ডেইরি ফিড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েট নামের একটি কোম্পানির যৌথ ব্যবস্থাপনায় ডেইরি ফি‌ড নামের এই প্রতিষ্ঠান করা হচ্ছে উপজেলার কাশিল ইউনিয়নের প্রধান সড়কের পাশেই। 

আর এ কারণে নদী থে‌কে অব্যাহতভা‌বে বালু উ‌ত্তোল‌নের ফ‌লে ই‌তোম‌ধ্যে এক‌টি ব্রিজ দেবে গে‌ছে এবং অ‌নেক ঘর-বা‌ড়ি নদী গ‌র্ভে বিলীন হ‌য়ে গে‌ছে। অ‌বৈধভাবে বালু উ‌ত্তোল‌ন ব‌ন্ধে স্থানীয়রা জেলা প্রশাসন, উপ‌জেলা প্রশাসন, পা‌নি উন্নয়ন বোর্ডসহ সং‌শ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর লি‌খিত অ‌ভি‌যোগ দি‌লেও কোনো কাজ হয়নি। এছাড়া স্থানীয়রা মানববন্ধন ক‌রে এর প্রতিকার দাবি ক‌রেছেন। 

সরেজ‌মি‌নে গিয়ে দেখা যায়, নথখোলা এলাকায় ঝিনাই নদীতে বালু উত্তোলনের জন্য বসানো হয়েছে ৫/৬টি ড্রেজার মেশিন। পাশেই রয়েছে দুইটি বাল্কহেড। দিনের বেলায় নদীর পশ্চিমপারে এবং রাতে নদীর মাঝখানে ড্রেজার বসিয়ে দিনরাত উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। আর এই বালু পাইপের মাধ্যমে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে চায়না কোম্পানির জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। এতে করে পুরো নথখোলা এলাকা হুমকির মুখে পড়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে এই এলাকাটি একেবারে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে এমন শঙ্কায় রয়েছেন এলাকাবাসী।

এ কা‌জের তদার‌কি‌তে নি‌য়ো‌জিত বিএন‌পি নেতা ও কা‌শিল গ্রা‌মের বাদল মিয়া জা‌নি‌য়ে‌ছেন, ৫২ বিঘা জমির ওপর এই কোম্পানি স্থাপন করা হচ্ছে। 

অভিযোগ উঠেছে, জেলা ও উপ‌জেলা প্রশাস‌নকে ম্যানেজ ক‌রে দিনরাত বাল্কহে‌ড ও ড্রেজা‌রের মাধ্যমে নদী থে‌কে বালু উ‌ত্তোলন করা হ‌চ্ছে। এছাড়া লোকজন ভাড়া ক‌রে ক্ষমতার দাপট দে‌খি‌য়ে রাতের আধারে অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েট নামের একটি কোম্পানির কাছে জমিগুলো বিক্রি করতে বাধ্য করেছেন বাদল মিয়া, তার ভাই শহীদুল ইসলাম ও তাদের অনুসারীরা। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, প্রথমে তার কাছে হানিফ নামের এক জমির দালাল জমি বিক্রির প্রস্তাব দেন। এতে তিনি রাজি হননি। পরবর্তীতে বাদল মিয়া, তার ভাই শহীদুল তাকে ডেকে নিয়ে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে জমিটি বিক্রি করতে বাধ্য করেন। আরও অনেককেই এভাবে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করেছে তারা।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা জানান, প্রথমে দালাল চক্রটি রাস্তার সামনে থেকে জমিগুলো কিনে নেন। পরবর্তীতে অন্যান্য জমির মালিকরা যখন বুঝতে পারেন যে তার জমিতে আবাদ করা ফসল আনার কোনো রাস্তা বা জায়গা নেই। তখন বাধ্য হয়ে ওইসব আবাদি জমিও তিনি কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন ওই চক্রটির কাছে। আবার একজনের ২০ শতাংশ জমি কিনেছেন চক্রটি। সেটি মাটি ফেলে ভড়াট করার সময় ক্রয়কৃত ২০ শতাংশ ছাড়াও ওই মালিকের আরও ৫/৮ শতাংশ জমি দখল করে নেওয়া হয়েছে। তারপরও এলাকার মানুষ মুখ বুঝে সব সহ্য করে যাচ্ছেন।

জানা গে‌ছে, ৫২ বিঘা জমি নিচু হওয়ায় সেখানে মাটি দিয়ে ভড়াট করা হচ্ছে গত দেড় থেকে দুই মাস ধরে। তবে সেই মাটি বা বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী নথখোলা এলাকার ঝিনাই নদী থেকে। ফলে শতশত একর জমি ও শতাধিক ঘর-বাড়ি নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। আর এই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য স্থানীয় দুই থেকে আড়াইশ লোকজনকে প্রতিমাসে ১০/১৫ হাজার টাকা মাসোহারা দিচ্ছেন বাদল মিয়া। এর বাইরে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও রয়েছেন মা‌সোহারার তা‌লিকায়। বালু উত্তোলনের অনুমতি পাওয়ার জন্য তাদের দেওয়া হয়েছে মোটা অংকের টাকা।

