২১ মার্চ, ২০২৩
ছবি: সালেহা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
প্রায় দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও এমপিওভুক্ত হয়নি ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়ায় সালেহা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা শিক্ষকতার পাশাপাশি এখন অন্য কাজ করছেন। এ অবস্থায় স্কুলটি দ্রুত এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকসহ এলাকাবাসী। ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২০টি প্রতিষ্ঠান এবং২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর ২ হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয় সরকার। কিন্তু সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে সালেহা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এতে চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন বিদ্যালয়টির শিক্ষক-কর্মচারীরা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সালে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে উপজেলার রুহিয়া থানার উত্তরা বাজার সংলগ্ন বিদ্যালয়টি ৯৬ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়, প্রতিষ্ঠানটির পাঠ দানের জন্য ৮ রুম বিশিষ্ট একটি আধাপাকা একাডেমি ভবন নির্মিত করা হয় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে । ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পাঠদানের অনুমতি পেয়ে প্রতিষ্ঠানটি এলাকার মেয়েদের শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুরু থেকেই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল অন্যান্য বিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক ভালো। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক, ১২ জন সহকারী শিক্ষক, অফিস সহকারী, নৈশ্বপ্রহরী এবং একজন এমএলএসএস কর্মরত আছেন। পাসের হার ২০২২ সালে ৩২ জন ছাত্রী এসএসসি পরিক্ষার্থী ছিল তারমধ্যে ২৯ জন পাশ করেছে এবং ১২ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে। ২০২১ সালে ৮৫ ভাগ শিক্ষার্থী এসএসসি পরিক্ষায় পাশ করেছে , যা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক ভালো। তারপরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়নি। ফলে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব শিক্ষক-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ইতোমধ্যে তাদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হয়ে গেছে। অন্য কোনো চাকরিতেও আবেদন করার সুযোগ নেই। এ কারণে হতাশাগ্রস্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কেউ কেউ জীবন-জীবিকার তাগিদে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। কেউ কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের আশায় স্কুলেই পড়ে আছেন।
এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা বলেন, ভাবতে অবাক লাগে শিক্ষকরা চাকরি করেন, কিন্তু কোনো বেতনভাতা পান না। আর এভাবে দীর্ঘদিন বিনাবেতনে শিক্ষকদের পক্ষে পাঠদান করাও সম্ভব না।
হাসিবুল নামে এক অভিভাবক বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব নেই। শুধু সাইনবোর্ড রয়েছে এবং পাঠদানের কোনো যোগ্যতা রাখে না। সেসব প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্ত হয়েছে। একই ব্যক্তির একাধিক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ার ঘটনাও আছে। কিন্তু আমাদের এলাকায় এত সুন্দর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও হয়না। আগামীতে যখন আবারও এমপিওভুক্ত করা হবে, এ প্রতিষ্ঠানটি যেন সেখানে অগ্রাধিকার পায়।
ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহানাজ বেগম ও হোসনেয়ারা বেগম কান্নাজরীত কন্ঠে বলেন, ২৪ বছর ধরে বিদ্যালয়টিতে শ্রম দিয়ে আসছি। এ জন্য প্রতিদিন প্রায় ৭ কিলোমিটার আসা-যাওয়া করতে হয়। কিন্তু কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায় না। ফলে পড়ানোর পাশাপাশি বাড়ির জমিতে কৃষিকাজ করি। আট সদস্যের পরিবার নিয়ে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। স্কুলটি আজ-কাল এমপিও হবে বলে বছরের পর বছর পার হয়ে গেছে। এদিকে বয়স শেষ হওয়ায় অন্য কোনো চাকরির আবেদন করাও সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই এমপিওর আশায় এখন স্কুলে পড়ে আছি।
সালেহা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহানারা বেগম শেলী বলেন, আমার বিদ্যালয়টি এমপিওর সব শর্ত পূরণ আছে, পরীক্ষার ফলাফলও অনেক ভালো কিন্তু দুঃখের বিষয় দীর্ঘ ২ যুগ পার হলেও আমরা এমপিও ভুক্তি হতে পারিনা এতে করে আমিসহ ১৫ জন স্টাফ মানবেতর জীবনযাপন করছে। গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন করে বলেন দ্রুত বিদ্যালয়টিকে এমপিও ভুক্তি করান নইলে শিক্ষক কর্মচারীগুলোর করুন পরিনতি হতে পারে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি মুশারুল হক বলেন, ১৯৯৯ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় এখানে ১৬ জন শিক্ষক ও কর্মচারী আছে কিন্তু দুঃখের বিষয় সকল স্টাফ গুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে আমি আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করছি আপনি দয়া করে বিদ্যালয়টির দিকে সুদৃষ্টি দিন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমান বলেন, দুই যুগেও এমপিও ভুক্তি হয়নি বিষয় টা দুঃক্ষজন তবে ২০২২ সালে দুই হাজার সাতশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্তি করা হয়েছে কিন্তু সালেহা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি কেন এমপিও ভুক্তি হলো না এতে করে হয়তো ক্যাটাকরীর আওতায় পরেনি। তিনি আরও বলেন বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে উর্ধতন কতৃপক্ষকে অবহিত করব।