৩০ এপ্রিল ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
সারাদেশ

কক্সবাজার জেলায় আবার বেড়েছে মৌজা রেইট

২৭ জানুয়ারী, ২০২৫

কাজল কান্তি দে,
কক্সবাজার জেলা (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

ছবি: কক্সবাজার জেলার ম্যাপ

কক্সবাজার জেলায় নতুন বছরে আবার বাড়ানো হয়েছে জমি হস্তান্তরের সরকারি বাজার মূল্য অর্থাৎ মৌজা রেইট। কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া ও মহেশখালীতে ২০২৫-২৬ সনের জন্য মৌজা রেইট নির্ধারণ করা হয়েছে। যা চলতি মাসের ১ তারিখে থেকে কার্যকর হয়।  গত ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শুধুমাত্র রেজিঃকৃত সাফ কবলা দলিলের শ্রেণীভেদে জমির পরিমাণ ও মূল্যের উপর গড়ে ২০২৫-২৬ অর্থাৎ আগামী ২ বৎসরের জন্য সরকারি বাজারমূল্য বা মৌজা রেইট নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজার মূল্য বিধিমালা এস.আর.ও নং-১২০-আইন/২০১০, এস.আর.ও নং-৩৩১/২০১২ এবং এস.আর.ও নং-৩২৫ আইন/২০১৫ মোতাবেক স্থানীয় অধিক্ষেত্রের আওতাভুক্ত বিগত প্রায় ২ বৎসরের মূল্যের উপর গড় করে এ বছর এসব মৌজা রেইট নির্ধারণ করা হয় বলে জানা যায় সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রী অফিস সূত্রে।

কক্সবাজার জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৭-২০১৮ সনের পর এই মৌজা রেইট বৃদ্ধি করা হয়েছে। ওই সময় মৌজা রেইট অতিরিক্ত হলে জমি রেজিস্ট্রেশন কমে আসলে বিগত ২০১৭-২০১৮ সনের মৌজা রেইট বলবৎ রাখে পরের ২০১৯-২০২০ সনে। ওই মৌজা রেইট দিয়ে জমি রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চললেও বাজার ভাউ মূল্যের চেয়েও বেশি হওয়ায় জমি নিবন্ধন কমে আসে। তাই ওই বৎসরও জমি হস্তান্তরের মৌজা রেইট পুনঃ নির্ধারণ না করে বিগত ২০১৯-২০২০ সনের মৌজা রেইট বলবৎ রেখে ২০২১-২২ সনের জন্য বহাল রাখে নিবন্ধন অধিদপ্তর। পরে সাধারণ মানুষের দাবি উপেক্ষা করে ২০২৩-২৪ সনেও মৌজা রেইট নির্ধারণ করা হয়। এরপর আবারও চলতি বৎসর ২০২৫-২৬ সন অর্থাৎ আগামী ২ বৎসরের জন্য মৌজা রেইট নির্ধারণ করে বৃদ্ধি করা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা রেজিস্ট্রার ও বাজারমুল্য নির্ধারণ কমিটির সভাপতি মোঃ মনিরুল ইসলাম  স্বাক্ষরিত মৌজা রেইট সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার ১৯টি মৌজায় ৪২টি শ্রেণী অর্থাৎ নাল, ভিটি, বাড়ি, দোকান, জলা/ডোবা, খিলা, মাঠ, ছনখোলা, পতিত, পুকুর, খাইন, পাউন্ডি, বাগান, লবণমাঠ, পুকুর পাড়, পানবাজার, উমবাগান, পিছু, জঙ্গল, খাল, বালুরচর, কাটি, পাহাড়, টিলা, খামারবাড়ি, জালাবিছানা, ইটখোলা, গোয়ালবাড়ি, বোরো, ছাড়াবাড়ি, রাস্তা পথ, মুদ্দ, নাসি, গোলাবাড়ি, হাটখোলা, বাঁশঝাড়, কুয়া, গোপাট, ইরি, ছাড়া শ্রেণী জমির মধ্যে প্রায় শ্রেণীতে বৃদ্ধি করা হয়েছে। একইভাবে চকরিয়া অফিসের চকরিয়া পৌর এলাকাধীন সহ ৫৯টি মৌজায়, কুতুবদিয়া অফিসের ৮টি মৌজায়, মহেশখালী অফিসের ২৯টি মৌজায়, পেকুয়া অফিসের ১১টি মৌজায় ও টেকনাফ অফিসের ১১টি মৌজায় জমির বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বেশ কয়েকটি মৌজায় তারকা চিহ্নিত দেখিয়ে মৌজা রেইট অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

