২৮ Jun, ২০২৫
ছবি: জোরপূর্বক জমিদখল কথা বললেই হামলা মামলার হুমকি দেন এই নেতা। ভয়ে মুখছে না কেউই
জমি দখল ও জলাবদ্ধতার প্রতিবাদে আতাকরা গ্রামে উত্তেজনা, মিথ্যা মামলায় জনগনকে হয়রানি নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে কুমিল্লার লাকসাম থানার এক প্রভাবশালী বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। আলোচিত সেই অভিযুক্ত বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন।
আজিম গ্রুপ সমর্থিত জসিম উদ্দিন লাকসাম উপজেলার গাজীমুড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বর্তমানে জোরপূর্বক জমি দখল, সমীকরণে মিল না হলে মিথ্যা মামলায় হয়রানি এবং নানা অপকর্মে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন রাজনৈতিক পরিচয়ের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা নানা অনিয়ম ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের কারণে। তথ্য পাওয়া গেছে গত ফ্যসিস্ট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের ব্যানারে সামনের সারিতে থেকে সক্রিয় ছিলেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, সেই সময় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় একাধিক অপকর্মের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর হঠাৎ করেই রাজনৈতিক মোড় পাল্টে নিজেকে বিএনপির ত্যাগী নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে শুরু করেন। এই হঠাৎ রঙ পরিবর্তনের কারণ অনুসন্ধান করলে বের হয়ে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য—বর্তমানে তিনি লাকসাম থানার বিভিন্ন অবৈধ ইনকাম ও দখল-বাণিজ্যের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
স্থানীয়দের দাবি, থানার প্রতিটি অনিয়মতান্ত্রিক অর্থ উপার্জনের উৎসে জসিমের নাম রয়েছে সামনে কিংবা পেছনের সারিতে। কেউ তার এই কার্যক্রমে বাধা হয়ে দাঁড়ালে তাকে হুমকি-ধমকি, মিথ্যা মামলা কিংবা প্রভাব খাটিয়ে থামিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, দলমত নির্বিশেষে – তা বিএনপি হোক বা জামায়াত – তার কাছে মূল বিষয় হচ্ছে টাকা। অর্থ উপার্জনের সুযোগ পেলে তিনি সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে নিজের লাভের পথ তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন।
সরেজমিনে খোজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লার লাকসাম থানার অন্তর্গত আতাকরা গ্রামে ২০০৪ সালে ‘মৎস্য চাষ প্রকল্প’-এর নামে একটি কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকেই এই প্রকল্পকে ঘিরে স্থানীয় কৃষকদের জমি জোরপূর্বক দখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়। খাল ও জলপ্রবাহে বাধা দিয়ে এলাকায় দীর্ঘমেয়াদী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, যা কৃষি ও জনজীবনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
প্রথম দফায় জনতার তীব্র প্রতিবাদের মুখে প্রকল্পটি বন্ধ থাকে। তবে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর আবারো জোরপূর্বক দখলদারী কার্যক্রম শুরু হয় । স্থানীয় আওয়ামীলীগ সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসী শামীমের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখা হয়। অনেক কৃষকের নিজস্ব পুকুর ও মাঠ জোর করে দখল করে নেওয়া হয়।
২০২৫ সালের ৫ আগস্টের বিপ্লবের পর জনগণ ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং প্রজেক্ট ভাংচুরের চেষ্টা করে। তখন এলাকার গন্যমান্যদের অনুরোধে প্রথম বারের মত মাছ বিক্রির সুযোগ দেওয়া হয়, কিন্তু প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বিএনপি সংশ্লিষ্ট কিছু নেতাদের যোগসাজশে পুনরায় জনতাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। টাকার লোভ দেখিয়ে স্থানীয় কিছু নেতাকেও তাদের পক্ষে টেনে নেয় তারা।
এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এলাকাবাসী সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে
এই অবস্থায় উপজেলার ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) হস্তক্ষেপ করেন এবং স্পষ্টভাবে ঘোষণা দেন— “জনতার জমি জনতা না দিলে সেখানে জোরপূর্বক কোনো মৎস্য চাষ চলবে না।” কিন্তু ইউএনও-র ঘোষণার কোনো তোয়াক্কা না করে, দখলদাররা তাদের কাজ অব্যাহত রাখে।
স্থানীয় জনসাধারণ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এই ধরণের ব্যক্তি রাজনৈতিক রঙ পরিবর্তন করে একের পর এক অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে গেলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার এবং রাজনৈতিক আদর্শ সবই প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে।
খোজ নিয়ে দেখা যায়, গত বছরেও খালের বাধের কারণে জলাবদ্ধতা আরও ভয়াবহ রূপ নেয়, তখন এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে খালের বাধ ভেঙে দেয়। এর পর থেকেই হুমকি-ধমকির পরিমাণ বাড়ে। পরবর্তীতে হুমকিতে কাজ না হলে, স্থানীয় বিএনপি নেতা জসিমের মাধ্যমে একটি পরিকল্পিত মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে পুরো গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ আনা হয়, এবং কয়েকজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
এলাকাবাসীর দাবি, এই জুলুম-নির্যাতন, ভুয়া মামলা ও জমি দখলের ঘটনা যেন সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরা হয়, যাতে প্রশাসন ও দেশের সচেতন মহল এ বিষয়ে সঠিক ব্যবস্থা নিতে পারে।
বছরে প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকা আয় হয় একটি তথাকথিত “উন্নয়ন প্রকল্প” থেকে। অথচ সেই আয়ের খুব সামান্য অংশ, মাত্র প্রতি গন্ডা জমিতে ৬০০ টাকা, দেওয়া হয় জমির প্রকৃত মালিকদের! অথচ এসব জমি ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয়েছে লাভজনক প্রকল্প।
ভুক্তভোগী জমির মালিকরা হলেন স্থানীয় আতকরা গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে মহিন উদ্দিন (৩৫) , আব্দুর রাজ্জাক মজুমদারের ছেলে মমিন মিয়া (৪৫), মৃত হিরু মিরার ছেলে জসিম (৪৫) , ফরিদ, ফখরুল জিয়াউল হক, আব্দুল হক, রহিম মিয়া, আমিনুল হক সহ আরো অনেকেই।
কয়েকজন জমির মালিকদের অভিযোগগুলো হলো-
১, তাদের মতামত উপেক্ষা করে জোরপূর্বক প্রকল্প চালানো হচ্ছে।
২, ৯৯% মানুষ চায় না এখানে এই প্রকল্প হোক, তারা নিজেরা মাছ চাষ করতে চায়, স্বাধীনভাবে চলতে চায়।
৩, তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
৪, ক্ষমতাসীন দলের কিছু রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রকল্প কর্মচারীরা জোর করে জনগণের বিরুদ্ধে কাজ করছে।
এছাড়াও প্রকল্প থেকে অর্জিত কোটি কোটি টাকার আয়ের একটি ক্ষুদ্র অংশ কৌশলে জমির মালিকদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়, বাকি অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়া হচ্ছে। এলাকার উন্নয়নের কথা বলে এই অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে— জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে।
এটি শুধুই একটি প্রকল্প নয়, এটি একটি দুর্নীতির বড় উদাহরণ ফলে এলাকাবাসীর দাবি -
প্রকল্প বন্ধ করা, জমির মালিকদের স্বাধীনভাবে মাছ চাষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা সহ প্রকল্প আয়ের পুরো হিসাব জনগণের সামনে প্রকাশ করারও দাবী উঠেছে ।