১৪ মে, ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত
ঘূর্ণিঝড় মোখা আতঙ্কে পায়রা বন্দরের আমদানি ও পণ্য খালাসের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্দরের চ্যানেল থেকে তিন বিদেশি জাহাজসহ সব লাইটারেজ জাহাজ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সরিয়ে নেয়া হচ্ছে মাদার ভ্যাসেলসহ বিদেশি লাইটারেজ জাহাজ।
শনিবার (১৩ মে) নতুন খনন করা চ্যানেল সুরক্ষিত রাখতে বিকেলেই জাহাজগুলো সরিয়ে নেয়া হয়। এমভি আর্ক রাফায়েল, এমভি ওয়াইএম এডভান্স ও এমভি প্লাজিকা নামের তিন মাদার ভ্যাসেলসহ সব লাইটারেজ জাহাজগুলো ইনার এ্যানক্রোজ থেকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে।
তিনটি মাদার ভ্যাসেল পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা নিয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে পায়রা বন্দরে এসেছিল। এর মধ্যে এমভি আর্ক রাফায়েল কয়লা খালাস শেষে বিকেলে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নতুন খনন করা রামনাবাদ চ্যানেলকে সুরক্ষিত রাখতে জাহাজগুলো সরিয়ে রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে চ্যানেলের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ে, সেটিও নজরদারি করছে বেলজিয়ামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানডিনুল।পায়রা বন্দরের ট্রাফিক বিভাগের উপপরিচালক আজিজুর রহমান জানান, পায়রা বন্দরে ৭৫ কিলোমিটার চ্যানেলকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সব জাহাজ সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে ঝুঁকি এড়াতে লাইটারেজ জাহাজগুলোও ইনার থেকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে পায়রা বন্দর এখন ঝুঁকিমুক্ত।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের সার্বক্ষণিক তথ্য সংগ্রহ এবং করণীয় নির্ধারণের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। পাশাপাশি গঠন করা হয়েছে ৯ সদস্য বিশিষ্ট ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম। এছাড়া তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অফিস আদেশ জারির মাধ্যমে টিম তিনটি গঠন করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
অতি প্রবল রূপ ধারণ করে ঘূর্ণিঝড় মোখা ধেয়ে আসছে। শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আতঙ্কে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৮৪২ জন আশ্রয় নিয়েছেন। তবে পটুয়াখালী পায়রা পাড়ের মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে রাজি নন।
পায়রা পাড় এলাকার আসমা বেগম, রুশুসহ অনেকে বলেন, ‘মরলেও ঘর ছেড়ে যামু না, সব হারাই থাইকা কি করুম, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ সব চইলা গেলে আমরা ফিরা আইয়া খামু কি?’
আবার উপকূলীয় এলাকার কেউ কেউ ইতিমধ্যে সবকিছু গুছিয়ে রোববার (১৪ মে) দুপুরের মধ্যে সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকে আবার সাইক্লোন সেল্টার দূরে থাকায় পড়েছেন বিপাকে। ঝড়ের খবরে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার প্রায় ১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। সেই সঙ্গে নদীগর্ভে চলে গেছে হাজারো মানুষের সাজানো স্বপ্ন। ইতোমধ্য অনেকের চিরতরে মুছে গেছে অনেক ঘড়বাড়ি। হারিয়ে গেছে নানা ধরনের স্মৃতি।
শনিবার (১৩ মে) সকাল থেকে পায়রা পাড়ে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতনসহ সন্ধ্যার মধ্যে সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নিতে বলছে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) সদস্যরা। রাতদিন মাইকিংসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষজন ও গবাদিপশু নিরাপদ স্থানে নিয়ে আনার কাজ করে যাচ্ছেন।
এদিকে দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতির কথা জানালেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন। পটুয়াখালীতে ১৩২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আছে। এর মধ্যে ১৮ বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
এর আগে ঘূর্ণিঝড় মোখায় সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় শনিবার (১৩ মে) বিকেলে সার্কিট হাউসের মধুমতি মাল্টিপারপাস হলে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসানের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জানানো হয়, বরিশাল বিভাগের মধ্যে বরিশাল জেলায় ৫৪১টি, পটুয়াখালীতে ৭০৩, ভোলায় ৭৪৬, বরগুনায় ৬৪২, পিরোজপুরে ৪০৭ ও ঝালকাঠিতে ৬২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে বিভাগে ৩৫টি মুজিব কেল্লাও। এসব কেন্দ্রে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬০৬ জন মানুষ ও ১২ লাখ ৪১ হাজার ৪৯০ গবাদিপশুর আশ্রয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
Good news
Good