কা‌শিল ইউনিয়ন প‌রিষ‌দের চেয়ারম্যান রমজান আলী বলেন, কোম্পানির ওই জমি ভরাট করার জন্য বাদল মিয়া নদীর পার ও নদীর মাঝ খান থেকে বালু উত্তোলন করছেন। আর এজন্য স্থানীয় দুই থেকে আড়াই শতাধিক লোকজনকে প্রতিমাসে নিজের (বাদল) পকেট থেকে প্রত্যেককে ১০/১৫ হাজার টাকা মাসোহারা দিচ্ছেন। এটি অবৈধ কিন্তু তারপরও তিনি কিছুই করতে পারছেন না।

তিনি বলেন, এই ব্যবসার সঙ্গে স্থানীয় এমপি, প্রশাসন থেকে শুরু করে সকল স্তরের লোকজন জড়িত। এজন্যই বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। এ নিয়ে সম্প্রতি একজন সংবাদকর্মী সেখানে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে বাদল বাহিনীর লোকজন ওই সংবাদকর্মীকে ৪২ মিনিট আটকে রাখে। পরবর্তীতে সংবাদ প্রকাশ না করার শর্তে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

কা‌শিল গ্রামের আব্দুল বারেক মিয়া বলেন, রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিলেও এসব অবৈধ বালু ব্যবসার সময় তারা এক হয়ে কাজ করে। এ কারণে তিনিসহ এলাকার লোকজন কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। 

মনির হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন হুমকি দেয় বালু ব্যবসায়ীরা। তারপরও এলাকাবাসী তাদের গ্রামটি রক্ষায় মানববন্ধন, বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। পরবর্তীতে লিখিতভাবে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, র‌্যাব এবং থানা পুলিশকেও জানানো হয়েছে। এরপর তারা যখন আসেন ওই সময় বালু উত্তোলন বন্ধ থাকে। তারা চলে যাওয়ার সাথে সাথেই আবার শুরু হয় কর্মযজ্ঞ।

নারগিস বেগম নামের এক বৃদ্ধা জানান, তার স্বামী নেই। একটু জমি ছিল। সেখানেই এতদিন ছোট একটি ছাপড়া ঘরে বসবাস করতেন। কিন্তু ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে গত এক মাস আগে তার শেষ সম্বলটুকুও নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। এখন তিনি অন্যের বাড়িতে বসবাস করছেন।

এ বিষয়ে কোম্পানির তদারকির দায়িত্বে থাকা মো. বাদল মিয়া বলেন, বালু উত্তোলনের জন্য তিনি নদীর পশ্চিমপাড়ে জমি কিনেছেন। সেখান থেকেই বালু উত্তোলন করে বাল্কহেড দিয়ে এপাড়ে এনে তা আনলোড করা হয়। অন্যের জমি বা নদী থেকে কোনো বালু উত্তোলন করা হচ্ছে না। আর যাদের জমি কিনেছেন তাদের প্রত্যেককে ওই কোম্পানিতে চাকরির দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এ কারণেই তারা জমিগুলো বিক্রি করেছেন।

বাসাইল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ও‌সি) মোস্তা‌ফিজুর রহমান ব‌লেন, গত দুই মাস আগে ফিড কোম্পানি মা‌টি ভরা‌টের বিষ‌য়ে একটা অ‌ভি‌যোগ দি‌য়ে‌ছিল একজন ব্যক্তি। ত‌বে অ‌ভি‌যো‌গের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়‌নি। কোনো সাক্ষিও পাওয়া যায়নি। এছাড়া কেউ কোনো অ‌ভি‌যোগ দেয়‌নি। অ‌ভি‌যোগ পে‌লে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হ‌বে। 

বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাপিয়া আক্তার জানান, মাঝে মধ্যেই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান চালানো হয়। কয়েকদিন আগেও অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আস‌নের সংসদ সদস্য অ্যাড‌ভো‌কেট বীরমু‌ক্তি‌যোদ্ধা জোয়া‌হেরুল ইসলাম জোয়া‌হের ব‌লেন, ‌চায়না ফিড কোম্পানি নির্মা‌ণে নদী থে‌কে কোনো বালু উ‌ত্তোলনই হ‌চ্ছে না। সেখা‌নে বা‌ড়ি ঘর ভাঙ‌নের কোনো প্রশ্নই আ‌সে না। কোম্পানিটি হ‌লে এলাকাসহ বাসাইলবাসীর অ‌নেক উপহার ক‌রে অ‌নেক বেকার সমস্যার সমাধান হ‌বে। এ সমস্ত বিতর্কিত নিউজ না ক‌রে ভালো নিউজ ক‌রেন।

 

Related Article