০২ নভেম্বর, ২০২৪
ছবি: সংগৃহীত
হবিগঞ্জের মাধবপুরে অনিন্দ্য রায় নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি আত্মসাতসহ বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে।বিষয়টি বর্তমানে উপজেলায় টক অফ দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।
অভিযুক্ত ওই যুবক অনিন্দ্য দেবনাথ(৩০) উপজেলার জগদীশপুর ইউপির জগদীশপুর গ্রামের দিলীপ কুমার রায়ের পুত্র।
জানা যায়,ওই যুবক কাউকে ব্যবসার পার্টনার করার আশ্বাস আবার কাউকে মূলধনের মাসিক লাভ দেবে বলে চলচাতুরী ও প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ লিখিত স্ট্যাম্প ও ব্ল্যাংক চেক দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই ঘটে যায় বিপত্তি।
বাস্তবে কোন রাজনৈতিক কিংবা ছাত্র আন্দোলনের সংশ্লিষ্টতা না থাকার সত্ত্বেও ইদানীং নিজেকে বিএনপি নেতা কখনো ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ীদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন।ওই যুবকের প্রতারণায় এলাকার ২০-৩০ জন ব্যবসায়ীর পরিবারের নেমে এসেছে শোকের ছায়া।যুবকের আর্থিক প্রতারণা শিকার হয়ে এখন পথে বসে পড়েছেন গেছেন ওই ব্যবসায়ীরা।প্রতারণার শিকার জনৈক ব্যবসায়ী প্রচন্ড ক্ষোভ নিয়ে জানাচ্ছেন, সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিবেন!
সরেজমিনে জানা যায়,ওই যুবক স্থানীয় শ্যামপুর গ্রামের ব্যবসায়ী বিমল শীলের কাছ থেকে ৫১ লক্ষ,জগদীশপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন শানিলের কাছে থেকে ১০ লক্ষ,জগদীশপুর গ্রামের মহিতুষ রায় থেকে ১১ লক্ষ,জগদীশপুর গ্রামের মলয় সুত্রধর থেকে ৯ লক্ষ,জগদীশপুর গ্রামের বাবুল রায়ের কাছ থেকে ৪ লক্ষ,বেজুরা গ্রামের নুরে আলমের কাছ থেকে ৪০ লক্ষ নিয়েছেন।টাকা লেনদেনের লিখিত স্ট্যাম্প সকল ব্যবসায়ীদের কাছে রয়েছে।রয়েছে যুবকের দেয়া সিটি ব্যাংকের চেকও।
এসব ছাড়াও ডিড ডকুমেন্টেন্টের বাহিরেও ১০/১৫ জনের লোকের কাছ থেকে আরো কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে ওই যুবকের বিরুদ্ধে।এসব ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কাছে প্রতারক যুবক ও তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়,প্রতারক যুবক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করে গড়ে তুলেছে অবৈধ আয়ের বিরাট সাম্রাজ্য।কিনেছেন চারটি বিলাসবহুল গাড়ি। বিনিয়োগ করেছেন স্থানীয় নোয়াহাটি তাদের পারিবারিক বয়লার ব্যবসায়।মাধবপুর পৌরসভায় বানিয়েছেন তিনতলা বিশিষ্ট বিলাসবহুল বাড়ি। নামে বেনামে বিভিন্ন জায়গায় খরিদ করেছেন জমি।চড়া সুদে বিভিন্ন লোকদের কাছে লগ্নিও করেছেন বিপুল পরিমান টাকা।অনিন্দ্যের বেপরোয়া ও বিলাসিতার নমুনা তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের বিভিন্ন ছবি ও পোস্টেও তা লক্ষ্য করা যায়।
স্থানীয়রা জানায়,অনিন্দ্য রায়ের পিতা দিলীপ কুমার রায়ের সরকারি সারের ডিলার ব্যবসা রয়েছে।এলাকায় যার যতেষ্ট খ্যাতি-যশ রয়েছে।পিতার উপর বিশ্বাস করেই অনেকে ছেলের উপর অন্ধ বিশ্বাসের বিনিয়োগ করেছে।এখন পিতা পুত্রের কোন দায়-দায়িত্ব নিচ্ছেন না। ছেলেও লাপাত্তা।
ভুক্তভোগী সেলুন ব্যবসায়ী বিমল শীল জানান, আমি জমি বিক্রি করার ৫১ লাখ টাকা ব্যবসায় পার্টনার করবে আশায় স্ট্যাম্প করে অনিন্দ্যকে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে টাকা দিবে বড় কথা এখন সে পলাতক।সে নিজেকে ছাত্র সমন্বয় পরিচয় দিয়ে ভয় দেখায়। আমি ও আমার পরিবারে পথে বসে গেলাম। আমরা এর বিচার চাই।
আরেক ভুক্তভোগী নূরে আলম জানান,আমি ধারকর্য করে তার কাছে টাকা দিয়েছিলাম। এখন ঐসব পাওনাদাররা আমার বাড়ি ছাড়ছে না।আমি খুব পেরেশানির মধ্যে রয়েছি।
সম্প্রতি দেলোয়ার নামে এক ভুক্তভোগী টাকা চাইতে দিলীপ ও অনিন্দ্যের বাড়িতে গেলে টাকা না পেয়ে উল্টো হামলার শিকার হতে হয়।
অভিযুক্ত যুবক অনিন্দ্য রায়ের পিতা দিলীপ কুমার রায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানান ,আমাকে বলে কেউ টাকা ধার দেয়নি। আমি বিষয়টি জানলাম। দেখি কিছু করা যায় কি না।
অভিযুক্ত অনিন্দ রায়ের সাথে যোগাযোগ করতে একাধিক ফোন দেয়া হলেও তুমি ফোন রিসিভ করেনি।তার বাড়িতে গিয়ে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলেও প্রতিবেদকের সাথে দেখা করে নি।
স্থানীয় জগদীশপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ খান জানান,একজন ভুক্তভোগী এ বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন।বিষয়টি সত্য হলে অনেক বড় প্রতারণা।আমার পক্ষে যতটুকুন করা সম্ভব আমি করব।
মাধবপুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রশিদ জানান,এত বিপুল পরিমাণ আমানত এক যুবকের সংগ্রহ করা আইনসম্মত হয়নি।এনজিও সংক্রান্ত মাসিক মিটিংয়ে আমরা এ নিয়ে আলোচনা করব।কেউ অভিযোগ দায়ের করলে এটি সমাধানের চেষ্টা করব।
হবিগঞ্জ দুদকের উপ পরিচালক মোজাম্মেল হক জানান, প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা মানিলন্ডারিং আইনে অপরাধ। তদন্তে প্রমাণিত হলে আমরা এ বিষয়ে মামলা দিতে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে চিঠি দেবো।
যোগাযোগ করা হলে মাধবপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান,প্রতারকের বিষয়টি আমরা খোঁজখবর নিয়ে দেখছি। তদন্তে প্রমাণিত হলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
Good news
Good