২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
ছবি: কার্পেটিং উঠে বিভিন্নস্থানে খানাখন্দা সৃষ্টি হওয়ায় সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের দেওহাটা-ধানতারা হয়ে ধামরাই উপজেলাপর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সড়কটি স্থানীয়দের কাছে অভিশাপে পরিণত হয়েছে। কার্পেটিং উঠে বিভিন্নস্থানে খানাখন্দা সৃষ্টি হওয়ায় সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও সড়কের ধুলাবালিতে আশেপাশের পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেওহাটা-ধানতারা আঞ্চলিক ৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৪ কিলোমিটারের অবস্থা একেবারেই বেহাল। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কখনো পাকা সড়ক ছিল। অনেকস্থানে কার্পেটিং উঠে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ আবার কোথাও কোথাও জমেছে কয়েক ইঞ্চি পুরু মাটির আস্তরণ। আর সড়কের এই বেহাল দশার প্রভাব পড়েছে প্রকৃতি ও জনজীবনে।
উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্র জানায়, মির্জাপুর উপজেলার দেওহাটা-ধানতারা-ধামরাই সড়কের দেওহাটা হতে বিলগজারিয়া পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটারের আঞ্চলিক সড়ক এটি। এর আগে ২০১৮ সালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরএস এন্টারপ্রাইজ দেওহাটা-ধানতারা সড়কের ৪ কিলোমিটার সংস্কার কাজ করে। যাতে ব্যয় হয়েছিল ৮৩ লাখ টাকা। তবে কিছুদিনের মধ্যেই সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
আবারও সড়কটি সংস্কারের জন্য দুইটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একভাগের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা ব্যয়ে ২ কিলোমিটার আরসিসির কাজ শুরু করেছে। আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএসসিএমআই-ইইসিসি (জেভি) প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়কের কাজ এখনো শুরু করেনি। সড়ক সংস্কার ও নির্মাণকাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ২৮ লাখ ৪০ হাজার ২৪ টাকা। দুই ভাগে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে দেওহাটা-ধানতারা-ধামরাই সড়কের সংস্কার করছে স্থানীয় এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। তবে দুই অংশের কাজের মেয়াদসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। ধীর গতির নির্মাণকাজে আরও ভোগান্তি বাড়ছে সড়ক ব্যবহারকারীদের।
জানা গেছে, দেওহাটা-ধানতারা আঞ্চলিক সড়কটি সংস্কারের তিন বছরের মধ্যেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। সেসময় নিম্নমানের কাজের জন্য সংস্কারের শুরুতেই উঠে গিয়েছিল সড়কের কার্পেটিং। ভাঙা রাস্তায় দিন-রাত মাটি, ইট ও পণ্যবাহী শত শত ট্রাক চলাচল করায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এলজিইডি কর্তৃপক্ষের দাবি ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে নতুন সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে দেওহাটা-ধানতারা আঞ্চলিক সড়কটির বহুরিয়া বাজার পর্যন্ত আশেপাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন কারখানাও। সব মিলিয়ে এসব ইটভাটার ট্রাক ও কারখানার পরিবহন চলাচল করায় সড়কটি ধুলোর সড়কে পরিণত হয়েছে। ধুলায় সড়কের পাশের গাছগুলো মরে যাচ্ছে। এছাড়া স্থানীয়দের ঘরবাড়িতে ধুলোয় বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
মীর দেওহাটা গ্রামের ফারুক হোসেন বলেন, কয়েক বছর ধরেই সড়কটি চলাচলে অনুপযোগী। দেখার কেউ নেই। দিনরাত ইটভাটার ট্রাক চলাচল করছে। এতে সড়কটি আরও খারাপ হয়ে গেছে। সড়কের ধুলায় গাছপালা মরে যাচ্ছে। বাড়িতে বসে খাবার পর্যন্ত খাওয়া যায় না ধুলার কারণে।
দেওহাটা বাজারের ইলিয়াস মিয়া বলেন, সড়কটি এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে পড়ে আছে। জনপ্রতিনিধিরা দেখেও দেখে না। দেখলে মনে হবে না সড়কটি কোনো এক সময় পাঁকা ছিল।
স্থানীয়রা বলছে, কয়েক বছর আগে সড়কের সংস্কার কাজ করা হয়েছিল। কিন্তু সড়কটি বেশিদিন টিকেনি। নিম্নমানের কাজ আর ইটভাটার ট্রাক চলাচল করায় এখন সড়কের বেহাল দশা। আবার কাজ শুরু করেছে, কবে শেষ হবে জানি নেই।
উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাইদ মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন পর সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। এই সড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশে আরসিসির কাজ করা হচ্ছে। এতে সহজেই সড়ক নষ্ট হবে না। সড়কটির কাজ যাতে দ্রুত শেষ হয় সেই আহ্বান জানাই।
মির্জাপুর এলজিইডির প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান বলেন, প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ভাগে সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। তবে সড়ক সংস্কারে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তারপরও সংস্কার সঠিক সময়েই শেষ করা হবে। সংস্কার শেষ হলেই মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
Good news
Good