০৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
ছবি: ক্লাস করছেন আব্দুল মান্নান
শেখার কোনো শেষ নেই এবং
শেখার কোনো বয়স নেই। সেটা প্রমাণ করলেন গাইবান্ধার জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার ১নং কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান মিয়া।
সঠিকভাবে দোকানের হিসাব রাখতে সময় ও নিয়ম মেনে প্রতিদিন স্কুলে আসছেন তিনি। নাতির বয়সী শিশুদের সাথে গ্রহণ করছেন শিক্ষা। ইতিমধ্যে বেশ অগ্রসর হয়েছেন শ্রমজীবী এই মানুষটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাতে প্রথম শ্রেণীর বই নিয়ে ষাটোর্ধ্ব আব্দুল মান্নান মিয়া নাতীর ছেলে কাওসারের সঙ্গে স্কুলে আসছেন। এ বছরে উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছেন তিনি। অন্য শিশু শিক্ষার্থীদের সাথে একই বেঞ্চে বসে মনোযোগ সহকারে ক্লাস করছেন তিনি। নানার বয়সে বন্ধু পেয়ে খুশি কমলমতি শিক্ষার্থীরা।
আব্দুল মান্নানের বাড়ি ওই ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী গ্রামের। তাঁর বাবার নাম মৃত তছিম উদ্দিন। ক্লাসে গিয়ে কথা হয় আব্দুল মান্নানের সঙ্গে। তিনি জীবনের স্মৃতিচারণা করে বলেন, আমরা ৬ ভাই ও এক বোন। আমি তৃতীয়। ছোট বেলায় লেখাপড়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু অভাবের কারণে করতে পারিনি। স্কুলে তখন তো সরকারি কোন বই দিতো না, খেয়ে না খেয়ে বড় হয়ছি। তারপর অন্যের জমিতে কায়িক শ্রম দিতে শুরু করি। কখনো শ্রম বিক্রি আবার কখনো রিকশা ভ্যান চালাতাম। বয়স বাড়লো, শরীরের শক্তি কমে আসলো, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে জীবিকার তাগিদে কাশিয়াবাড়ী বাজারে একটি ক্ষুদ্র পান দোকান দিয়েছি। সেখানেই পানের খিলি বিক্রি করি, পাশাপাশি স্কুলের বই পড়ি।
স্কুলে ভর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে, আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, দোকান দেয়ার পর থেকে অনেক বাকি বিক্রি করতে হয়েছে। বয়স হয়েছে,দোকানের হিসাব মুখে মুখে রাখা সম্ভাব হয় না,তাই লেখাপড়া করার জন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছি।
দাম্পত্য জীবনে দুই মেয়ে ও এক ছেলের বাবা তিনি। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে মমিরুল ইসলাম পলাশবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পরীক্ষা দেবে। বড় মেয়ের ছেলে মাহফুজার রহমান বিয়ে হয়েছে। তাঁর ছেলের নাম কাওসার। তার সঙ্গেই স্কুলে যান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা জাকারিয়া বলেন, বয়স কোন ব্যাপার না, ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভাব। তার প্রমাণ মান্নান চাচা। তিনি বৃদ্ধ বয়সে স্কুলে শিখতে আসছেন। প্রতিদিন তিনি স্কুলে যান। স্কুল ছুটি হলে দোকানে বসেন।
কাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান মণ্ডল মিথুন বলেন,স্কুলে ভর্তির একটি নিদির্ষ্ট সময় সীমা আছে। আব্দুল মান্নান স্কুলে ভর্তির জন্য বললে আমি স্যারদের সাথে কথা বলে তাকে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করে নিয়ে বই দিয়েছি। ইতিমধ্যে তিনি অনেক কিছুই শিখেছেন। স্কুলের নিয়মনীতি মেনেই তিনি স্কুলে আসছেন।
পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুত বলেন, এই বয়সে লেখাপড়া করার খবর শুনে আমিসহ এলাকার সবাই ভীষণ খুশী। তিনি এ বয়সে লেখাপড়া করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা সমাজের কাছে সমাদৃত হয়ে থাকবে। তার এই উদ্যোগে শিক্ষার্থীরা উৎসাহ পাবে। ওই প্রধান শিক্ষককে তার বিষয়ে দেখভাল এর নির্দেশ দেওয়া হয়েছেে।