২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
কাজল কান্তি দে, 
ছবি: রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করছে জাতিসংঘ
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত জুলি বিশপ। দীর্ঘ সময় ক্যাম্পে অবস্থান করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি বৈঠক করেন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদের সঙ্গে। আর রোহিঙ্গারা দাবি জানান, দ্রুত যেন তাদেরকে স্বদেশ মিয়ানমারে ফেরাতে জাতিসংঘ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) গাড়িবহর যোগে কক্সবাজারের উখিয়ার বর্ধিত ক্যাম্প ৪ পৌছায় জাতিসংঘের মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত জুলি বিশপসহ ৩ সদস্যদের প্রতিনিধি দল। প্রথমে বর্ধিত ক্যাম্প ৪ এর সি ব্লকে বৈঠক করেন রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের সঙ্গে। ঘন্টাব্যাপি এ বৈঠক শেষে ছুটে যান একই ক্যাম্পের শিক্ষা কেন্দ্র ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ সেন্টারে। সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম দেখার পর ১ কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে ঘুরে ঘুরে ক্যাম্পরর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।
পরিদর্শন করে ক্যাম্প ৪ এর সোলার প্যানেল মেরামত কার্যক্রম ও প্রশিক্ষণ সেন্টারে। সেখানে রোহিঙ্গা কিশোরীদের সঙ্গে আলাপ করেন। তারপর ছুটে যান একই ক্যাম্পের ডব্লিউএফপি পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে। সেখানে বিতরণ কার্যক্রম পরিদর্শনের পাশাপাশি আলাপ করেন রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষদের সঙ্গে। এসময় রোহিঙ্গারা নানা দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।
উখিয়ার বর্ধিত ৪ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসমাঈল (৫৭) বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছি ৮ বছর হচ্ছে। কিন্তু এখনো এই সংকটের সমাধান কেউ করে দিচ্ছে না। ক্যাম্পে রেশন নিয়ে জীবন চলছে, কিন্তু পরের দেশে এভাবে থাকতে চাই না। নিজের দেশে ফিরে যেতে চাই।
একই ক্যাম্পের আরেক বাসিন্দা মোহাম্মদ ছলিম (৩৮) বলেন, ইউএন’র পক্ষ থেকে যে মানুষগুলো এসেছে তাদের দাবি করছি, মিয়ানমারে ৩৬ টি জাতি আছে প্রতিটি জাতি যেভাবে সমান অধিকার নিয়ে চলছে আমরাও সেভাবে সমান অধিকার চাই। এখন আমাদের যে অধিকারগুলো তারা কেড়ে নিয়েছে, যে নাগরিকত্ব ছিলো সেটা কেড়ে নিয়ে আমাদের মারধর করে দেশ থেকে বাংলাদেশে পার করে দিয়েছে, আমাদের সে অধিকার ফিরিয়ে দিলে আমরা চলে যেতে এখনও প্রস্তুত আছি।
৪ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা মুজিবুর রহমান (৩০) বলেন, ক্যাম্পে রেশন দিচ্ছে তা পাচ্ছি। কিন্তু মনে তো শান্তি নেই। এটা তো আমাদের দেশ না, এভাবে কত বছর মেহমান হয়ে থাকব। আমরা আমাদের অধিকার নিয়ে নিজদেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।
মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত জুলি বিশপের ক্যাম্প সফর ঘিরে আশায় বুক বাঁধছেন রোহিঙ্গারা। তারা মনে করছেন, রোহিঙ্গাদের স্বদেশ মিয়ানমারে ফেরাতে জাতিসংঘ কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
উখিয়ার ১৮ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ ওমর (৩৩) বলেন, “জাতিসংঘের কাছে অনুরোধ করছি, আমাদের দেশে আমরা যেন অধিকার নিয়ে ফিরে যেতে পারি।”
একই ক্যাম্পের আরেক বাসিন্দা রহিম উদ্দিন (৪৭) বলেন, কিভাবে আমাদের অধিকার নিয়ে ফিরে যেতে পারি জাতিসংঘের কাছে আমাদের দাবি হলো সেটাই। আমরা আমাদের অধিকার নিয়ে মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই। আমরা এখানে আর থাকতে চাই না।
এদিকে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল দুপুরে পর যান ক্যাম্প ১৮ এর রোহিঙ্গাদের সাংস্কৃতিক স্মৃতি কেন্দ্রে। সেখানে রোহিঙ্গা যুবকদের সঙ্গে আলাপের পর স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন জুলি বিশপ। আর প্রতিনিধি দলটি বিকেল ৫ টার দিকে শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন।
পরে জাতিসংঘের মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত জুলি বিশপ বলেন, “আমি মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত। আমার কাজ হচ্ছে মিয়ানমার এবং আশপাশের দেশ থেকে সব ধরণের মানুষের কথা শোনা। আমি এজন্যই বাংলাদেশে এসেছি বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করার জন্য এবং দেখার জন্য যে আমরা কোন সমাধানে পৌঁছাতে পারি কি না। এখানে থাকা জাতিসংঘের দলটি শরণার্থীদের সহায়তায় কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে এবং আমরা হোস্ট কমিউনিটি ও বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করে যাচ্ছি একটা সমাধানে পৌঁছানোর জন্য।”
এরপর জাতিসংঘের মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত জুলি বিশপের নেতৃত্বে কক্সবাজার আসা প্রতিনিধি দল ঢাকা উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ত্যাগ করেন।
Good news
Good
