১৫ নভেম্বর, ২০২২
ছবি: সীমানা প্রাচীরের ভাঙ্গা অংশ।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় একটি সীমানা প্রাচীর ভাঙ্গার ঘটনায় থানায় মামলা হওয়ার পর পুলিশের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বাদীর ক্ষতি হয়েছে ১০ হাজার টাকা। আর পৌরসভা প্রকৌশলীর দাবী, ৫ ইঞ্চি ইটের তৈরী গাথুনীর ২২ ফুট লম্বা ৩৩২টি ইট ভেঙ্গে ফেলা দেয়ালটি পুনরায় নতুন করে নির্মান করতে ৮/১০ হাজার টাকা লাগবে। অথচ মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছেন দেয়াল ভাঙ্গায় বাদীর ক্ষতি হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা।
বিবাদীর অভিযোগ মামলা তদন্তের নামে বাদীর কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে পিবিআইয়ের ওই এস, আই পক্ষপাতিত্ব করেছেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, সীমানা প্রাচীর নির্মানকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন যাবত বেলকুচি উপজেলার গাড়ামাসি গ্রামের বাসিন্দা রাজিউল হক ও প্রতিবেশী নুরুল ইসলামের মধ্যে দ্বন্ধ চলে আসছিল। এ অবস্থায় চলতি বছরের ১৯ জুন প্রতিপক্ষ নুরুল ইসলাম বির্তকিত ওই প্রাচীরের (দেয়াল) একাংশ ভেঙ্গে ফেলেন। এ ঘটনায় ৭ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে দাবী করে ২১ জুন বেলকুচি থানায় মামলা করেন রাজিউল হক। মামলার তদন্তের পর থানার এস,আই মাহমুদুল হাসান ৩০ জুন আদালতে প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৪ ফুট উচু এবং ২৫ ফুট লম্বা (ইটের তৈরী ৫ ইঞ্চি গাথুনী) দেয়ালটি ভাঙ্গার কারনে বাদীর ১০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এরপর বাদী আদালতে না রাজী দিলে পুনরায় তদন্তের জন্য আদালত মামলাটি সিরাজগঞ্জ পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর পিবিআইয়ের এস,আই আশিকুর রহমান পুনরায় মামলাটি তদন্ত করে ১৬ অক্টোবর আদালতে প্রতিবেদন দেন। ওই প্রতিবেদনের উল্লেখ করা হয়েছে আনুমানিক ৭ ফুট উচু ও ৫০/৫৫ ফুট লম্বা দেয়ালটি ভাঙ্গার কারনে বাদীর ২ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানাতে চাওয়া হলে বেলকুচি পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক মঙ্গলবার বিকেলে বলেন, সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলার পর ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে সরজমিন সার্ভে করা হয়েছে। ওই সীমানা প্রাচীরে ৫ ইঞ্চি ইটের তৈরী ২২ ফুট লম্বা অংশ থেকে ৩৩২টি ইট খুলে ফেলা হয়েছে। যা পুনরায় নতুন করে নির্মান করতে ৮/১০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।
এ বিষয়ে বিবাদী হাজী নুরুল ইসলাম জানান, মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর পিবিআইয়ের এস,আই আশিকুর রহমান সরজমিন ঘটনাস্থলে এসে ছবি তুলে নিয়ে যাবার সময় তিনি আমাকে তার অফিসে গিয়ে দেখা করতে বলেন। এরপর দুইদিন তার অফিসে গেলেও তিনি আমার সাথে সাক্ষাত করেননি। পরবর্তীতে বাদীর কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তিনি মনগড়া ভাবে পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন দিয়েছেন, যা আদৌ সত্য নয়। পিবিআই দৃশ্যমান একটি তদন্তে যদি এমন প্রতিবেদন দেয় তাহলে তাদের অদৃশ্যমান প্রতিবেদন গুলোতে কি হয় তা মানুষের বুঝতে বাকি থাকেনা।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, বাদী রাজিউল হক জোরপূর্বক আমার দেড় ফুট জায়গা দখল করে সীমানা প্রাচীর নির্মান করেছেন, যে কারনে আমি ওই সামীনা প্রাচীরের একাংশ ভেঙ্গে ফেলেছি।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এস,আই আশিকুর রহমান মঙ্গলবার বিকেলে বলেন, সীমানা প্রাচীরের একাংশ ভাঙ্গার বিষয়ে সরজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর বাদীর আনুমানিক ২ লাখ ২০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে প্রমানিত হওয়ার পর আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছি। আর এই প্রতিবেদনটি দ্রুত পাঠানোর জন্য উচ্চ মহলের চাপ ছিলো।
অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার বিষয়ে বিবাদীর করা অভিযোগের প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে আশিকুর রহমান বলেন, পিবিআই মামলা তদন্তে কোন অনৈতিক সুবিধা নেয় না এটা সবাই জানে। বিবাদীর অভিযোগ সত্য নয়। আমি এসপি মহোদয়ের সাথে পরামর্শ করেই প্রতিবেদন দিয়েছি।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার রেজাউল করিম মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, বিবাদী অভিযোগ করতেই পারে। তবে তদন্ত কর্মকর্তা সরজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেই প্রতিবেদন দিয়েছে। আদালত ইতোমধ্যে প্রতিবেদনটি আমলে নিয়েছেন। পরবর্তী সিদ্বান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আদালতের।
Good news
Good