৩০ এপ্রিল ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
সারাদেশ / রাজনীতি

ময়মনসিংহ—১০ আসনে শত বাঁধায় নির্বাচন আয়োজনের মুখোমুখি স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা

০৬ জানুয়ারী, ২০২৪

আঃ হালিম সরদার,
গফরগাঁও উপজেলা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

ছবি: সংগৃহীত


আগামিকাল  ৭ জানুয়ারী রোববার সারাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচননের প্রচারণাকে  কেন্দ্র করে 
ময়মনসিংহ জেলার ময়মনসিংহ—১০ (গফরগাঁও—পাগলা) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে নৌকার প্রর্থীর বেশ কয়েকটি জায়গায় ব্যপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

 গফরগাঁও —পাগলা আসনে গত ২৬ নভেম্বর আওয়ামীলীগ এর প্রার্থীতা চুড়ান্ত করে ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলকে নৌকার মার্কার প্রার্থী হিসাবে নির্ধারিত করে দলটি।

এ আসনে স্বতন্ত্রভাবে সংসদ নির্বাচন করার জন্য আরো দু'জন মনোনয়ন পত্র দাখিল করে। তারপর নির্বাচন কমিশন কর্তৃক  নানা ধরনের যাচাই বাছাইয়ের পর গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতিক বরাদ্দ হয়।  প্রতিক পেয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচারে মাঠে নামে মনোনীত প্রার্থী ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল। তবে অভিযোগ থাকায় উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে মাঠে আসে আরো দুই স্বতন্ত্রপ্রার্থী। তাদের মধ্যে গত ২০ ডিসেম্বর ট্রাক মার্কায় ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেন দীপু এবং গত ২৪ ডিসেম্বর ঈগল পাখি মার্কায় এডভোকেট কায়সার আহমেদ নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে।

তারপর থেকে গফরগাঁও পৌর এলাকাসহ আশপাশের ইউনিয়নের প্রচার কেন্দ্রেগুলোতে তিন গ্রুপের মধ্যে ব্যপক উত্তেজনা শুরু হয়েছে।  বেশ কয়েকটি জাগায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মারধর এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।
 

গত (১ জানুয়ারি) সোমবার রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী  এডভোকেট কায়সার আহমেদের ঈগল মার্কার   নির্বাচনী প্রচারকে কেন্দ্র করে চরআলগী ইউনিয়ন এর কাচারীপাড়া বাজারে স্থানীয় গিয়াসউদ্দিনের ছেলে আবু সাইদের দোকান ভাংচুর করেছে নৌকা সমর্থক কর্মীরা।

এ অঞ্চলে প্রায় সময়ই ট্রাক প্রতীকের  স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আবুল হোসেন দীপুর গাড়ি বহরে হামলার অভিযোগ উঠেছে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেন দীপুর একান্ত সহকারী নমো. রাসেল মিয়া বলেন নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা কে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত নৌকা সমর্থনের কর্মীরা উপজেলার পাগলা বাজার, দত্তেরবাজার, নিগোয়ারীসহ  বিভিন্ন জাগায় পৃথক পৃথকভাবে  হামলার ঘটনা করেছে এসব ঘটনায় সব মিলিয়ে ৭০ থেকে ৮০ জন কর্মী আহত হয়ে বিভিন্নস্থানে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এসব হামলার  মধ্যে শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৮ টার দিকে রসুলপুর, চরআলগী, বারবারিয়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে চরআলগী থেকে আসার পথে উপজেলার জামতলার মোড়ে  পৌঁছালে তার গাড়ি বহরে হামলা করে নৌকার কর্মীরা। 

এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আবুল হোসেন দীপু বলেন, ‘৮০ থেকে ৯০টি গাড়ির বহর নিয়ে উপজেলার  পৌর শহরের জামতলা মোড়ের টাউনক্লাব মসজিদের সামনে আসতেই নৌকার সমর্থকরা আমার গাড়িবহরে হামলা চালায়। হামলায় আমার গাড়িবহরের অস্তত ৫০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে আমার ১৫ থেকে ২০ জন কর্মী আহত হয়েছেন।’ গুরুতর অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ৫জনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।


