৩০ এপ্রিল ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
সারাদেশ

বেদে সম্প্রদায়: উপেক্ষিত এক যাযাবর জনগোষ্ঠী জন্ম থেকেই যাদের শিশুরা মৌলিক অধিকার বঞ্চিত

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আসাদুজ্জামান রিপন,
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রতিনিধি

ছবি: কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান রিপন এর পাঠানো ছবিতে বেদে সর্দার

মোরা এক ঘাটেতে রান্দি বাড়ি আরেক ঘাটে খাই, মোদের সুখের সীমা নাই,
পথে ঘাটে ঘুরে মোরা সাপ খেলা দেখাই, মোদের ঘর বাড়ি নাই।
বেদে (বাদিয়া বা বাইদ্যা) বাংলাদেশ ও ভারতের একটি যাযাবর জনগোষ্ঠী। যারা সাধারণত নৌকায় বাস করে থাকে। তবে অনেকেই আবার তাবু নির্মাণ করে অস্থায়ীভাবে থাকে। আজ এখানে কাল ওখানে। এভাবেই জীবন যাপন করতে যারা অভ্যস্ত। গ্রামে গ্রামে ঘুরে সাপ ধরা, সাপের খেলা দেখানো, জাদুবিদ্যা প্রদর্শন করাসহ বিভিন্ন রকম কর্মকান্ডের মাধ্যমে যারা জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। যেসব যাযাবর মানবগোষ্ঠী বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষত নদীবহুল, জলবহুল অঞ্চলে দেখা যায়, তাদেরই প্রচলিত নাম বেদে। বৈদ্য থেকে বেদে শব্দটির উদ্ভব। অধিকাংশ পুরুষ এবং নারীরা নানা রকম ঝড়িবুটি এবং টোটকা চিকিৎসার সাথে জড়িত বলে এদের নাম হয়েছে বেদে বা বাইদ্যা। এই সম্প্রদায়ের লোকেরা মোট ৯টি শাখায় বিভক্ত। এগুলো হলো: চাপাইলা, লাউয়ো, বাজিকর,বেজ, গাইন,মেল্লছ, বান্দাইরা, মাল ও সাপুরিয়া। এই যাযাবর গোষ্ঠী আমাদের দেশে এতটাই প্রান্তিক অবস্থানে পৌছেছে যে, জাতীয় পরিসংখ্যানে পর্যন্ত তাদের কোন গুরুত্ব নেই। আমাদের জাতীয় নীতি নির্ধারণী বৈঠকগুলোতেও তাদের কথা উঠে আসেনা কখনোই। 
মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এই জনগোষ্ঠী বেচে থাকার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। কথা হয় কুড়িগ্রামে ধরলার তীরে আশ্রয় নেয়া একটি যাযাবর গোষ্ঠীর সর্দার এর সাথে। সর্দার মফিজুল ইসলাম জানান তারা সারাদেশেই এভাবে তাবু স্থাপন করে থাকেন এবং গ্রামে গঞ্জে সাপ খেলা ড়দেখিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের বসত ভিটা আছে কি না জানতে চাইলে বলেন কারো কারো ২/৪ শতক জমি আছে। তবে বেশির ভাগেরই নেই। তবে তারা বাড়িতে থাকেন না। এভাবেই তারা ভবঘুরে হয়ে থাকতে ভালবাসেন। সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা তারা পান কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না তারাপান না তেমনটা। তবে মাঝে মাঝে কিছু চাল ডাল সহযোগীতা পেয়ে থাকেন। সরকারী খাস জমি বন্দোবস্ত নেয়া কিংবা সরকারী আবাসন প্রকল্পগুলোর জন্য তারা কখনো চেষ্টা করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি জানান না তারা বসতবাড়িতে থাকতে পছন্দ করেন না। তাই চেষ্টাও করেন না। আর চিকিৎসার জন্য খুব বেশি অসুস্থ না হলে তারা হাসপাতালেও যান না। নিজেরাই নিজেদের তৈরী গাছগাছরার ওষুধ খান।  
আর তাদের শিশুরা জন্মগতভাবেই মৌলিক অধিকার বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। শিক্ষার আলো থেকে তারা পুরোপুরি বঞ্চিত। তবে কেউ কেউ তাদের বাচ্চাদেরকে আত্বীয় স্বজনের বাসায় পড়ালেখার জন্য রেখেছেন বলে জানান। 
কুয়াশা, প্রচন্ড ঝড়, তুফান, বৃষ্টি, বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগে তারা কিভাবে এই পলিথিনের তাবুতে থাকে জানতে চাইলে সর্দার মফিজুল ইসলাম জানান তাদের অভ্যাস হয়ে গেছে এবং তাদের কোন অসুবিধা হয়না  । 
একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়া স্বত্বে এই বেদে যাযাবর গোষ্ঠীর শিশুরা যেমন শিক্ষা ও স্বাস্থেও মৌলিক অধিকার রাখে, তেমনি তাদের বৃদ্ধরাও শেষ বয়সে হলেও রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধার হকদার। কাজেই তাদের মাঝে সচেতনা সৃষ্টি করাও যেমন একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের কর্তব্য তেমনি সামাজিকভাবে তাদের অধিকার নিশ্চত করাও কর্তব্য।

Related Article
comment
মোঃ মনির হোসেন বকাউল
29-Sep-23 | 10:09

Good news

মোঃ মনির হোসেন বকাউল
10-Dec-23 | 04:12

Good