১১ অক্টোবর, ২০২৫
ছবি: জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ
পার্বত্যচট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় উপজাতীয় শাসনব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধানসম্মত এককপ্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার দাবিতে শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকাল৩.০০ ঘটিকায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে এই দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব। প্রধান আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য নিউজ এর সম্পাদক মেহেদী হাসান পলাশ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এমজিয়াউল হাসান (অবঃ), কর্নেল হাসিনুর রহমান (অবঃ), লেঃ কর্নেল খন্দকারফরিদুল আকবর (অবঃ), মেজর হারুনুর রশিদ (অবঃ), মেজর (অবঃ) শাহিন আলম, আরজেএফ চেয়ারম্যান এস এম জহিরুল ইসলাম, রিয়াজুল হাসান, এবং ড. শরিফ আব্দুল্লাহ হিস শাকি, অধ্যক্ষ এম, শরিফুল ইসলাম।
সমাবেশে সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি আব্দুস সালাম মামুন এর সভাপতিত্বে, সঞ্চালনাকরেন মো. মোস্তফা আলইহযায, প্রধান সমন্বয়ক, সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ।
এসময় বক্তাগণ বলেন, বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম, অঞ্চলটি কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চল ঘিরে ভূরাজনৈতিক ষড়যন্ত্র চলছে।
আন্তর্জাতিক মহল, প্রতিবেশী রাষ্ট্রভারত ও মিয়ানমারের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের অঙ্গহানির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপজাতীয় উগ্রপন্থী সশস্ত্র সংগঠনগুলো কাজ করে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের অখণ্ডতা রক্ষা করার ক্ষেত্রে সরাসরি হুমকি সৃষ্টি করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে মুসলিম, হিন্দু ও বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীসহ অন্যান্য ১১টি জনগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার প্রায় ৯০% এর বেশি ভোগ করছে মাত্র তিনটি উপজাতীয় জনগোষ্ঠী (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা)।
রাষ্ট্রের সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়েও সেই সকল জনগোষ্ঠীর দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে রাষ্ট্র বিরোধী উগ্রপন্থী ৬ (ছয়) টিসশস্ত্র সংগঠন যা স্থানীয়দের কাছে পিসিজেএসএস, ইউপিডিএফ, পিসিজেএসএস-সংস্কারপন্থি, কেএনএফ, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক ও মগ পার্টিনামে পরিচিত। এরা নিজেদের মধ্যেগুম, খুন, জবরদখল, ভূমিবিরোধ কিংবা অসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে বাঙ্গালী বিরোধী স্লোগান তুলে, তুলতে থাকে দেশের অতন্দ্রপ্রহরী দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেও শ্লোগান "পাহাড় থেকে সেনা হটাও, পাহাড় থেকে সেনা হটাও"!
এখন প্রতিনিয়ত শুনতে পাওয়া যায় "পাহাড় আমার বাপ-দাদার, ভারত আমাদের অংশীদার, আমরা ভারতের সাথে যুক্ত হতে চাই।" এতে আর বুঝতে বাকি থাকেনা “জুম্মল্যান্ড” গঠনের ষড়যন্ত্র, “কুকিচীন” নামে পৃথক রাষ্ট্রের দাবি, ভারতের সাথে যুক্ত হওয়ার প্রচেষ্টা, ডিপ স্টেট পরিকল্পনা এবং ইন্ডো প্যাসিফিক পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক শক্তির হস্তক্ষেপ সব সুপরিকল্পিত দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্রের অংশ।
আমাদেরদেশের তথাকথিত সুশীল সমাজের কিছু ব্যক্তিকে বলতেশুনা যায় উপজাতীয় উগ্রপন্থীদেরসাথে আলোচনা ও সুসম্পর্কের মাধ্যমেপার্বত্য সংকট মোকাবিলা করতে।পৃথিবীর কোথাও উগ্রবাদ আলোচনার মাধ্যমে বন্ধ হতে দেখাযায়নি। আমাদের দেশেও ১৯৭২ সালে উগ্রপন্থীদেরসাথে আলোচনা শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তি নামক ভারতীয় প্রেসক্রিপশনে শেখ হাসিনার করা কালো চুক্তির মাধ্যমে ৩টি জনগোষ্ঠীর কাছেপার্বত্য চট্টগ্রাম বর্গা দেওয়া হয়েছে।
পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত বাঙ্গালী (মুসলামান), বড়ুয়া, তনচঙ্গা,সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াংও ম্রো জনগোষ্ঠীর মানুষেরমাঝে পদে পদে বৈষম্যতৈরি করে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
পার্বত্য অঞ্চলে রাষ্ট্রীয় সকল ধরনের সুযোগ সুবিধার ৯০% এর বেশিতিনটি জনগোষ্ঠীর মাঝে বন্টনের জন্য তাদেরকে দিয়ে দেওয়া হয়, যথা: ১। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ২। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, ৩। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ৪। রাঙামাটি, খাগড়াছড়িও বান্দারবান পার্বত্য জেলা পরিষদ, ৫।তিন জেলায় তিনজন রাজা (সার্কেল চিফ) ৬। তিনজেলায় মোট ৩৮৯টি মৌজাপ্রধান গণকে বলা হয় হেডম্যান, তারাও উপজাতি। পাড়া মহল্লার প্রধান ,পাড়া কারবারি, সেখানেও এই তিন জনগোষ্ঠীরবাহিরে প্রতিনিধি হওয়ার নিয়ম নেই। এছাড়াওপার্বত্য তিন জেলার সংসদীয় আসনগুলো উপজাতিদের জন্য বরাদ্দকৃত। উপজেলা, ইউনিয়ন-ওয়ার্ডকেও অস্ত্রের জোরে তাদের দখলেনিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও বাঙালি জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে জিম্মি করে রেখেছে উপজাতীয়সন্ত্রাসীরা।
যদিও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা (খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবান) এরমোট জনসংখ্যার ৫০.০৬ শতাংশবাঙ্গালী এবং ৪৯.৯৬শতাংশ অবাঙ্গালী বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোক। এত সুযোগ সুবিধা পেয়েও রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপবন্ধ করছেনা তারা। বরং দিন দিনবেড়েই চলেছে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম। এখন বাকী রয়েছে শুধুমাত্র তাদের নামে অঞ্চলটি লিখে দেওয়া। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপস্থিতি শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, বরং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একান্ত অপরিহার্য।
সার্বভৌমত্ব সুরক্ষাপরিষদ মনে করে,
১. উপজাতীয় শাসনব্যবস্থা বাতিল করে সারা দেশের ন্যায় সংবিধানসম্মত একক প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা।
২. পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর একটি পূর্ণাঙ্গ “মাউন্টেনডিভিশন” গঠন করা জরুরি, যাতে উগ্রবাদ দমন ও রাষ্ট্রেরঅখন্ডতা রক্ষা করা যায়।
৩. বর্তমান শান্তি চুক্তি নামক অবৈধ কালোচুক্তি বাতিল করে পার্বত্য অঞ্চলেরসকল জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি নিয়ে সম্প্রীতি কমিশনগঠন করা।
৪. রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কৌশল (Security Strategy)-এর সাথে কূটনৈতিককৌশল (Diplomatic Strategy) সমন্বয় করে বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডনির্মূলের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিচালনাকরে তা বাস্তবায়ন করা।
৫. পার্বত্য অঞ্চল থেকে সন্ত্রাস নির্মূলেরজন্য প্রত্যাহারকৃত ২৪৬টি সেনাক্যাম্প পূণ:স্থাপন করে, ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি ও সন্ত্রাস নির্মূলঅভিযান অব্যাহত রাখা।
পার্বত্যচট্টগ্রাম বাংলাদেশের অখণ্ড ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানে কোনোবিচ্ছিন্নতাবাদী রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন কখনোই সফল হতে দেওয়াহবেনা। তাই উপজাতীয় শাসনব্যবস্থাবাতিল করে পার্বত্য চট্টগ্রামেবসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীর সমঅধিকার নিশ্চিত করে সারা দেশেরন্যায় সংবিধানসম্মত একক প্রশাসনিক কাঠামোপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাষ্ট্রেরনিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও নাগরিক অধিকারেরপ্রশ্নে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ সর্বদা রাষ্ট্রের পাশে থেকে কাজকরবে। প্রশাসন সন্ত্রাস দমনে ব্যর্থ হলে, দেশের সর্বস্তরের জনগণের মাঝে ঐক্য গঠনকরে পার্বত্য চট্টগ্রাম রক্ষার জন্য কঠিন কর্মসূচিগঠন করা হবে।