শহরে হামলার ঘটনায় পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সন্ধ্যা ৮টার দিকে পৌর শহরের জামতলা মোড়ের টাউনক্লাব মসজিদের সামনে দিয়ে আবুল হোসেন দীপুর গাড়িবহর যাচ্ছিল। এসময় নৌকার সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র ও ইটপাটকেল নিয়ে ডা. আবুল হোসেন দীপুর গাড়িবচরে হামলা চালান। আবুল হোসেস দীপুর লোকজন তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দেবাশীষ রাজবংশী বলেন, ‘নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় আটজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আরও দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তবে তারা ভর্তি হননি।’

এ বিষয়ে জানতে নৌকা সমর্থনকারী একাধিক আওয়ামীলীগ নেতার সাথে যোগাযোগ করে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

স্বতন্ত্র প্রার্থীকে এমপি বাবেলের হুমকি: গফরগাঁও পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইমামবাড়ী এলাকায় নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২ডিসম্বর) রাত ১১টার দিকে সেখানে গিয়ে বক্তৃতা করেন এমপি বাবেল। তিনি অভিযোগ করেন,
তিনি অভিযোগ করেন, কায়সার আহাম্মদ টাংগাব ইউনিয়ন থেকে সন্ত্রাসী ডাকাত এনে নৌকার ক্যাম্প ভাংচুর করেছেন।

এদিকে সোমবার পাগলা থানার পাঁচবাগ ইউনিয়নে নির্বাচনী সভায় উপজেলা যুবলীগ নেতা মো. আরিফ হুমকি দিয়ে বলেন, ‘জামায়াত—শিবির—বিএনপি বিশেষ করে যদি বলে দিতে চাই কায়সার—দীপু (ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আবুল হোসেন দীপু) একই জিনিস। এদের সঙ্গে আঁতাত করে বিএনপি কেন্দ্রের মধ্যে ডিস্টার্ব করতে পারে। তাদের পিঠের চামড়া উঠিয়ে ফেলবেন। তারা যেনো কেন্দ্রে যেতে না পারে।’

এমপির অনুসারী এক যুবলীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চামড়া তুলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংসদ সদস্য এবং তাঁর অনুসারীর হুমকির ভিডিও ছড়িয়েছে।ভিডিওতে দেখা গেছে, সংসদ সদস্য বাবেল জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ঈগল প্রতীকের প্রার্থী কায়সার আহাম্মদের উদ্দেশে বলেছেন,  ‘ওই রাজাকারের বাচ্চা, তোর যদি সাহস থাকে তুই দিনের বেলা আয়, কবে আবি, কহন আবি, তুই আয়। তুই আইলে পরে বুঝবি কোন মাডিতে (মাটিতে) আইছচ, ক্যামনে আইছচ আর ক্যামনে যাইবি। ৯ নম্বর ওয়ার্ডবাসী ওই রাজাকারের বাচ্চা আইলে কি অইবো?’

জবাবে এমপির সভায় উপস্থিত ব্যক্তিরা স্লোগান দেন, ‘চামড়া তুলে নিব’। ফাহমী গোলন্দাজ এরপর বলেন, ‘৭ তারিখের পরে কিন্তু ৮ তারিখ আছে। ৩৬৫ দিনে বছর, এইডাও মনে রাখতে হবে। ওই এক টুকরা জায়গার ভিতরে বইস্যা থাক, অতো দূর থাইক্যা আস, আইস্যা ফালাফালি কর। থাকবে না, কিছুই থাকবে না।’
 

এমপি ও যুবলীগ নেতার হুমকির বিষয়ে বুধবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দিয়েছেন অভিযোগ করেছেন কায়সার আহাম্মদ। অভিযোগে বলা হয়েছে, ৮ জানুয়ারি নির্বাচন কর্মকান্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বাড়িঘর ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন এমপি। 
অভিযোগ দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে কায়সার আহাম্মদ বলেছেন,  এমন হলে গফরগাঁওয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।

অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. দীপুর ভোটের প্রচারে গত রোববার মামলা হয়। অভিযোগ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেছেন, এমন হলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। বিষয়টি নিয়ে লিখিত ভাবে প্রতিকার চাওয়া হয়েছে। 

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, অভিযোগ পেয়েই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

Related Article