২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
ছবি: ছবি:
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকা ডুবিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৯ জনে দাঁড়িয়েছে। স্বজনদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী এখনও ৬০ জনের মতো নিখোঁজ রয়েছেন।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দীপঙ্কর রায় সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দীপঙ্কর রায় জানান, এখন পর্যন্ত মোট ৩৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে শিশু ১১ জন, নারী ২১ জন ও পুরুষ সাতজন। নিহতদের মধ্যে বোদা উপজেলার ২৪ জন, দেবীগঞ্জের ১৩ জন, অটোয়ারীর একজন এবং ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার একজন রয়েছেন।
রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) শারদীয় দুর্গোৎসবের মহালয়া উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকা থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বোদা উপজেলার বরদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন। দুপুরের দিকে মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় তাদের ইঞ্জিনচালিত নৌকা ডুবে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোলেমান বলেন, নৌকাটিতে শতাধিক যাত্রী ছিলেন। ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী ওঠায় নৌকাটি মাঝ নদীতে ডুবে যায়। যাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন সাঁতরে তীরে ফিরতে পারলেও অনেকে নিখোঁজ হন। নৌকাডুবির পরপরই স্থানীয়রা উদ্ধারকাজে যোগ দেন এবং পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা এসে স্থানীদের সঙ্গে উদ্ধারকাজ শুরু করেন।
রবিবার ২৫ জনের লাশ উদ্ধারের পর রাতে উদ্ধার অভিযান সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। সোমবার ভোর সাড়ে ৫টায় ফের উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। রাজশাহী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম থেকে আসা ডুবুরি দলও উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে।
পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক শেখ মাহবুব ইসলাম জানান, সকালে করতোয়া এবং পাশের দিনাজপুরের আত্রাই নদীর বিভিন্ন স্থানে মরদেহ ভেসে উঠলে স্থানীয়রা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। পরে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়।
নিহতদের স্বজনরা করতোয়া নদীর পাড়ে প্রিয়জনের লাশের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাদের আহাজারিতে সেখানে এক হৃদয়বিদারক অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরেও লাশ না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বোদা থানার ওসি সুজয় কুমার রায় দুপুরে বলেন, স্রোতের টানে হয়তো অনেক লাশ আশপাশের নদীতে ভেসে গেছে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। দেবীগঞ্জ উপজেলা এবং দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা থেকে সোমবার চারটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ নিখোঁজদের উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে বলেও জানান ওসি।
হিমালয়ের পাদদেশ থেকে আসা করতোয়া নদী উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় এমনিতে খুব খরস্রোতা নয়, গভীরতাও খুব বেশি নয়। কিন্তু গত দুই দিনের টানা বর্ষণের পর উজানের ঢলে নদীতে পানি বেড়েছে অনেকটা।
এখনও মৃত সবার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
মৃতদের মধ্যে রয়েছেন বোদা উপজেলার মাড়েয়া গ্রামের হেমন্তের মেয়ে পলি রানী (১৪), নির্মল চন্দ্রের স্ত্রী শোভা রানী, শালডাঙ্গা খালপাড়ের কার্তিকের স্ত্রী লজ্জা রানী, দেবীগঞ্জের শালডাঙ্গা হাতিডোবা গ্রামের বাবুল চন্দ্র রায়ের ছেলে দিপংকর (৩), পশ্চিম শিকারপুর গ্রামের কালীকান্তর ছেলে অমল চন্দ্র (৩৫), বোদার মাড়েয়া বামনপাড়ার সজিবের আড়াই বছর বয়সী ছেলে পিয়ন্ত, মহানন্দর স্ত্রী খুকি রানী (৩৫), দেবীগঞ্জের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের চণ্ডী প্রসাদের স্ত্রী প্রমিলা রানী (৫৫), দেবীগঞ্জের হাতিডোবার শিকারপুর গ্রামের রবিনের স্ত্রী তারা রানী (২৪), পাঁচপীর বংশীধর পূজারী গ্রামের প্রয়াত ভুড়া মহনের স্ত্রী শোনেকা রানী (৬০), বোদার মাড়েয়া শিকারপুর প্রধান পাড়া গ্রামের শ্রী মণ্টুর স্ত্রী কাঞ্জুনি রানী (৫৫), পাঁচপীর জয়নন্দ্র বজয়া গ্রামের মহানন্দ মাস্টারের মা প্রমীলা (৭০), দেবীগঞ্জ তেলিপাড়া গ্রামের প্রয়াত কলিন্দ্রনাথের স্ত্রী ধনো বালা (৪৭), পাচঁপীর বংশীধর গ্রামের রথেশ চন্দ্রের স্ত্রী সুমিত্রা রানী (৫৭), ময়দানদিঘীর চকপাড়া গ্রামের বিলাস চন্দ্রের স্ত্রী সফলতা রানী (৪০), বোদা উপজেলার মাড়েয়া বাসনহাট গ্রামের রমেশের স্ত্রী শিমলা রানী (৩৫), বোদা উপজেলার বড়শশী কুমারপাড়া গ্রামের হাচান আলী (৫২), একই উপজেলার আলোকপাড়া গ্রামের রমেশের শিশু কন্যা উশোশী, দেবীগঞ্জের হাতিডোবার নারায়নের শিশু কন্যা তনুশী, পাঁচপীর মদনহার গ্রামের রতন চন্দ্রের শিশু কন্যা শ্রেয়শী।
Good news
Good