১৩ অক্টোবর, ২০২৫
ছবি: উচ্ছেদ অবস্থায় জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়িতে গড়ে উঠা স্থাপনায় অভিযান পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন।
গতকাল রবিবার সকাল ১০টার দিকে নিলিমা রিসোর্টের উত্তর-পশ্চিমে ঝুপড়ি দোকানে এ অভিযান চালানো হয়। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত টানা ৭ ঘন্টার এই অভিযানে ৮০টির ঝুপড়ি দোকান সরিয়ে ফেলা হয় এবং ১০টির মত দোকান সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলা হয়।
জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে এই অভিযানে সেনাবাহিনী, র্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশের যৌথ টিম অংশ নেয়। বালিয়াড়ি দখলমুক্ত করতে ব্যবহার করা হয় একটি এক্সকাভেটরও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০টার কিছুটা পরে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে বলা হয়, বালিয়াড়ি থেকে সকল স্থাপনা সরিয়ে নিতে অন্যতায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ অবস্থায় তাঁদেরকে ২০ মিনিট সময় দেওয়া হয়।
নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও দোকান সরানোর পক্ষে কাউকে দেখা যায়নি। এক ঘন্টা পরে, একটি একটি সরাতে থাকে দোকানগুলো। কিন্তু, এতগুলো দোকান সরাতে যে পরিমাণ সময়ের প্রয়োজন, সেই সময়ের মধ্যে স্থাপনা সরানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।
পরে অতিরিক্ত লোকজন তড়িঘড়ি করে প্রসাদ প্রেরাডাইসের সামনের সড়কের দু'পাশে সারি সারি করে ভাসমান দোকানগুলো রাখা হয়।
এতে ক্ষিপ্ত হয়, টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ। তিনি এক্সকাভেটর ডেকে ১০টির মত দোকান গুঁড়িয়ে দেয়। অভিযান চলাকালে নষ্ট হয়ে যায় একটি মাত্র এক্সকাভেটর। এই সময় বীচ কর্মীকে মারধরের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে হৃদয় নামের এক যুবককে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
উপস্থিত জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো: শাহেদুল আলম দোকানগুলো গুড়িয়ে না দিয়ে সরিয়ে নিতে আবারো সময় বেঁধে দেন। এ-সময় তিনি বলেন, বালিয়াড়িতে কোন ঝুপড়ি দোকান থাকতে পারবে না। সৈকতের সৌন্দর্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে জেলা প্রশাসক কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সবার অধিকার আছে ব্যবসা করার, কিন্তু, বালিয়াড়ি দখল করে নয়। একটা সিস্টেমের মধ্যে যেতে হবে। পুরাতন দোকানগুলো সরিয়ে নিতে হবে। কেউ বালিয়াড়িতে থাকতে পারবে না। যাদের বৈধ কাগজ পত্র আছে, তারা অবশ্য ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবে।
তবে, সেটি হবে জেলা প্রশাসনের অনুমতিক্রমে। যত্রতত্র দোকান বসিয়ে সৈকতের সৌন্দর্য বিনষ্টকারীকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এর আগে শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অংশীজনদের নিয়ে এক জরুরি বৈঠকে সৈকত এলাকা দখলমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সদ্য যোগদানকৃত জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান।
সভায় জানানো হয়, বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সৈকতের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) থেকে সব ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
সভা শেষে সিদ্ধান্ত হয়- ১১ অক্টোবর রাতের মধ্যে নতুন স্থাপনা ও ১৬ অক্টোবরের মধ্যে পুরোনো স্থাপনা সরাতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনেকেই স্থাপনা না সরানোয় রবিবার অভিযান চালিয়ে তা উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করা হয় সৈকতের বালিয়াড়ি।
সহকারী কমিশনার ( ভূমি) শারমিন সুলতানা বলেন, 'মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ আছে, ভাসমান দোকান উচ্ছেদ করে বালিয়াড়ি দখলমুক্ত করা। সকালে এসে তাদেরকে মাইকিং করে জানানো হয়েছিল। কিন্তু, কেউ সারা দেয়নি। পরে ৫০-৬০ টি দোকান তারা নিজ উদ্যেগে সরিয়ে নিয়েছেন। কিছু সরাতে দেরি হওয়াতে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।'
সদর উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, 'উপরের নির্দেশেই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ঝাউবাগানের ভেতর থেকে ৬০টির মত দোকান সরানো হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি ভেঙে দেওয়া হয়। কেউ ঝাউবাগান দখল করবে, কেউ বালিয়াড়ি দখল করবে, এভাবে'তো চলতে পারেনা। আজকের পর কেউ সাহস করবেনা, সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করার। এর পর কেউ আবার সৈকত দখল করার চেষ্টা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
অভিযোগ রয়েছে, ইসিএ এলাকায় গত এক বছরে কয়েকশো দোকান গড়ে উঠেছে। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে গড়ে উঠা এসব স্থাপনা শহরের নাজিরারটেক, সুগন্ধা, কলাতলী, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, সোনারপাড়া, ইনানী, পাটুয়ারটেক এলাকায়। প্রতিদিন এসব এলাকায় নতুন নতুন স্থাপনা গড়ে তোলা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর নেই বললে চলে। গত দুইমাসে এই দখলদারিত্বের তথ্য বেশি পাওয়া যায়। বিশেষ করে গতমাসে (সেপ্টেম্বর) মাসে বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের বদলির পরপরই সুগন্ধা পয়েন্টসহ অন্যান্য পয়েন্টগুলো নতুন করে কয়েকশো দোকান ও টংঘর তোলা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে সুগন্ধায় নিলিমা রিসোর্টের পশ্চিমে সৈকতের বালিয়াড়িতে রাতের আঁধারে হঠাৎ শতাধিক ঝুপড়ি দোকান বসে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম বলেন, নতুন এবং পুরাতন বুঝিনা, সৈকত থেকে সব দোকান সরাতে হবে। পুরাতন দোকানগুলো সরাতে আজকেও (রবিবার) মাইকিং করে বলা হয়েছে। ১৬ অক্টোবর এসব দোকান উচ্ছেদ করা হবে। বালিয়াড়ি দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা কার্যকর করা হচ্ছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআইজি) আপেল মাহমুদ বলেন, তাদেরকে দোকান সরিয়ে নিতে আগেই বলা হয়েছিল। কিন্তু, তারা সরিয়ে নেয়নি। উচ্ছেদ না চালিয়ে তাদেরকে শেষবারের মতো সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা না সরানোয় প্রশাসনের নির্দেশে
১০-১৫ টির মত দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। অন্য দোকানগুলো তারা নিজ উদ্যেগে সরিয়ে নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতকে ১৯৯৯ সালে সরকার প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। আইন অনুযায়ী, জোয়ার-ভাটার অঞ্চল থেকে ৩০০ মিটার পর্যন্ত কোনো স্থাপনা নির্মাণ বা উন্নয়ন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
Good news
Good