১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
ছবি:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রেজিস্ট্রার ভবনে হয়রানি বন্ধের দাবিতে আবারও অবস্থান কর্মসূচিতে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসনাত আবদুল্লাহ। এবার তিনি সব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
আজ রোববার সকাল সাড়ে দশটা থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তার দাবিগুলো রেজিস্ট্রার ভবনের প্রধান ফটকে সাঁটিয়ে দেন।
হাসনাত আবদুল্লাহর দাবি গুলো হলো, শিক্ষার্থীদের হয়রানি নিরসন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে শিক্ষক-ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অভিযোগ সেল গঠন, প্রশাসনিক সব কার্যক্রম অনতিবিলম্বে ডিজিটালাইজ করা, নিরাপত্তা ও হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে অফিসসমূহের অভ্যন্তরে প্রতিটি রুমে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন, প্রশাসনিক ভবনে অফিসসমূহের প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করা।
এ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এবং প্রশাসনিক ভবনের ক্যান্টিনের সংস্কার, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক সাচিবিক-বিদ্যা, পেশাদারিত্ব, মানসিক ও আচরণগত প্রশিক্ষণ আইন করে বাধ্যতমূলক করা, অফিস চলাকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কাজেই লিপ্ত না থাকা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকালীন প্রচার পরিবেশবান্ধব করা।
এর আগে তিনি গত ৩০ আগস্ট এসব দাবি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দেন। এ সময় তিনি দাবি পূরণের জন্য দশ কর্মদিবসের আল্টিমেটাম দেন।
সেই আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ফের অবস্থান কর্মসূচিতে বসেন এই শিক্ষার্থী।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘বেঁধে দেওয়া দশ কর্মদিবস শেষ হলেও রেজিস্ট্রার ভবনের সমস্যা সমাধানে ভিসি স্যার কোনো পদক্ষেপ নেননি। আমাদের আট দফা দাবির একটি দাবিও পূরণ করেননি কিংবা দাবি পূরণে কোনো ধরনের দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেননি। রেজিস্ট্রার ভবনের অবস্থা যা ছিল, ঠিক তা-ই রয়েছে। দাবি পূরণ না হলে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’
অভিযোগ করে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আজকে রেজিস্ট্রার ভবনে আমাকে বাধা দেওয়া হয়েছে। সকাল ৯টায় অফিস টাইম থাকলেও ৯টা ৪০ মিনিটেও এ ভবনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা অফিসে অনুপস্থিত। সেই ছবি তুলতে গেলে বাধার সম্মুখীন হই।’
এদিকে আল্টিমেটাম চলাকালীন হাসনাত আবদুল্লাহ একটি প্রশাসনিক ভবনের সেবা সম্পর্কে অনলাইনে একটি জরিপ পরিচালনা করেন। সেই জরিপে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এবং বর্তমান ৭০০ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন।
সার্ভের ফল অনুযায়ী, ৮৯.২ শতাংশ শিক্ষার্থীর প্রশাসনিক ভবনের সেবার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ ও অপ্রত্যাশিত। ৬৮.৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতামত হলো প্রশাসনিক ভবনে ঘুষ লেনদেন ও স্বজনপ্রীতির চর্চা হয়। সর্বোচ্চ সংখ্যক হয়রানি হয় ভর্তি শাখায়, বৃত্তি শাখায়, মার্কশিট শাখায় ও ট্রান্সক্রিপ্ট শাখায় (ক্রমানুযায়ী)। ৪০০ এর অধিক শিক্ষার্থীর শুনতে হয়েছে, ‘লাঞ্চের পরে আসুন’, ‘এটা এই রুমের কাজ না’, ‘কাগজ এখনও হল থেকে আসেনি’।
৮৬.১ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, প্রশাসনিক ভবনের বর্তমান কাজ ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত।
জরিপের ফল আরও বলছে, ৪০০ এর বেশি শিক্ষার্থীর অভিযোগ- সেবা দাতাদের কাছে সেবা গ্রহীতারা নিরুপায় এবং সেবা গ্রহীতাদের সময়ের কোনো মূল্য নেই। প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবনের সেবার মান অপরিবর্তিত থাকার কারণ হিসেবে বলেছেন, কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বচ্ছতার অভাব। আর ৭২.৮ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে সেবার মান উন্নয়নের জন্য প্রত্যক্ষ আন্দোলনের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা উচিত।