৩০ এপ্রিল ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
ধর্ম ও জীবন

ইসলামের দৃষ্টিতে বিজয় দিবস

১৫ ডিসেম্বর, ২০২২

সাইফুর রহমান বাদল,
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

ছবি: মহান বিজয় দিবস। (সংগৃহীত ছবি)

 

পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশ বা জাতি কোন কোন ভাবে বিজয় অর্জন করেছে আর সেই দিনে তারা চেষ্টা করে দিনটা পাালন করার জন্য।   সেদিন  তারা তাদের ধর্ম ও  সংস্কৃতি অনুযায়ী উদযাপন করে। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বরে  আমাদের দেশ বিজয় লাভ করেছিল।  এই বিজয়ের জন্য আমরা ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করেছি। এরপর অপরিমিত রক্ত, অসংখ্য  লাশ, হাজার হাজার মানুষের পঙ্গুত্ব বরণ, শত শত মা-বোনের ইজ্জত আর লক্ষ লক্ষ টাকার দেশীয় সম্পদের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই বিজয়। আমরা পেয়েছি আলাদা সংবিধান, লাল-সবুজের পতাকা, বাংলাদেশ নামের সীমানা ও মানচিত্র।
এর ফলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে বিজয় দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করে আসছে। রাষ্ট্র বা শাসন সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কি বলেছেন আমরা জেনে নিই।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(হে নবী) আপনি বলুন, হে রাজাধিরাজ (মহান আল্লাহ), আপনি যাকে ইচ্ছা তাকে সাম্রাজ্য দান করেন, আবার যার কাছ থেকে ইচ্ছা তা কেড়েও নেন, যাকে ইচ্ছা আপনি সম্মানিত করেন, আবার যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন; সবরকমের কল্যাণ তো আপনার হাতেই নিবদ্ধ; নিশ্চয়ই আপনি সবকিছুর ওপর একক ক্ষমতাবান।’ {সূরা আলে ইমরান, আয়াত ২৬]
এই আয়াত থেকে আমরা অনেকটাই স্পষ্ট বুঝতে পারলাম রাজ্য একেক সময় একেক জনকে দান করেন সবসময় সবার হাতে ক্ষমতা থাকেনা। যেমন বৃটিশ শাসনের অবসান হয়ে পাকিস্তান আর ভারত ভাগ হলো তারপর আবার হলো আমাদের সোনার বাংলাদেশ। কিন্তু আমরা বিজয়ী হলে আমাদের করনীয় কি আর কুরআন এবং হাদিসে এব্যাপারে কি নির্দেশনা আছে। 

 মানব জীবনে এমন কোনো দিক নেই, যার বর্ণনা ইসলাম বা কুরআন-সুন্নায় নেই। কুরআনে ২টি সুরায়  বিজয় সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে একটি সূরা ফাতাহ (বিজয়), আরেকটি সূরা আন-নাসর (মুক্তি ও সাহায্য)। 

সূরা নাসর-এ আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং বিজয় আসবে এবং আপনি মানুষকে দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাকারী।’

এসূরায় বিজয় দিবসে মুসলমানদের পালনীয় ৪টি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছে। 

ক। আল্লাহর সাহায্য যখন আসবে দলে দলে তখন  লোক ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করবে। 

খ। বিজয়ের পর আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করা।

গ।  আল্লাহর প্রসংশা আদায় করা।

ঘ। আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া।

বিজয় দিবসে এই ৪টিই হতে পারে আমাদের কর্মসূচি। বিজয় যখন আসবে দলে দলে মানুষ অনুগত হবে  চারিদিকে বিজয়ের উল্লাসে সবাই মুখরিত হবে।  আল্লাহ তায়ালার এই ৪টি নির্দেশনার মধ্যে অনেক তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। একারণেই আল্লাহ নির্দেশ দিলেন, তোমরা বিজয় লাভ করেছ, এখন তোমাদের কাজ হচ্ছে, এ বিজয়ের জন্য আল্লাহর দরবারে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে কিংবা তাসবিহ পাঠ করে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেই হবে না।  জিহাদ বা যুদ্ধ চলাকালীন সময় যদি ভুলত্রুটি হয়ে থাকে, সেজন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা চাওয়া।

মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হলো, তার মাতৃভূমিকে ভালোবাসা। এটাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ। আল্লাহর রাসুল যখন মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে ইয়াসরিবের (মদিনার পূর্বনাম) দিকে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর দুচোখ বেয়ে অশ্রু বয়ে যাচ্ছিল। তিনি মনে মনে বলেছিলেন, হে মক্কা! আমি তোমাকে ভালোবাসি। কাফেররা নির্যাতন করে যদি আমাকে বের করে না দিত, কখনো আমি তোমাকে ছেড়ে যেতাম না। [ইবনে কাসির ৩/৪০৪]। 

 রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাকেও অনেক ভালোবাসতেন। কোনো সফর থেকে ফেরার সময় মদিনার সীমান্তে অবস্থিত উহুদ পাহাড় চোখে পড়লে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম-এর চেহারায় আনন্দের দৃশ্য ফুটে উঠত। তখন তিনি বলতেন, এই উহুদ পাহাড় আমাদেরকে  ভালোবাসে, আমরাও উহুদ পাহাড়কে ভালোবাসি। [বুখারি শরিফ  মুসলিম শরিফ]

মক্কা নগরী ছেড়ে আসার পর থেকে প্রিয় রাসুল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ১০ বছর পর হাজার হাজার সাহাবায়ে কেরামের বিশাল কাফেলা নিয়ে যখন তিনি বিজয়ী বেশে সেই মক্কায় প্রবেশ করলেন, তখন তিনি যা করেছিলেন তা নিম্নে বর্ণিত হলো। 

 আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় প্রবেশ করেন তখন  একটি উষ্ট্রীর উপর আরোহিত ছিলেন, তাঁর চেহারা ছিল নিম্নগামী (অর্থাৎ আল্লাহর দরবারে বিনয়ের সঙ্গে তিনি মক্কায় প্রবেশ করেন)। প্রথম তিনি উম্মে  হানির ঘরে প্রবেশ করেন। সেখানে আট রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন। এই নামাজকে বলা হয় বিজয়ের নামাজ। এরপর তিনি হারাম শরিফে এসে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, হে মক্কার কাফের সম্প্রদায়! তের বছর ধরে আমার ওপর, আমার পরিবারের ওপর, আমার সাহাবাদের ওপর নির্যাতনের যে স্টিম রোলার চালিয়েছ, এর প্রতিবদলায় আজ তোমাদের কি মনে হয়, তোমাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণের দিন আজ আমার। কিন্তু তিনি কি করলেন সবাইকে ক্ষমা করে দিলেন। 
বিজয়ের দিনে বিশেষ আমাদের করণীয় হলো  বেশি বেশি সিজদাহ্ করা, আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করা, নিজেদের ভুল ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাওয়া। যারা শহীদ হয়েছে তাদের মাগফিরাত কামনা করা আর যারা আহত হয়েছে তাদের জন্য দোয়া করা এবং দেশ ও জাতির অগ্রগতি, কল্যাণের জন্য মুনাজাত করা। 

 


 

Related Article
comment
Poran Hasan
25-Mar-23 | 10:03

ধন্যবাদ 🌸💚

মোঃ মনির হোসেন বকাউল
28-Sep-23 | 10:09

Good news