৩০ এপ্রিল ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
সারাদেশ / সাহিত্য ও সংস্কৃতি

বঙ্গবন্ধুর দেওয়া চাদরটি আজও স্বযত্নে রেখেছেন নাট্যশিল্পী অনিমা দে

১৪ ডিসেম্বর, ২০২২

ছবি: ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া চাদর হাতে অনিমা দে।

যাত্রা, মঞ্চ নাটক এবং কণ্ঠসঙ্গীতের একসময়ের কিংবদন্তী শিল্পীর নাম অনিমা দে। দরাজ অভিনয়ের মাধ্যমে আন্দোলিত করেছেন হৃদয় । নাট্যজীবনের শুরুরদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্য লাভ করেন অনিমা দে। বঙ্গবন্ধু তার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে ফুল, মেডেল ও একটি চাদর উপহার দেন। দীর্ঘদিন ধরে বঙ্গবন্ধুর উপহার সেই চাদরটি রেখে দিয়েছেন অনিমা দে। অনিমা দে'র স্বামী দিলীপ কুমার দে-ও ছিলেন একজন বড় মাপের অভিনেতা। পিতা যোগেশ চন্দ্র দে তিনি ছিলেন একজন বড় ওস্তাদ। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অনিমা দে আগরতলা থেকে চলে যান দার্জিলিং, গৌহাটি, শিলচর, শিলংসহ নানা জায়গায়। মঞ্চ নাটক, যাত্রাপালা, কণ্ঠ সঙ্গীতের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় শো করে আহত মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ ; করছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে দূর থেকে অনেকবার দেখলেও কাছে গিয়ে কথা বলার কখনো সুযোগ হয়নি অনিমা দের। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম নেভি ক্লাবের আমার বাবা যোগেশ চন্দ্র দে এবং কমল দাশ গুপ্ত একই গুরুর শিষ্য ছিলেন। সামনে নৌ-সেনাদরে উদ্যোগে মঞ্চ কমল দাশ গুপ্ত বললেন আগামীকাল বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে তোমাদেরকে নাটক করতে হবে। তখনই নাটক চলতে থাকে। অনিমা দে সেখানে বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালককে নিয়ে হাজির হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন জয়দুর্গা অপেরার নায়িকা। বঙ্গবন্ধুকে দেখা মাত্রই প্রণাম করি । বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তোমাদের গল্প আমি শুনেছি। যাও, এখন বিশ্রাম মালিক ছিলেন কানাইলাল সেরে তোমরা আগামীকালকে নাটকের জন্য প্রস্তুতি নাও আমি সম্পূর্ণ নাটক দেখব।' পরদিন চক্রবর্তী। অনিমা দে বলেন, ‘নেভি বাংলাদেশ বেতার মঞ্চস্থ করা হয় নাটকটি। ‘নন্দ রানীর সংসার' নামের পালাটিকে ‘বৌদি' নামকরণ ক্লাবে নাটক চলাকালীন সময় হঠাৎ করে নাটক আকারে মঞ্চস্থ করা হয়। সেদিন সাড়ে সাতটার দিকে শুরু হয় নাটকটি। গ্যালারির প্রথম করে একদিন কানাইলাল চক্রবর্তী সারিতে সোফাতে বসে নাটকটি উপভোগ করেন বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক, কমল এসে শিল্পীদের জানান, বঙ্গবন্ধুর দাশ গুপ্তসহ সরকারের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। সেদিন রেসকোর্স ময়দানে বড় পর্দার মাধ্যমে সরাসরি উদ্যোগে আয়োজিত নাটক করতে বেতারের থেকে পরিবেশন করা হয়েছিল নাটকটি। তাই রেসকোর্স ময়দানে হাজারো মানুষের ঢল হবে ঢাকা বেতারে। আমারা নেমেছিল। শুধু তাই নয় সরাসরি কলকাতা পর্যন্ত নাটকটি রিলে করা হয়েছিল ।’অনিমা দে আরও শিল্পীরা শোনামাত্র মহা খুশি। যাকে দূর থেকে এতবার দেখেছি সেই বলেন, 'সব থেকে স্মরণীয় বিষয়টি হলো নাটক চলাকালীন সময়ের এক ঘন্টা পর  মহাপরিচালক বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে আমরা নাটক এসে বলেন নাটকটি সংক্ষিপ্ত করার জন্য কিন্তু বঙ্গবন্ধু বলেন আমি শেষ পর্যন্ত নাটকটি দেখে যাবো । করবো স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। ফলে চলতে থাকে নাটকটি। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা একটানা বসে বঙ্গবন্ধু নাটকটি দেখেন। নাটক মালিক কানাইলাল চক্রবর্তী শেষে শিল্পীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সেই সাথে নায়িকা হিসেবে আমাকে ফুলের শুভেচ্ছা, মেডেল শিল্পীদের জানান পরদিনই ও একটি সাদা চাদর প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু আমাকে পরম স্নেহে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, 'মা রে, আমাদের রওনা দিতে হবে ঢাকায় । খুব ভালো লেগেছে তোর অভিনয় । সুযোগ পেলে আবার তোদের অভিনয় দেখতে আসবো আমি।' পরদিন নেভি ক্লাব থেকে বিদায় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক আমার স্বামী দিলীপ কুমার দে'কে 'প্রিন্স' নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিল ;খেতাব দেন। নাটক শেষে আমাদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধু খেতে বসেন। খাবার টেবিলে তিনি আমার জয়দুর্গা অপেরা। ঢাকা বেতারে অনেক প্রশংসা করেন। খাওয়া শেষে কমল দাশগুপ্ত এবং বাবা যোগেশ চন্দ্র দে একে অপরকে পৌঁছাতেই সেখানে দেখা হয়ে গেল জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন এবং আবার কবে দেখা হবে এ নিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সেদিন পিত্র সমতুল্য বিশিষ্ট সুরকার গীতিকার বর্তমান মাইলস ব্যান্ডের বঙ্গবন্ধু বলেন, 'আমি শিল্পীদের খুবই ভালোবাসি কারণ তারা দেশের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখে। পর শাফিন আহমেদের প্রয়াত পিতা দেন বেতার বাংলা নামে একটি ছোট আকারে স্মরণিকা প্রকাশিত হয় এবং সারা ঢাকা শহরসহ কমল দাশ গুপ্তের সাথে। দেখা বাংলাদেশ ও ভারতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। সেই স্মরণিকাতে বঙ্গবন্ধুসহ আমাদের সকল শিল্পীর ছবি হতেই কমল দাশ গুপ্তকে প্রণাম করি ও পরিচয় সম্বলিত তথ্য ছিল। ঢাকা বেতারে খোঁজ করলে সেই স্মরণিকাটি এখনও পাওয়া যেতে (৪ পাতায়) পারে।' তবে নিষ্ঠুর সময় তছনছ করে দিয়েছে শিল্পী অনিমা দে'র জীবন। অভিনয়জীবন ছেড়ে দিলে তার জীবন থেকে নিয়তি কেড়ে নেয় তার দুই সন্তানকে । তারা দুরারোগ্য ম্যনেনজাইটিস ও হিমোফাইলিয়া ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।  এই অবস্থাতেই বেতার বাংলার স্মরণিকাটি খুঁজে চলছেন অনিমা দে। অনিমা দে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সত্যি এক মহামানব ছিলেন যিনি নিজের কথা কখনোই ভাবতেন না । তিনি যদি বেঁচে থাকতেন আজ আমার অবস্থা এমন থাকতো না । এখন খুব কষ্ট করে সংসার চালাই। আজও ভুলতে পারিনি বঙ্গবন্ধুর সেই স্মৃতি। আজও খুঁজে যাচ্ছি বেতার বাংলা নামের সেই স্মরণিকাটি যেখানে লিপিবদ্ধ আছে অনেক তথ্য।

 

 অনিমা দে'র প্রতিবেশীও নববিধান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিমান গোবিন্দ সরকার বলেন, ‘অনিমা দে বঙ্গবন্ধুর সাথে নিজের একমাত্র স্মৃতির অনুসন্ধান করে চলছেন এখনও।তিনি সত্যি একজন গুনী শিল্পি । তিনি এ ও বলেন তাকে সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ভাবে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ  সন্মানা প্রদানের জন্য অনুরোধ করছি । জীবন সংগ্রামের মধ্যে থেকে ও  তিনি  জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকতে চান অনিমা দে।'

Related Article