৩০ মে, ২০২৩
ছবি: ডাঃজাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্মরণসভা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘আমরা যারা জীবিত আছি, আমাদের বহু জীবিত মানুষের চেয়ে অনেক তীব্র ও উজ্জ্বলভাবে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বেঁচে আছেন। তিনি এখনও আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন।’
সোমবার (২৯মে) গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) অনুষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্মরণসভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমার জীবনের আইডল তিনি সারাজীবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। যিনি সারা জীবন অসংখ্য প্রতিষ্ঠান তৈরি করে গেছেন। তার সব চেয়ে বড় চেতনা ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে কোন বৈষম্য থাকবে না। বহু অপবাদ সহ্য করেছেন, বহু বর্বরতা সহ্য করেছেন। ইয়াং রাজনীতিবিদরাও তাকে আইডল মানতেন। তার ছিলো অগাধ আত্মসম্মান যিনি নিজ আদর্শ বজায় রাখতে জীবনের শেষ চিকিৎসাও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়েছেন।’
এসময় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি ফরিদা আখতার বলেন, ‘অনেকে বলেন জাফর ভাই দেশপ্রেমিক ছিলেন। আমি বলবো উনি দেশের মানুষ প্রেমিক ছিলেন। যার যার অবস্থান থেকে আমাদের প্রত্যেকের একেকজন জাফরুল্লাহ হতে হবে। আজ আমি অঙ্গীকার করছি, জাফর ভাইয়ের কাছ থেকে যতটা শিখেছি, যতটা সান্নিধ্যে থেকেছি স্বাস্থ্য খাতে কাজের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করে যাবো।'
জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে অতুলনীয়, এক এবং অনন্য দাবি করে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টের সভাপতি এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘তার মৃত্যু দেশ ও জাতীর জন্য অপূরনীয় ক্ষতি। তিনি ছিলেন বিপ্লবী, সমাজ বিপ্লবের যে চেতনা সেটাই তার মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এবং পরবর্তী সময়ের যুদ্ধে অবলোকন করা যায়। তিনি চাইলেই অনায়েসে দেশের সেরা ধনীদের এখন হতেই পারতেন, কিন্তু তিনি ব্যাক্তি মালিকানায় বিশ্বাস করেন না। যার প্রমান দেখা যায়, তার গড়া কোনো প্রতিষ্ঠানই তার পরিবার বা নিজস্ব মালিকানার অন্তর্ভুক্ত নয়।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড মো আবুল হোসেন বলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন সাদামাটা একজন মানুষ। আমাদের জন্য তিনি একজন দৃষ্টান্ত, তাকে ধারণ করতে পারাটাই আমাদের এবং শিক্ষার্থীদের সবার জন্য সফলতার কারণ হবে।’
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সকলে এক মিনিট দাড়িয়ে নিরবতা পালন করেন। তারপর ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্মরণে প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এসময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, তৃতীয় লিঙ্গের কর্মচারীরা এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।
উল্লেখ্য, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে ফিলিপাইনের র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান। ১৯৯২ সালে তাকে সুইডেন থেকে বিকল্প নোবেল হিসেবে পরিচিত রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে দেওয়া হয় ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক হেলথ হিরো অ্যাওয়ার্ড। ২০২১ সালে আহমদ শরীফ স্মারক পুরস্কার পান।