৩০ এপ্রিল ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
রাজনীতি

সংস্কারে বর্তমান সরকারকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবেঃ রাশেদ খাঁন

৩০ অক্টোবর, ২০২৪

সাইফুর রহমান বাদল,
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

ছবি: মতবিনিময় অনুষ্ঠান

গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের যে রোডম্যাপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই রোডম্যাপের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদ একমত। দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে এই সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। দেশ সংস্কারে এই সরকারকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।

বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে ঝিনাইদহ ফ্যামিলি জোন মিলনায়তনে গণঅধিকার পরিষদ ঝিনাইদহ জেলা শাখা আয়োজিত স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

রাশেদ খাঁন বলেন, ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ ও গণবিপ্লবের মাধ্যমে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছি। দেশের মানুষের অধিকার ফিরে এসেছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী দুঃশাসনের যাতাকালে পিষ্ট জনগণ নতুন করে দেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছে। নতুন বাংলাদেশ গড়তে ও জুলাই বিপ্লবের সফলতা টিকিয়ে রাখতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই। দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে এই সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।

তিনি বলেন, আজকের এই গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে ২০১৮ সালে ন্যায্য অধিকার আদায়ে ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল। কিন্তু আপনারা দেখেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী ও আজ্ঞাবহ পুলিশ বাহিনী দিয়ে শেখ হাসিনা নির্মম নির্যাতন চালিয়েছিল।

রাশেদ খাঁন বলেন, আমি ঝিনাইদহের সন্তান। আমি নিম্নবৃত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে এখন জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি করছি। ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছি। ২০২৪ সালের আন্দোলনে কাজ করেছি। পুলিশ আমার বাড়িতেও ২ বার অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু গ্রেপ্তার এড়িয়ে আন্দোলন চালিয়ে গেছি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন সাহেবের মাধ্যমে তারেক রহমানের সাথে যোগাযোগ করি। পরে আমি গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরুসহ নেতারা শেখ হাসিনার পতনের প্লান করি। এর আগে বিএনপি ও অন্যান্য দল শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলন করে ব্যর্থ হলেও এবার সফল হয়েছি।

তিনি বলেন, জুলুম নির্যাতন করে কেউ চিরদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হামলা দিয়ে মামলা করে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার। নুরুল হক নুরকে তারা আটক করে নির্মম নির্যাতন চালায়। নুরুল হক নুর আদালত প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের ৯০ ভাগ পতন হয়ে গিয়েছে, আপনারা আর ১০ ভাগ ধাক্কা দেন। আমরা আজ দেখতে পাচ্ছি, নুরুল হক নুরের সেই বক্তব্যই সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।

রাশেদ খাঁন বলেন, শেখ হাসিনার পতনের পরও ঝিনাইদহে শেখ হাসিনার প্রেতাত্মারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের নামে মামলা হচ্ছে না। ঝিনাইদহে টাকার বিনিময়ে মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। আবার টাকা না দিলে তার নামে মামলাও দেওয়া হচ্ছে। এমন ঘটনা ঘটছে।

ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগকে স্মরণ রাখার তাগিদ দিয়ে রাশেদ খাঁন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছি, আমাদের এখন ঐক্যবদ্ধ থাকার সময়। আমরা শেখ হাসিনার অপশাসনের কঠিন পরিস্থিতিতে দলমত ভুলে রাজপথে থেকেছি। আগামীতেও আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে। সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে দেশ ও জনগণের অধিকার রক্ষার স্বার্থে বিএনপি-জামায়াত-গণঅধিকার পরিষদসহ সকল গণতন্ত্রকামী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

ঝিনাইদহবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি আপনাদের ছেলে, আপনাদের ভাই, আপনাদের সন্তান। আমি সব সময় আমার নিজ এলাকার উন্নয়নের কথা ভাবি। আগামী দিনে এ জেলার স্বাস্থ্যখাত, শিক্ষা, উন্নত কৃষি ব্যবস্থা ও বেকারত্ব দূরীকরণে আমার ব্যক্তিগত পরিকল্পনা রয়েছে। এত বড় একটি জেলার স্বাস্থ্যখাতে গত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকার দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন করেনি। যে কারণে জেলার একমাত্র ২৫০ শয্যা হাসপাতালটির লিফট পর্যন্ত অচল হয়ে আছে। এ জেলার মানুষ কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা পায়নি।

রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে রাশেদ খাঁন বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেছে। শাসক পরিবর্তন হয়েছে। বারবার দেশের মানুষ জীবন দিয়ে স্বৈরাচার সরকারকে উৎখাত করেছে। আর কত রক্ত দেবে দেশের মানুষ? আমরা চাই, বারবার সুযোগ আসবে না, তাই এবার রাষ্ট্র সংস্কার ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমরা এমন রাষ্ট্র চাই, এমন রাজনৈতিক দল চাই, যে দলের ওপর ভর করে দেশে যেন আর কখনোই কোনো শাসক স্বৈরাচার হিসেবে প্রতিষ্ঠা না পায়।

ঝিনাইদহ জেলা গণঅধিকার পরিষদের আয়োজনে মতবিনিময় সভায় দলটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, জেলা সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল জাহিদ রাজন, জেলা গণমাধ্যম আহ্বায়ক মিশন আলীসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Related Article