২৭ নভেম্বর, ২০২৪
ছবি: আবুল কাশেম উচ্চ বিদ্যালয়
গত ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছু।
বিশেষ করে বিভিন্ন স্থাপনার নাম ফলক বা দপ্তরের প্রয়োজনীয় কাগজাদিতে শেখ হাসিনা ও শেখ মজিবর রহমানের ছবি বা লোগোর একটি পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
কিছু প্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনার নাম সম্বলিত লোগোর ব্যবহার এখনো বিদ্যমান।
গত ২৪ নভেম্বর ২০২৪ রবিবার বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোপালনগর ইউনিয়ন আবুল কাশেম উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা রুটিন প্রকাশ করা হয়।
প্রত্যেক শ্রেণীর রুটিনের উপরে শেখ হাসিনার নাম সম্বলিত একটি লোগো ব্যবহার করা হয়। লোগোতে লেখা রয়েছে "শিক্ষা নিয়ে গড়বো দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ।
বিশেষ করে নবম ও ৮ম শ্রেনীর পরীক্ষার রুটিনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। রুটিনে প্রধান শিক্ষকের সীল মোহর ও শ্রেণী স্ব স্ব শিক্ষকদের স্বাক্ষরও রয়েছে।
জানা যায়, গোপালনগর ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সহ সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুল ইসলাম আশা ওই প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার পদে চাকুরিরত। সে নিজেকে ধুনট উপজেলা সহকারি গ্রন্থাগারিক সমিতির সভাপতিও দাবি করেন।
গ্রন্থাগারিক আসাদুল ইসলাম আশা প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগসাজশে পরীক্ষার রুটিনে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ লেখা সম্বলিত লোগো ব্যবহার করতে পারে। তবে অনেকেই মনে করেন এটি মূলত অন্তবর্তীকালিন সরকারকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য বা হেও প্রতিপন্ন করার জন্যেই ইচ্ছাকৃত ভাবে করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, আসাদুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগার পদে থেকেও শ্রেনীকক্ষে নিয়মিত গনিত, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান পাঠদান সহ প্রতিষ্ঠান ও নিজ বাড়িতে উক্ত বিষয়গুলো প্রাইভেট পড়ানোর নামে ছাত্রদের থেকে জোরপূর্বক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমানের যোগসাজশে বিভিন্ন কৌশলে শিক্ষার্থীদের থেকে অর্থ আত্মসাতের মত গুরুতর অমানবিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে,# কিছুদিন আগে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কতিপয় শিক্ষক ও বিগত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যগনের বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্য, বিপুল পরিমানে পরিবেশ বান্ধব গাছ বিক্রি সহ বিদ্যালয়ের ফান্ড লোপাট সহ বিভিন্ন দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রাক্তন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা সোচ্চার হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট মৌখিক অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপই নেওয়া হইনি বলে জানা গেছে।
সুশীল সমাজ বলছে, গত আগস্টে স্বেরাচারী শেখ হাসিনা ছাত্রজনতার উপর যে হত্যাকান্ড সংঘটিত করেছে সেটা জাতি কোন দিন ভুলতে পারবে না। তারা বলেন ২৪"এর শহীদদের রক্ত শুকাতে না শুকাতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পরীক্ষার রুটিনে খুনি হাসিনার বাংলাদেশ সম্বলিত লোগো থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছে এটা পতিত স্বেরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের দোসরদের সুদূর প্রসারী ষড়যন্ত্রই অংশ।
গোপালনগর ইউনিয়ন আবুল কাশেম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, মূলত কম্পিউটারে গত বছরের যে নমুনা ছিল, ভুলক্রমে ওই নমুনার উপরেই চলতি বছরের বার্ষিক পরীক্ষার রুটিনটি করা হয়েছে।
রুটিনে কিন্তু আমার সীল মোহর রয়েছে স্বাক্ষর নাই। তার মানে আমি রুটিনটি দেখার আগেই শ্রেনী শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরন করেছে। আমার প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার বা কেহ চাপ প্রয়োগ করে আমাকে দিয়ে এটা করিয়ে নিয়েছে এমন তথ্য সম্পুর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একরামুল হক জানান, আমি রুটিনটি দেখেছি। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খৃষ্টফার হিমেল রিছিল জানান, বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি, ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।