০৩ Jun, ২০২৩
ছবি: তীব্র গরমে অতিষ্ঠে পানি ব্যবহারের ছবি
সারাদেশ ব্যাপী প্রখর রোদ ও তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। পাশাপাশি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা ও তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে। রোদে পুড়ছে প্রকৃতি, বইছে তাপ প্রবাহ, স্বস্তি নেই কোথাও। জনজীবনে কাহিল অবস্থা।
দুপুরের রোদে খোলা আকাশের নিচে হাঁটলে গরম বাতাসে মুখমন্ডল পুড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। সূর্য এতটাই প্রখর যে,বাইরে বের হলেই মনে হচ্ছে অগ্নিকুন্ড। একটু প্রশান্তি ও শরীরকে সতেজ রাখার জন্য মানুষ ছুটছেন। গাছের ছায়া, কিংবা পুকুর পাড়।
এছাড়াও গরমের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে শিশুরা পুকুর কিংবা নদীর পানিতে পার করছে সময়। শুধু দিনের বেলাতেই নয়, রাতেও গরমে মানুষ | ঘুমাতে পারছে না কারন প্রচুর লোডশেডিং আর বৈদ্যুতিক পাখাও হার মানছে এই তিব্র গরমের কাছে।
শনিবার (০৩ জুন) সরেজমিন, বাসাইলে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। ভ্যাপসা গরমে অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে কর্মজীবী ও বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা আর এই তীব্র রোদে মানুষের মুখে দেখাচ্ছে মলিনতার ছাপ।
গাছের ছায়া আর পুকুর পাড়ে বসে থাকা কয়েকজন দিনমজুরী বলেন, 'অতিরিক্ত গরমে কাজে মন বসছে না আর দুপুরের কড়া রোদ আর সহ্য হচ্ছে না, তাই কাজের ফাঁকে গাছের নিচে আশ্রয় নিচ্ছি।
কৃষক আব্দুল করিম বলেন, তীব্র গরমের মাঝে ফসল কাটতে যেয়ে অবস্থা একেবারে নাজেহাল। বার বার ঠান্ডা পানি আর লেবুর শরবত পান করলেও স্বস্তি মিলছে না।
এই অতিরিক্ত গরমে বাসাইলের জনজীবন যেন গৃহবন্ধী হয়ে পড়েছে ফলে দেখা দিচ্ছে জ্বর, সর্দি, কাশির প্রাদুর্ভাব। এ বিষয়ে একাধিক ডা. সহ এলাকার বয়স্ক বেশ কয়েকজন ব্যক্তিরা জানান, বিগত কয়েকদিনে গরমের কারণে বেশি অসুস্থ হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা।
এদিকে তাপদাহ বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে ঠান্ডা পানীয়। ফুটপাতে প্রচুর পরিমানে বিক্রি হচ্ছে আখের রস, তালের শাস, ডাব ও বিভিন্ন ফলমূলের সাথে লেবুর শরবত।
বাসাইল বাজারের রিক্সা চালক বলেন, প্রচন্ড গরম ও তাপমাত্রা বেশী হওয়ায় কাজে বের হয়েও যাত্রী কম পাই, ফলে আমাদের ইনকাম কম হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-টাংগাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা, বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা আগামী কয়েকদিন এ তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়াও বায়ু মন্ডলে জলীয় বাষ্প বেশি ও বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় গরম এতো বেশি অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস।
প্রখর গরম ও স্বাস্থ্য বিষয়ে বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্হ্য) ডা. মোহাম্মদ নাহিদ খান সোহাগ জানান, গ্রীষ্মের দাবদাহ বা অতিরিক্ত গরম আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই অতিরিক্ত গরমে আমাদের দেহে বা শরীরে যেসমস্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই হতে পারে আমাদের মৃত্যুর কারন।
★আমরা জানি ডায়রিয়া সারাবছরের একটি রোগ কিন্তু প্রতিবছর গরমের শুরু থেকেই ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। গরমের সময় খাবারদাবার খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এসব পচা খাবার খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।গরমের মধ্যে মাছির সংক্রমণ অনেক বেড়ে যায়। এসব মাছির মাধ্যমেও খাবার দুষিত হয়ে পড়ে।
★ডায়রিয়া ছাড়াও গরমের সময় অনেকে পেটের নানারকম জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। পেটে ব্যথা, হেপাটাইটিসে ভোগেন। গরমের সময় বাইরের খাবারেও জীবাণুর সংক্রমণ বেশি হয়। বিশেষ করে খোলা খাবার, বাইরের শরবত, খোলা ফল, আখের শরবত ইত্যাদি খেয়ে বেশিরভাগ মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত হন।
★তাছাড়া গরমের সময় জন্ডিস বা হেপাটাইটিসের মতো রোগগুলো বেড়ে যায়। দুষিত পানি পান করেই এসব রোগে মানুষ আক্রান্ত হন।
★যেহেতু ঋতু পরিবর্তন হয় তাই অনেকেই জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। মূলত হঠাৎ ঠাণ্ডা থেকে গরমে পরিবর্তনের কারণে এটা ঘটে।হঠাৎ গরম পড়তে শুরু করে। বাইরে গরম আবহাওয়া, কিন্তু অনেকের বাসা বা অফিস, গাড়িতে এসি থাকে। ফলে ঠাণ্ডা থেকে হঠাৎ গরমে যাওয়া বা গরম থেকে ঠাণ্ডার মধ্যে গেলে শরীর মানিয়ে নিতে পারে না। তাই অনেকের সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হন, নাক দিয়ে পানি পড়তে থাকে, কারও কারও জ্বর আসে।''
★তীব্র গরমের সময় দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে অসুস্থ পড়ে পড়লে হিট স্ট্রোক বলা হয়ে থাকে। অনেক সময় এতে রোগীর মৃত্যু হয়। মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। কিন্তু কোন কারণে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রির বেশি হয়ে গেলে শরীরের রক্তচাপ কমে যায়, মানুষ তখন অচেতন হয়ে পড়তে পারেন। তীব্র গরমে অনেকক্ষণ থাকলে বা পরিশ্রম করলে সাধারণত গরমে শরীরে পানিশূন্যতার তৈরি হয়। তাতেও শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
গরমে অসুস্থতা থেকে রক্ষায় যা করা যেতে পারে
★প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।
★প্রেশার বা ডায়াবেটিস না থাকলে স্যালাইন পান করা যেতে পারে।
★রোদে বের হলে সবসময় ছাতা ও সানগ্লাস ব্যবহার
★সুতির কাপড়চোপড় ও নরম জুতা পরা
★পুরনো ও বাসী খাবার না খাওয়া
★ভারী ও ফাস্টফুড না খাওয়া
★ কয়েকবার করে হাত,মুখ, পা ধোয়া
★প্রতিদিন গোসল করা
★ঘরে পানি ভর্তি বালতি রাখা, যা ঘর ঠাণ্ডা রাখবে
★সানস্ক্রিন ব্যবহার করা, যা ত্বক ভালো রাখবে
★গরমে রোদের মধ্যে কাজ না করা
★এবং বেশি পরিশ্রমের কাজ করা থেকে বিরত থাকা ভালো।
★ঘরে দিনের বেলাতে পর্দা টেনে দিন।
★প্রচুর পানি এবং দুধ পান করুন।