কক্সবাজার সদর সাব-রেজিস্ট্রী সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার মৌজার নাল জমি প্রতি শতকে ছিল ১১,৯৯,৯৭৫ টাকা। তা এ বছর বৃদ্ধি করে করা হয়েছে ১৩,৭১,৫৮৪। অর্থাৎ প্রতি শতকে বৃদ্ধি করা হয়েছে ১,৭১,৬০৯। এভাবে দোকান শ্রেণীর মূল্য ছিল প্রতি শতকে ৫৫,৩২,৮১৪ টাকা। তা বেড়ে হয়েছে ৫৭,২০,৯৫০ টাকা। অর্থাৎ আগের চেয়ে প্রতি শতকে বেড়েছে ১,৮৮,১৩৬ টাকা। এভাবে সদর সাব-রেজিস্ট্রী অফিসের অধীনে কক্সবাজার, ঝিলংজা পৌরসভা, ঝিলংজা ইউনিয়ন, ঈদগাঁও, খরুলিয়া, পি.এম.খালী, চৌফলদন্ডী, খুরুশকুল, পোকখালী, ভারুয়াখালী, তেতৈয়া, ইছাখালী, মাছুয়াখালী, গোমাতলী, বোয়ালখালী, ভোমরিয়াঘোনা, নাপিতখালী, তোতকখালী, গজালিয়া মৌজার প্রত্যেকটি শ্রেণীতে বৃদ্ধি করা হয়েছে।

রামু সাব-রেজিস্ট্রী অফিস সূত্রে জানা গেছে, রামু উপজেলার ৩৫টি শ্রেণীর জমির গড় মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা আগের সরকারি মূল্যের চেয়ে বৃদ্ধি। রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ৩২টি মৌজার উপর প্রত্যেক শ্রেণীর বাজার মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।

উখিয়া সাব-রেজিস্ট্রী অফিস সূত্রে জানা গেছে, উখিয়ার ১২টি মৌজায় ২১টি শ্রেণীর জমির গড় মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা ২০২৪ ও ২০২৫ ইং সনের জমির শ্রেণী ভিত্তিক মৌজা ওয়ারি প্রতি শতাংশের বাজার মূল্যের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে উখিয়া মৌজার বাগান, জঙ্গল, বিছন, মুদ্দত, পথ ও খামারবাড়ি অপরিবর্তিত রেখে এবং উয়ালাপালং মৌজার খাই, বিছন, মুদ্দত, পথ, ছনখোলা, বাঁশঝাড় ও খামার বাড়ি অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। একইভাবে রাজাপালং, রুমখাঁপালং, রত্নাপালং, হলদিয়াপালং, মরিচ্যাপালং, ইনানী, জালিয়াপালং, পাগলির বিল, উখিয়ার ঘাট ও পালংখালী মৌজার কিছু কিছু গড় মূল্য অপরিবর্তিত রেখে মৌজা রেইট করা হয়েছে।

