১৮ এপ্রিল, ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত
পুঠিয়ায় দিন-দুপুরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতারণা করে টাকা-পয়সা, স্বর্ণের গহনা সহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিতে একদল প্রতারক চক্র সর্বদা সোচ্চার।
গতকাল ১৭ই এপ্রিল ২০২৩ রোজ সোমবার পুঠিয়া পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের কাঁঠালবাড়ীয়া গ্রামের দেদার শেখের বাগানের আশেপাশের বাড়িগুলোতে প্রতারণার ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসীর সুত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুর আনুমানিক ২ঃ৩০মিঃ হইতে ৩ঃ৩০মিঃ এর মধ্যে একজন মওলানা টাইপের ব্যক্তি এলাকাবাসীর বাড়ি বাড়ি যায়। এবং নিজেকে একজন মওলানা ও পীর বলে পরিচয় দেয়। এই কথিত পীর-মওলানা একেক বাড়িতে গিয়ে একেক ধরনের বানোয়াট কথা-বার্তা বলে বাড়ির মহিলাদের সহানুভূতি ও অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা-পয়সা, স্বর্ণের গহনা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ অনুযায়ী সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীদের মধ্যে ভুক্তভোগী দুই জনের সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়। ভুক্তভোগীদের একজন শেফালী বেগম ও অন্যজন হলেন পুঠিয়ার বিশিষ্ট চাউল ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলামের স্ত্রী।
এই কথিত ভন্ড পীর-মওলানা প্রথমে শেফালী বেগমের বাড়িতে যায়।
শেফালী বেগম “তারুণ্য ২৪” কে বলেন, “ আমার বাড়ির মেইন গেইট লাগানো ছিলো কিন্তু ছিটকানি আটকানো ছিলো না। তাই হুজুর সরাসরি আমার বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে আমার বারান্দার সিঁড়ির কাছে এসে আমাকে উদ্দ্যশ্য করে বোন বোন বলে ডাকছে। তখন আমি বের হলে দেখি একজন হুজুর আমার বাড়ির ভিতরে সরাসরি চলে এসেছেন। আমি বের হতেই উনি আমাকে মওলানা ও পীর বলে পরিচয় দেওয়াতে আমি উনাকে এভাবে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করার বিষয়ে কড়া কোনও কথা বলতে পারিনি।
তিনি আমাকে বলেন যে, তিনি হজ্ব করার উদ্দ্যেশ্যে মানুষের বাড়ি বাড়ি টাকা সাহায্য নিতে এসেছেন। এবং আমাকে বলেন যে আমি যা পারি উনাকে দিতে। আমি হজ্বের কথা শুনে আর বেশি কিছু না বলে উনাকে দুইশত টাকা দিলাম। টাকা নেওয়ার পরে তিনি আমাকে এক গ্লাস পানি দিতে বললেন। আমি তাকে পানি দিলাম। পানি নিয়ে পানির দিকে তাকিয়ে তিনি পানি ফেলে দিলেন। এবং চলে গেলেন। এবং বাড়ির বাহিরে উনার সাথে আসা আরেকজন মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি সেই মোটরসাইকেলে উঠে চলে গেলেন।”
এই ঘটনার কিছুক্ষণ পরে ঐ এলাকার অন্য আরেকটি বাড়িতে এই ভন্ড পীর সাহেব যান। সেখানে চাউল ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম সাহেবের স্ত্রীকে বলেন যে, “কিছুদিনের মধ্যে তোর ছেলের বড় ধরনের বিপদ হবে।" এই কথা শুনে ফরিদুল ইসলামের স্ত্রী ঘাবড়িয়ে যান। এবং সমাধান চাইলে ঐ ভন্ড পীর বলেন যে, ”তোর গলায় ব্যবহারের স্বর্ণের গহনা দে, আমি মন্ত্র পড়ে দিচ্ছি।" এ কথা বলে ঐ ভন্ড পীর স্বর্ণের চেইন একটি ছোট্ট কাপড়ে নিয়ে ফুঁ দিয়ে তাকে কাপড়টি দিয়ে দ্রুত সেখান থেকে চলে এসে মোটরসাইকেলে উঠে চলে যায়। এবং ফরিদুল ইসলামের স্ত্রী ঐ কাপড়ের টুকরো খুলে দেখেন যে তার স্বর্ণের চেইন নেই।
এ বিষয়ে পুঠিয়া থানায় মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তারা “তারুণ্য ২৪” কে জানান যে, এ ধরনের ঘটনার কোনও অভিযোগ তারা এই প্রথম শুনলেন। তবে এ বিষয়ে তারা তৎপর থাকবেন বলে জানায়।
উক্ত ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে, এই প্রতারক চক্র তার অপরাধ সংঘটিত করার জন্য দুপুর বেলা বেছে নিয়েছে, যখন সাধারণত কেউ বাহিরে থাকে না। এবং এলাকার নিরীহ সহজ-সরল মহিলাদের টার্গেট করেছে, যাতে তারা তার প্রতারণা তাৎক্ষণিক বুঝে উঠতে না পারেন।
বর্তমানে দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও কর্ম ক্ষেত্রের সংকোচনের ফলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই সবাই অধিকতর সাবধানে থাকুন।