১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
ছবি: জালিয়াতি করে চাকরি করা সুলেমান
সুনামগঞ্জের সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্টোরকিপার পদে স্থান জালিয়াতি করে ২৩ বছর ধরে সরকারি চাকরি করছেন সুলেমান আহমেদ। একজন ক্ষমতাবান দাপটে কর্মচারী হিসেবে সবাই চেনেন তাকে। তিনি এখানে রীতিমতো গড়ে তুলেছেন একটি দুর্নীতিবাজ চক্র। এ চক্রের বিরুদ্ধে হাসপাতালে ওষুধ, আসবাবপত্র বিক্রি ও পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া রোগীর খাবার সরবরাহ, মেডিকেল সামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতি এবং ঠিকাদারি কাজে প্রভাব বিস্তার সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। আলোচিত ঘটনা গতবছরের ২৮ ডিসেম্বর হাসপাতালের স্টোর রুম হতে এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকার ওষুধ খোয়া গেলে এখানে ও সুলেমানের নাম আসে। তার কাছে হাসপাতালের সবাই জিম্মি। তিনি দুটি নামে কৌশলে দুই স্থানের ঠিকানায় জাতীয় পরিচয় পত্র নেওয়ায় দুটি নাম ধারণ করে থাকেন। একটি সুলেমান আহমেদ ওপর টি সুলেমান মিয়া। জানাযায় ২০০৪ সালে বিএনপি জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ইউনিয়ন ভিত্তিক স্বাস্থ্য সহকারী পদে নিয়োগ পেতে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার ছৈলা আফজালাবাদ ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামের ঠিকানা উল্লেখ করেন সুলেমান।
এখানকার তৎকালীন ও বর্তমান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি দের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান সুলেমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ শহরের মল্লিক পুর। কিন্তু ছাতকের চাকরি বাগিয়ে নিতে কৌশলে প্রতারনার আশ্রয় নেন সুলেমান। ছাতক উপজেলায় এক যুগ চাকরি করার পর সুলেমান নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রথমে সুনামগঞ্জ সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ফেরেন। স্বাস্থ্য সহকারী পরিদর্শক পদে থেকেই দায়িত্ব পেয়েছেন হাসপাতালের স্টোর কিপারের। বর্তমান ভোটার তালিকা অনুযায়ী সুনামগঞ্জ শহরের মল্লিক পুর মহল্লার বাসিন্দা সুলেমান আহমেদ। তার পিতার নাম মোঃ ইয়াদ আলী, মাতার নাম ফাতেমা শরিফ। জন্ম ১৯৮০ সালের ২০ মে। কিন্তু ২০০২ সালে সম্পূরক ভোটার তালিকায় তিনি ছাতক উপজেলার ছৈলা আফজালাবাদ ইউনিয়নের শিব নগর গ্রামের বাসিন্দা। সেখানে তার নাম সুলেমান মিয়া, পিতার নাম এয়াদ আলী, মাতার নাম ফাতেমা বেগম। জন্ম ১৯৬৮ সালের ২৮ এপ্রিল। শিবনগর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে ২০০৪ সালের ৫ জুলাই ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে চেয়ারম্যান শামস উদ্দিনের প্রত্যায়নপত্র নেন সুলেমান। সেটি জমা দিয়ে ওই বছরের ২১ আগস্ট ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সহকারী পদে চাকরি নেন। ছৈলা আফজালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গয়াছ আহমেদ জানান শিবনগর গ্রামে এয়াদ আলীর ছেলে সুলেমান মিয়া নামে কোন লোককে চিনেননি তিনি।
তৎকালীন চেয়ারম্যান শামস উদ্দিন জানান জালিয়াতি করে সনদ নিয়ে থাকতে পারে। স্থানীয় ইউপি সদস্য দিদার আলম বলেন সুলেমান তার গ্রামের বাসিন্দা নন। সংশ্লিষ্টরা জানান ২০০৬ সালে সুলেমানকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোর কিপার হিসাবে পদায়ন করেন তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা.আব্দুল হাকিম। ২০১৮ সালে সেখান থেকে একই পদে ২৫০ শয্যার সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পদায়ন করা হয়। এ জন্য সেখানকার স্টোর কিপারকে সরিয়ে দেন তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাশ। সুলেমান সিভিল সার্জন অফিসের অফিস সহকারী ছমিরুল ইসলামের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। তিনি চলে যাওয়ার পর ২০২১ সালে ছমিরুলকেও জেলা সদর হাসপাতালে হিসাবরক্ষক পদে টেনে নেন। এতে নিয়ম লংঙ্ঘন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সদ্য অবসরে যাওয়া সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা.হিমাংশু লাল রায় জানান স্বাস্থ্য সহকারী থেকে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে। পদোন্নতি দিয়ে স্টোর কিপার করার কোন সুযোগ নাই। বিষয়টি নিয়ে তার সময়ে অভিযোগ এলে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। গত বছরের ৩ নভেম্বর সুনামগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালের ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এম এস আর ক্রয়ে ৪ কোটি ৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকার কার্যাদেশ পায় ঢালী কর্পোরেশন, ঈগল ইন্টারন্যাশনাল ও ফরচুন কর্পোরেশন। এর আগে গত বছরের ১৬ ফেব্রোয়ারি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে হাসপাতালের প্রায় ১০ কোটি টাকার এম এস আর সরবরাহে দরপত্র দাখিলের দিন একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় টেন্ডার ডকুমেন্ট হাসপাতালের সামনে থেকে ছিনতাই হয়। পরে কৌশলে ঢালী কর্পোরেশনকে কাজ দেওয়া হয়। দুদক ও স্বাস্থ্য বিভাগে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে দুটি ঘটনাতেই সুলেমানের হাত রয়েছে। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ দেওয়া শামীম এন্টারপ্রাইজের পরিচালক সাজিদুর রহমান জানান সুলেমানের নেতৃত্বে হাসপাতালে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা বারবার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়া সহ নানা অপকর্মে জড়িত। অভিযোগ দিলে ও কোন কাজ হয়না। দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদকের) সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ- পরিচালক মোহাম্মদ নূরই আলম জানান এ বিষয়ে মামলার পারমিশন আসছে। অভিযুক্ত সুলেমান আহমেদ জানান এসব ভূয়া অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে একটি চক্র ষড়যন্ত্র করছে। সকালে পত্রিকায় নিউজ ছাপিয়ে বিকালে দেয়ালে টানানো হচ্ছে।
Good news
Good