০১ ডিসেম্বর, ২০২২
ছবি: সবজি চাষে সফল কৃষক আব্দুর রাজ্জাক রাজু
গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের ছোট ভগবানপুর গ্রামের আদর্শ কৃষক আব্দুর রাজ্জাক রাজু পাশাপাশি দুটি গ্রামের প্রায় ২২ বিঘা জমিতে বাঁধা কপি, ফুল কপি, টমেটো, শিম, পিয়াজ, পেঁপে, বেগুন চাষ করে উক্ত গ্রামদ্বয়ে সবুজের বিপ্লব ঘটিয়েছেন।
তিনি ৬ বিঘা জমিতে বিষমুক্ত বাঁধাকপি চাষ করে বাম্পার ফলন ফলিয়েছেন।জমিতেই পাইকের ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা দাম করে গেছেন। মাত্র ৯০ দিনের এ ফসল আবাদ করতে ৬ বিঘা জমিতে চারা, সার, জমি চাষ ও মজুরি বাবদ খরচ হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে কপি তুলে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন বলে কৃষক আব্দুর রাজ্জাক রাজু জানান।
বতর্মানে একেকটি কপির ওজন হয়েছে ১ কেজি ৭০০ গ্রাম থেকে ২ কেজি। শীতকালীন এই সবজি বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আব্দুর রাজ্জাক রাজু।
এ কৃষক শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নেই। তিনি বাড়ীতে গড়ে তুলেছেন দুগ্ধ খামার। মাত্র ১ টি গাভী থেকে শূরু করে এখন তার খামারে দুগ্ধ গাভী ৬ টি। ৩ টি বাছুর গাব রয়েছে। বাছুর রয়েছে ৪ টি। বতর্মানে ৪ টি গাভী থেকে প্রতিদিন দুধ আসছে ৪৮ কেজি করে। খাবার সব বাড়ীর তৈরী খাওয়ান। বছরে এ খামার থেকে তার আয় প্রায় ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকা খরচ বাদে।
এদিকে আড়াই বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছেন। কৃষি অফিসের টমেটো প্রদর্শনী ৬ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। ফুলকপি ৩ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন, লম্বা বেগুন ৪ বিঘা জমিতে, ৬০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করেছেন। শিমের ফলনও বাম্পার হয়েছে। শিম বিক্রিও শুরু করে দিয়েছেন।
সফল চাষী আব্দুর রাজ্জাক রাজু জানান, আমি নিজের জমিসহ আশেপাশের প্রতিবেশীদের জমি বাৎসরিক ১০ হাজার টাকা বিঘা কন্ট্রাক নিয়ে প্রায় ২২ বিঘা জমিতে পিয়াজ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, পেঁপে, টমেটো, শিম চাষ করেছি। নিজের খামারের গরুর গোবর দিয়ে বিষমুক্ত এসব সবজি চাষ করেছি। আমার এসব সবজি জমি থেকেই ট্রাক লোড দিয়ে সরাসরি ঢাকা কাওরান বাজারে বিক্রি করি এবং গাইবান্ধা জেল কারাগারেও সরবরাহ করি। আমার ৬ বিঘা বাঁধাকপি দাম করেছে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। এদামে বিক্রি করবো না। আজ ২০ মন বাঁধাকপি ৬শ টাকা মন দরে বিক্রি করেছি স্থানীয় বাজারে। আমার এসব দেখাশোনার জন্য নিয়মিত দুজন শ্রমিক কাজ করে দুগ্ধ খামারে ও কৃষি ক্ষেতে। আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজন তো সব সময় আছিই। দুজন শ্রমিককে প্রতিদিন ৮শ টাকা করে দিতে হয়। গাভীর দুধ বাড়ী থেকেই অর্ধেক বিক্রি হয়, বাদ বাকিটা হোটেলে দেই ৫০ টাকা লিটারে। বাঁধাকপিতে রোগ বালাই খুবই কম। তবে শীম এবং ফুলকপিতে একটু মাঝে মাঝে ম্প্রে করতে হয়।
উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের সবজি চাষী বাদশা মিয়া জানান, বতর্মানে সর্ব প্রকার সবজিতে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। একারণে খরচ বাদ দিয়ে লাভ ভালোই পাচ্ছি। একই এলাকার বাঁধাকপি চাষী জানান, আমি দুই বিঘা জমিতে আগাম শীতকালীন বাঁধাকপি চাষ করেছি। দামও বেশ ভালো পাচ্ছি।বাঁধাকপির ফলনও ভালো হয়েছে।
মহদীপুর ইউনিয়নের ছোট ভগবানপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম জানান, আমি কৃষক আব্দুর রাজ্জাক রাজুর কপি ও অন্যান্য ফসলের জমিতে নিয়মিত পরিদর্শন করি। আমি এবছর তাকে ৬ বিঘা জমিতে টমেটোর প্রদর্শনী দিয়েছি। বিষমুক্ত সবজি চাষে তাকে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করে আসছি। আমার ব্লকসহ মহদীপুর ইউনিয়নে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি, ৪৫ বিঘা জমিতে পিয়াজ চাষাবাদ হয়েছে। দিন দিন এ ইউনিয়নে সবজি চাষ বাড়ছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একইঞ্চি জমিও যেন পড়ে না থাকে, সে কথাই বাস্তবায়ন করছি। আমরা চেষ্টা করছি কৃষকদের একইঞ্চি জমি যেন পড়ে না থাকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফাতেমা কাওসার মিশু জানান, সবজি উৎপাদনে পলাশবাড়ীর বেশ সুনাম রয়েছে। এখানকার সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় চলে যাচ্ছে। আমরা সবজি উৎপাদন আরো বৃদ্ধিতে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। এ পযর্ন্ত পলাশবাড়ী উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি,৩০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষ হয়েছে।