১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ছবি: সাইফুর রহমান বাদল
ইসলামে অনৈক্য ও বিভেদের অবকাশ নেই। ইসলামে ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে তাওহিদ। তাওহিদে বিশ্বাসীদের একতাবদ্ধ থাকা, ঐক্য সংহতি সৌহার্দ্য সম্প্রীতি রক্ষা করা অপরিহার্য। এবং এমন সব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা, যা উম্মাহর ঐক্য নষ্ট করে এবং সম্প্রীতি বিনষ্ট করে। ইসলামের দৃষ্টিতে পরস্পর কলহ-বিবাদে লিপ্ত হওয়া হারাম ও কবিরা গুনাহ।
শান্তির ধর্ম ইসলামের বিশ্বব্যাপী প্রসার ও বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করা ও অপশক্তিকে প্রতিহত করার জন্য তাওহিদ তথা একত্ববাদে বিশ্বাসীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ইমানের দাবি।
এ ছাড়া কোনো জাতির অস্তিত্ব ও স্বকীয়তা রক্ষার জন্য একতার বিকল্প নেই। কোনো সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ জাতিকে সহজেই কেউ নিশ্চিহ্ন ও পরাজিত করতে পারে না। একতা, সংঘবদ্ধতা, ত্যাগ ও সংগ্রাম-সাধনার মাধ্যমেই হতে পারে কোনো জাতির বিজয়, অর্জন করতে পারে সম্মান, সাফল্য ও উন্নতি।
আমরা ঐক্য ও সংহতির কথা বলছি আসলেই কি ঐক্য সম্ভব বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। যখন মঞ্চে উঠে বক্তব্য দিই কুরআনের আয়াত পড়ি আর বলি ঐক্য করা ফরজ আল্লাহ তায়ালা ঐক্য করতে বলেছেন কিন্তু এর ফলাফল জিরো পাই।দলিয় প্রভাব বলেন আর ব্যক্তি প্রভাব বলেন সেটা শুধু বক্তব্যের মাঝেই সীমাবদ্ধ হয়। আর ঝামেলাই পড়ে আমাদের মত সাধারণ যারা আল্লাহ ও রাসুলকে বিশ্বাস করে। কোন্ ইসলামি দলে ভোট দেব এরাও বলে ইসলামি দলে ছিল্ মারো ওরাও বলেইসলামি দলে ছিল্ মরো কোনটায় দেবো পড়ে যায় বিপাকে।
সমাজের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছে তারা ইসলামের কথা শুনে ফিরে আসতে চাই কিন্তু অনৈক্যের কারণে তারা সেখানেই থেকে যায়। আর একারণেই তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষেই তারা ভোটটা দেই আর এটাই হলো সমাজের বাস্তব চিত্র।
এবার আসেন আপনারা সভা / সমাবেশ করেন সেখানে হাজার হাজার লোকের উপস্থিতি দেখে মনে করেন আপনাদের বিজয় হয়ে গিয়েছে কিন্তু ভোট শেষে দেখা যায় আপনারা ৫% ও ৭% ভোট পেয়েছেন কিন্তু ঐক্য হলে কি হতো ৫+৭= ১২% ভোট পেতেন আর ১৫% সাধারণ মানুষের ভোট পেতেন।
তারপর আরও কিছু সংখ্যালঘু আছে তাদের ভোটও আপনাদের আদর্শের কারণে কিছু পেতেন আর সেই কারণে সর্বশেষ ফলাফল দেখা যেতো আপনারা প্রায় জয়ের প্রান্তে পৌঁছে গেছেন। আর একটু বিশ্লেষণ করি সেটা হলো শতকরা হিসেবে আপনার বিপক্ষ দল বেশি পেয়েছে কিন্তু আসন সংখ্যায় সে একা সংখ্যা গরিষ্ঠ অর্জন করতে পারছেনা।
তখন ইসলাম পন্থীদের চাহিদা বেড়ে যাবে এবং সংসদে একটা উল্লেখযোগ্য স্থান পাবেন। এককভাবে কেউ কোন আইন ইচ্ছামত পাশ করতে পারবেনা আর কেউ ফ্যাসিবাদ কায়েমও করতে পারবেনা। সর্বস্তরে ইসলাম পন্থিদের একটা গ্রহণ যোগ্যতা থাকবে। রাষ্ট্রে কেউ সহজে খারাপ কাজ, অরাজকতা, দূর্নীতি করতে পারবেনা এমনকি সহযোগিতা করতেও পারবেনা।
কিন্তু ইসলামি দলের ঐক্যের প্রতিবন্ধকতা কোথায় ও কি কি। ১. দলীয় প্রভাব ২. জনসভায় লোক দেখে মনে করছেন আপনারাই বিজয়ী ঐক্যের প্রয়োজন নেই ৩. ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে কথা বলা ৪. মানুষের সামনে ঐক্যের জন্য কৌশলে কিছু ভাষা ব্যবহার করা যেটা ঐক্যের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। ৫. ছাড় দেওয়ার কথা বললেও বাস্তবতাই ছাড় দেওয়া খুবই কঠিন।
যে সময় বা যুগে ইসলামি হুকুমমত কায়েম হয়েছে সেখানেই মুসলিমরা ঐক্যের প্লাটফর্মে গিয়েছে আর যতদিন ঐক্যের কাতারে যেতে পারিনি ততদিন তাদের বিজয়ও হয়নি।
বিগত দিনে ইসলাম পন্থিরা আলাদা ভোটে এসে কত ভোট পেয়েছেন এদেশের মানুষ জানে তাই ঐক্যের বিকল্প নেই। শর্ত জুড়ে দিয়ে কখনও ঐক্য সম্ভব নাই। একটাই শর্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যে, যে দলই করুক তারা তাদের জায়গা থেকে দল পরিচালনা করবেন কিন্তু ভোটের মাঠে সবাই একতাবদ্ধ হতে হবে আর দলীয়ভাবে কাজকর্ম আলাদাভাবে চলবে তবেই এদেশে ইসলাম পন্থিদের বিজয় সম্ভব।
তবে এবারের নির্বাচনে যদি ইসলাম পন্থিরা এক হতে পারে তবে ইসলামি দলগুলোর জন্য আলাদা একটা সুযোগ থাকবে। সাহাবা রাঃ গণ থেকে শুরু করে সালাউদ্দিন আইয়ুবী পর্যন্ত যত বিজয় মুসলিমরা হয়েছে তারা কখনও শর্ত লাগায়নি তাদের মধ্যে একটাই অনুভূতি ছিল আমরা মুসলিম আমরা ঐক্য না হলে অন্য জাতি আমাদের উপর বিজয়ী হবে।
আর এটা প্রতিরোধ করার অন্যতম মাধ্যম হলো মুসলিম জাতির ঐক্য। আর যখনই অনৈক্য হয়েছে তখনই পরাজিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার তাওফিক দান করুন আমিন।
লেখক – কলামিস্ট ও সাংবাদিক।
Good news
Good