১১ ডিসেম্বর, ২০২২
ছবি: হোয়াইট হাউস
বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচনী সহিংসতা পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ।
গত শুক্রবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ভবন হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেছেন, বাংলাদেশে সহিংসতার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের চলমান ঘটনাবলির ওপর ওয়াশিংটন খুবই ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখছে। দমন-পীড়ন, হয়রানি বা সহিংসতার কোনো ধরনের ভীতি ছাড়াই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নেয়ার বাংলাদেশের জনগণের অধিকার সমুন্নত রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
কিরবি বলেন, আমরা বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলকে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখার এবং সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই। আমরা চাই রাজনৈতিক দলগুলো হয়রানি ও দমন-পীড়ন থেকে বিরত থাকুক। অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর প্রতি হুমকি, সহিংস কর্মকাণ্ড চালানো বা সহিংসতাকে উসকে দেয়া যাতে না হয়, সে জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের ওপর সহিংসতার ঘটনাগুলো পূর্ণ তদন্তের জন্যও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।রাজনৈতিক সহিংসতায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন : পিটার হাস
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ঢাকায় ভীতি প্রদর্শন ও রাজনৈতিক সহিংসতার খবরে উদ্বিগ্ন। আমরা সব বাংলাদেশীকে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে এবং সহিংসতা, হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই। আমরা সরকারি কর্তৃপক্ষকে সহিংসতার এই প্রতিবেদনগুলো তদন্ত এবং মত প্রকাশের মৌলিক স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সুরক্ষার জন্য আহ্বান জানাই।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গতকাল দেয়া বার্তায় পিটার হাস এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারকারী নাগরিক সমাজের সাহসী সদস্যদের সাথে আমার পরিচিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের তিনজন ব্যক্তিত্বকে চলতি বছর সম্মানিত করতে পেরে গর্বিত। তাদের একজন হলেন পরিবেশগত ন্যায়বিচারের জন্য লড়াইকারী রিজওয়ানা হাসান, যাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) গত মার্চ মাসে একজন আন্তর্জাতিক সাহসী নারী (ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তরিকুল ইসলাম পাচারের শিকার ভুক্তভোগীদের সহায়তা করা ও পাচারকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য জুলাই মাসে মানবপাচারবিরোধী হিরো (এন্টি-ট্রাফিকিং ইন পারসনস হিরো) উপাধি পেয়েছেন। গত শুক্রবার রোজিনা ইসলাম দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়গুলো জনসম্মুখে তুলে ধরার জন্য দুর্নীতিবিরোধী চ্যাম্পিয়ান (এন্টি-করাপসন চ্যাম্পিয়ান) সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। মানবাধিকার দিবসে আমরা তাদের ও অন্য আরো অনেকের নিবেদিত ও অনুপ্রেরণামূলক কাজ উদযাপন করছি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রতিটি দেশে মানবাধিকার রক্ষাকর্মীদের সোচ্চার হওয়া সরকারকে সর্বজনীন মানবাধিকারের অধীনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই সব সাহসী ব্যক্তি ও তাদের পরিবারকে প্রায়ই ভয়, হুমকি, নির্বিচারে আটক, জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, অনলাইনে দেয়া বক্তব্যকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এমন আইনের অধীনে অন্যায় অভিযোগ ও অন্যায্য বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। ২০২১ সালে এনজিওগুলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, বিশ্বব্যাপী ৩০০ বেশি মানবাধিকার রক্ষাকর্মী ও পঞ্চাশের বেশি গণমাধ্যম কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে এবং আরো কয়েকশ’ ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। এই ধরনের দমন-পীড়ন যেখানেই ঘটুক না কেন, তা নিন্দনীয়।
যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ- উভয় দেশেই এখনো অনেক কাজ বাকি উল্লেখ করে পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সর্বজনীন মানবাধিকারকে সমর্থন করা অব্যাহত রাখবে। আমরা স্বাধীনতাকামী ও মর্যাদার দাবিদার ব্যক্তিদের সাথে সংহতি প্রকাশের পাশাপাশি নিজ দেশে আইনের অধীনে সমান অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যাবো। আমরা আমাদের নিজেদের ঘাটতিগুলো সমাধানে ও আরো ভালো কিছু করার জন্য আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করব। আমরা আশা করি, অন্য দেশগুলোও একইভাবে তাদের কাজগুলো করবে। মানবাধিকারের সর্বজনীনতার অর্থই হলো আমরা অবশ্যই নিজেদেরকেও একই মানদণ্ডের কাছে জবাবদিহিতার জন্য প্রস্তুত থাকব। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস আমাদেরকে এই কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমাদের প্রত্যেকেরই মানবাধিকার সমুন্নত রাখার দায়িত্ব রয়েছে।
Good news
Good