১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত
মেরাজ শব্দের অর্থ উর্ধে গমন, উপরে উঠা বা উপরের দিক উঠার সিড়ি। আল-কুর’আনের বর্ণনা অনুযায়ী সাইয়্যেদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মদ (স) রাত্রিকালে স্বশরীরে বোরাকে আরোহণ করে মসজিদে হারাম থেকে ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ করেন এবং জান্নাত, জাহান্নাম অবশেষে আল্লাহর সহিত সাক্ষাৎ এটাই হলো মিরাজ । ৬২০ খৃষ্টাব্দ নবম হিজরি ২৬ রজব দিবাগত রাতে মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল ( মতান্তরে)। অর্থাৎ আমরা যে নির্দিষ্ট তারিখে বা দিনে রাতে যেটাই হোক না কেন সেটা মূলত সঠিক নাই । আল্লাহ বলেন, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত রেখেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।’ ইসরা- ১
এরপর তাঁকে ‘সিদরাতুল মুনতাহায়’ উঠানো হয়। তারপর ‘বায়তুল মা‘মুর এবং সর্বশেষ তাঁকে মহান আল্লাহ তায়ালার সমীপে নিয়ে যাওয়া হয়। এ প্রসংগে আল্লাহ বলেন: ‘অতঃপর সে তাঁর নিকটবর্তী হলো অতি নিকটবর্তী। ফলে তাঁদের মধ্যে দুই ধনুকের ব্যবধান ছিল অথবা আরো কম। তখন আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করার তা করলেন।’ আন- নাজম:৮-১০ অনেকে বলেন মহানবী (স) কিভাবে ‘মাধ্যাকর্ষণ শক্তি’ অতিক্রম করলেন এটা তো কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নাই। এব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
তোমাদের যদি সাধ্য থাকে তবে তোমরা আকাশের সিমা অতিক্রম কর - আর-রহমান ৩৪। মহান আল্লাহর ক্ষমতা, সৃষ্টির বিশালতা ও বৈচিত্র্যতা সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকার কারণে এরূপ যুক্তির অবতারণা করা হয়। কারণ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি শূন্যে অবস্থানকারী প্রত্যেক গ্রহেরই রয়েছে নিজস্ব আকর্ষণী শক্তি । আমাদের মাথার উপর যে বায়ু স্তর রয়েছে, তার উচ্চতা মাত্র ৫২ মাইল। এর উপর আর বায়ু স্তর নেই। আমরা জানি যে, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আছে। Dynamics অর্থাৎ গতি শক্তি বলে, কোনো বস্তুকে যদি পৃথিবী হতে প্রতি সেকেন্ডে ৬.৯৩ অর্থাৎ ৭ মাইল বেগে ঊর্ধ্বালোকে ছুঁড়ে দেয়া যায়, তাহলে পৃথিবীতে সে আর ফিরে আসবে না। আবার পৃথিবী হতে কোনো বস্তু যতই উপরে উঠে যায়, ততই তার ওজন কমে যায়। Arther Clark বলেন, পৃথিবী হতে কোনো বস্তুর দূরত্ব যতই বাড়ে, ততই তার ওজন কমে।
পৃথিবী হতে মুক্তি পাওয়া যায় যদি ঘণ্টায় ২৫ হাজার মাইল বেগে ঊর্ধ্বালোকে ছুটা হয় যেটা সম্প্রতি বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে । একেই মুক্তি গতি (Escape velocity) বলে।
আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ১লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল। আপনি আলোর গতির চেয়ে কম গতিতে চলবেন, তখন সময় নিয়ম মাফিক চলবে। কিন্তু যখন আপনি আলোর গতির সাথে চলবেন তখন সময় এক জায়গায় থাকবে অর্থাৎ সকালে রওয়ানা হলে সকাল থাকবে। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হল, যখন আপনি আলোর গতির চেয়ে বেশী গতিতে চলবেন, তখন সময় উল্টা দিকে চলবে অর্থাৎ সকালে রওয়ানা হলে পূর্ব রাত পাওয়া যাবে।