কক্সবাজার সদর সাব-রেজিস্ট্রী অফিসে জমি নিবন্ধন করতে আসা মোহাম্মদ ছিদ্দিক আহমদ নামে এক ব্যক্তি জানান, কক্সবাজার সদর সাব-রেজিস্ট্রী অফিসের গড় ভিত্তিক মৌজা রেইটের কারণে অনেক ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্থ। আমি ঝিলংজা মৌজার এস.এম.পাড়ায় ১ গন্ডা দোকান শ্রেণীর জমি ক্রয় করেছি ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে। কিন্তু মৌজা ভিত্তিক গড় মূল্যের কারণে প্রতি শতকে ১,০৯,৫৭,০০০/- টাকা করে প্রতি গন্ডায় আমাকে দলিলে বাধ্যতামূলকভাবে লিখতে হয়েছে ২,১৯,১৪,০০০/- টাকা। এই মূল্যের উপর সরকারি রেজিস্ট্রী খরচ দিতে হয়েছে ২৫,২১,০০০/- টাকা। চিন্তা করেন দেখেন, জমির ক্রয়মূল্যের চেয়ে রেজিস্ট্রী খরচ বেশি। কিভাবে সাধারণ মানুষ জমি ক্রয় করবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এসব বিষয় ভেবে দেখা উচিৎ।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয় অনেকে জানিয়েছেন,কক্সবাজার জেলাবাসীকে সবচেয়ে বেশি মৌজা রেইটের ভার বহন করতে হয়েছে বিগত বছরগুলোতেও। বাজার মূল্যের সাথে সংশ্লিষ্ট রেজিষ্ট্রী অফিস কর্তৃক নির্ধারিত মৌজা রেইটের কোন সামঞ্জস্য নাই। বর্তমানে দলিলে লিখিত জমির বাজার মূল্য আর ওই জমির রেজিস্ট্রেশন খরচ প্রায় একই। তার উপর ৩৩টি মৌজার উপর জেলা প্রশাসক কার্যালয় হতে অনুমতি সংগ্রহ মরার উপর খাঁড়ার ঘা।

জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আবুল হোছাইন জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে বাজার মূল্যের চেয়ে সরকারি মৌজা রেইট অনেকটা বৃদ্ধি। এরমধ্যে এই বৎসরও মৌজা ভিত্তিক গড় মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। সম্পত্তির সর্বনিম্ন বাজার মূল্য নির্ধারণ বিধিমালা ২০১০ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের জন্য জমির সর্বনিম্ন বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। হস্তান্তর দলিল রেজিস্ট্রেশনের সময় দলিলে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে সরকারি এই রেইটে জমির মূল্য লিপিবদ্ধ করতে হবে। যার কারণে সাধারণ মানুষকে মৌজা রেইটের উপর রেজিস্ট্রেশন খরচ দিতে হয়।

তিনি আরও জানান, বাজার মূল্যের চেয়ে মৌজা রেইট বৃদ্ধি হওয়ায় জমি রেজিষ্ট্রেশন করতে কক্সবাজার জেলার সাধারণ মানুষ কিছুটা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বিগত ২০২১-২০২২ ইং সনের মৌজা রেইট প্রকৃত বাজার মূল্য থেকে অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে আমরা জেলা দলিল লেখক সমিতির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দফতরে সুষ্ঠু পরিকল্পিত ও স্বচ্ছভাবে জনগণের সহায়ক বান্ধব জমির মৌজা রেইট প্রণয়ন করার আবেদন করেছিলাম। এবারেও আমরা কক্সবাজার জেলা দলিল লেখক সমিতির পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে জমির মৌজা রেইট বৃদ্ধি না করার আবেদন করা হয়। সবকিছু বিবেচনা করে ২০২৫-২৬ ইং সনের জন্য অর্থাৎ আগামী ২ বৎসরের জন্য জমির মৌজা রেইট বৃদ্ধি করে নতুনভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে।

Related Article
comment
মোঃ মনির হোসেন বকাউল
29-Sep-23 | 10:09

Good news

মোঃ মনির হোসেন বকাউল
10-Dec-23 | 04:12

Good