৩০ নভেম্বর, ২০২৫
সাকির আমিন,
ছবি: আমন ধান কাটা শুরু। স্থানীয় জাতের প্রতি কৃষক দের আগ্রহ বেশি
ধান কাটা শুরু
স্থানীয় জাতের প্রতি কৃষক দের আগ্রহ বেশ।
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় এ বছর আমন মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে দিগন্তজোড়া আমন ধান পেকে উঠেছে।
একদিকে শীতের সকাল, অন্যদিকে দিনের প্রখর রোদ কিন্তু কৃষকদের মুখে নেই কোনো ক্লান্তি। সব কষ্ট ভুলে তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ধান কাটা, বহন ও মাড়াই জাড়াইয়ের কাজে। মাঠে যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, তা যেন কৃষকের পরিশ্রমের সবচেয়ে সুন্দর রূপ।
কৃষি অফিসের হিসাব অনুযায়ী চলতি মৌসুমে ছাতক উপজেলায় ১২,৯৫০ হেক্টর জমিতে আমনের ফলন হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ভোর হতেই কৃষকরা দল বেঁধে জমির দিকে ছুটে চলছেন। কেউ জমিতে দাঁড়িয়ে ধান কাটছেন, কেউ আবার মাথায় করে ধান বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ির উঠোনে। কৃষাণীরাও পিছিয়ে নেই। উঠোনজুড়ে চলছে ধান শুকানো, মাড়াই-জাড়াই এবং বাছাইয়ের কাজ।
কৃষক আকমল হোসেন বলেন স্থানীয় জাতের ধান প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় সেই স্বাদ আর আমেজ এখন আর নেই যেমন কুদবাদাল,দরিশাইল, ময়না শাইল,চেঙ্গের মুড়ি এসব স্থানীয় জাতের ধান না থাকায় কৃষক দের ক্ষেতের প্রতি আগ্রহ কমে গেছে।
গ্রামীন কৃষক বাবুল মিয়া আনন্দভরা কণ্ঠে বলেন, এবার আল্লাহর রহমান হয়েছে। শীষে দানার পরিমাণ অনেক বেশি। এত কষ্ট, খরচ সব যেন আজ সফল হয়েছে । বাজারে যদি ভালো দাম পাই, তাহলে সারা বছরই স্বস্তিতে থাকবো।
শুধু বাবুল মিয়া নন উপজেলার অনেক কৃষকের মুখেই পাওয়া গেছে একই আনন্দ, একই তৃপ্তি। অনেকেই জানিয়েছেন, তাদের জমিতে গত বছরের তুলনায় ১৫–২০ শতাংশ বেশি উৎপাদন হয়েছে, যা পরিবারে নতুন আশা জাগিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ তৌফিক হোসেন খান জানান, চলতি আমন মৌসুমে ছাতকে ১২,৯৫০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত অনুকূল, তাই চমৎকার বাম্পার ফলন হয়েছে। আমরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে পরিদর্শন করেছি।
এ পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। প্রতিটি প্লটে গড় ফলন দেখা গেছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ মেট্রিক টন। তিনি আরও বলেন, পুরো উপজেলায় এবার ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকদের আগ্রহ, উচ্ছ্বাস এবং মাঠের বাস্তব চিত্র দেখে আমি নিজেও চমৎকৃত হয়েছি।
গত বছরের তুলনায় এবার ২ থেকে ৩ হাজার মেট্রিক টন বেশি উৎপাদন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। মাঠে গেলে দেখবেন ধানের কুশির দৈর্ঘ্য, শীষের পরিমাণ এবং দানার সংখ্যা গত বছর থেকে আরও বেশি। প্রতিটি কুশিতে ১০ থেকে ২০টি দানা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এটা আল্লাহর বিশেষ রহমত।
ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন এ বছর ছাতকে ১২,৯৫০ হেক্টর জমিতে যে আমনের আবাদ হয়েছে, সেটি অতীতের তুলনায় অত্যন্ত ভালো ও বাম্পার ফলন হয়েছে। এর কৃতিত্বের জন্য আমি প্রথমেই মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এরপর ধন্যবাদ জানাই আমাদের পরিশ্রমী কৃষক ভাইদের, যারা মাঠে গিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।
তিনি কৃষি অফিসের ভূয়সী প্রশংসা করে আরও বলেন, ছাতকের কৃষি অফিস সময়মতো কৃষকদের কাছে সঠিক বার্তা ও পরামর্শ পৌঁছে দিয়েছে।
তারা মাঠে কাজ করে কৃষকদের অনুপ্রাণিত করেছেন, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। তাদের এই পরিশ্রমের ফলেই আজ ছাতকে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
Good news
Good