মেরাজে আলোর গতি ও বুরাকের গতি সমান ছিলো। ফলে সময় ছিলো স্থির। রাসূল (সা) মুহূর্তের মধ্যে এক আকাশ হতে অন্য আকাশে পাড়ি জমাচ্ছিলেন। গতির তারতম্যে সময়ের তারতম্য ঘটে। এক বিজ্ঞানী সে কথাই প্রমাণ করেছেন তিনি বলেছেন
আলোর গতির যত কাছে যাওয়া যায়, ততই সময় শ্লথ হয়ে আসে। তখন এটা একরূপ স্বতসিদ্ধ যে, আলোকের গতি অপেক্ষা বেশী দ্রুত গতিতে গেলে সময় উল্টা দিকে বইবে
ধরুন আপনি যেকোন একটি গ্রহে বেড়াতে যাচ্ছেন। পৃথিবী থেকে গ্রহের দূরত্ব ৯ আলোকবর্ষ বা ৫৪ লক্ষ কোটি মাইল। যদি আপনি রকেটশীপে যান, যার গতি আলোর গতির শতকরা ৯৯.৯৯৯৯৯৯৯৯ মাইল, তবে ঐ গ্রহে পৌঁছতে পৃথিবীর সময় অনুসারে আপনার লাগবে ৯ বছর আবার ফিরে আসতে সময় লাগবে ৯ বছর। আপনি খাওয়ার চিন্তা করবেন। কিন্তু না, আপনার কোনো খাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। কারণ এ ১৮ বছর আপনার নিকট ১২/১৩ ঘন্টার বেশী মনে হবে না। অথচ এর মধ্যে ১৮ বছর অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে আপনি বুঝতে পারেননি। কারণ আপনার গতি সময়ের গতির চেয়ে বেশি। বিজ্ঞানের এ তথ্যের কথা শুনে লোকে অবাক বনে যায়। অথচ ১৪০০ বছর আগে মহান আল্লাহ সময় সম্পর্কে বলেছেন, ‘ভাবো সে ব্যক্তির কথা, যে একটা গ্রাম্য পথ দিয়ে গাধার পিঠে চড়ে যাচ্ছিলো। হঠাৎ গ্রামটা মাটির নীচে ধসে পড়লো। লোকটা মনে মনে বললো, মহান আল্লাহ্ এ গ্রামের অধিবাসীদের পুনরায় জীবিত করবেন কিভাবে? তখন আল্লাহ লোকটির মৃত্যু ঘটালেন।
আর ১০০ বছর পরে এমনি রেখে তাকে পুনর্জীবিত করে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কত দিন এরূপ অবস্থায় ছিলে? লোকটি বললো, ১দিন বা তারও কম। না তুমি ১০০ বছর মৃত অবস্থায় ছিলে। তোমার খাদ্যের প্রতি তাকাও, দেখো অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। আর তোমার গাধার দিকে তাকাও, দেখো কেবল অস্থি পড়ে আছে। এখন দেখো কেমন করে আমি সেগুলো জুড়ে দেই আর গোস্ত পরাই। যখন এঘটনাগুলো তাকে স্পষ্ট করে দেখানো হলো তখন সে বলে উঠলো আমি বুঝলাম, নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান।’ বাকারাহ, ২৫৯। বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের বক্তব্য অনুযায়ী মিরাজ রাসুল সঃ এর জীবনের সবচেয়ে বড় মুজেযা এবং সত্য ঘটনা এবং বিজ্ঞান সম্মত ।
Herold Leland Goodwin Zvi Space Travel গ্রন্থে বলেছেন, ‘আলোর গতি অপো মনের গতি ঢের বেশি।’ যা হোক, আলোর গতির সাথে কোনো বস্তুর গতির সামঞ্জস্যের তারতম্যই (Degree of Dispersion) সময়ের তারতম্য ঘটার অন্যতম কারণ।
মাদ্রিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবীর প্রফেসর স্পেনদেশীয় মিগুয়েল আসীন দেখিয়েছেন যে, মেরাজের ঘটনা ইউরোপের মধ্যযুগীয় সাহিত্যের উপর প্রবল প্রভাব বিস্তার করে। ইতালীর বিখ্যাত কবি দান্তের প্রসিদ্ধ কাব্যগ্রন্থ ডিভাইন কমেডির উপর ঐ ঘটনার (মেরাজের) প্রভাব অত্যন্ত সুস্পষ্ট। বৈজ্ঞানিক ভাবে গবেষণা করলে অবস্যই বুঝা যাবে যে, মহানবী সঃ এর মিরাজ আর বর্তমান বিজ্ঞান সাংঘর্ষিক নাই।
লেখক- কলামিস্ট ও সাংবাদিক
সাইফুর রহমান বাদল
ধন্যবাদ 🌸💚
Good news