৩০ এপ্রিল ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
জাতীয় / রাজনীতি

ওবায়দুল কাদেরের ‘তিন’ নাকি অন্য কেউ

২৪ ডিসেম্বর, ২০২২

জুয়েল রানা,
স্টাফ রিপোর্টার

ছবি: আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের আগে বৃহস্পতিবার সম্মেলনস্থল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সাধারণ সম্পাদক পদে কেউ প্রার্থিতা ঘোষণা করেননি, কিন্তু দলের বিভিন্ন ফোরামে প্রকাশ করেছেন আগ্রহ। গত দুইবারের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আছেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও হাছান মাহমুদ।

দলের নেতৃত্বে শেখ হাসিনাকে আসতে হয় বিয়োগান্ত ঘটনায়। সেই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ছয় বছর পর ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তার হাতে তুলে দেয় দলের নেতৃত্ব।

এরপর দলটির যতগুলো সম্মেলন হয়েছে, ততবার বঙ্গবন্ধুকন্যার বিকল্প ভাবেনি আওয়ামী লীগ। ২০১৯ ও পরের সম্মেলনে অন্য কাউকে বেছে নিতে অনুরোধ করেছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু কাউন্সিলররা রাজি হননি। এবারও তার সভাপতি পদ নিয়ে নেই এতটুকু অনিশ্চয়তা।

শনিবার সকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলটির ২২তম জাতীয় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের পরে বিকেলে দ্বিতীয় অধিবেশনে নির্বাচিত হবেন দলের দুই শীর্ষ নেতা।

সম্মেলন নিয়ে যে উৎসাহ বা আগ্রহ তা মূলত সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। কে আসছেন এই পদে, তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা, আলোচনা, গুঞ্জন। কাউন্সিলররা বোঝার চেষ্টা করছেন দলের সভাপতি এ নিয়ে কী ভাবছেন?

সভাপতি হিসেবে কেন আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার বিকল্প ভাবেন না, তা ফুটে উঠেছে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে। সম্মেলনের দুই দিন আগে এক আয়োজনে তিনি বলেন, ‘সভাপতি আমাদের অপরিহার্য। যিনি (শেখ হাসিনা) সভাপতি, তিনি আমাদের ঐক্যের প্রতীক। এই মতের ভিন্ন একজনও কাউন্সিলর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।’

আর সে জন্যই বলে দেয়া যায়, শেখ হাসিনার দশমবারের মতো সভাপতি হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।

সাধারণ সম্পাদক পদে কেউ প্রার্থিতা ঘোষণা করেননি, কিন্তু দলের বিভিন্ন ফোরামে প্রকাশ করেছেন আগ্রহ। গত দুইবারের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আছেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এবং হাছান মাহ্‌মুদ।
এদের মধ্যে আবদুর রহমান আলোচনায় নেই। গত কয়েক মাসে ব্যাপক সাংগঠনিক সফর করে ‘অসুস্থতাজনিত দুর্বলতা’ কাটিয়ে ওবায়দুল কাদের তৃতীয়বারের মতো পদ পেতে শক্তিশালী প্রার্থী।

গত কয়েক মাসে রাজনৈতিক নানা বক্তব্য নিয়ে আলোচনায় আছেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকও। তিনিও দলের বিভিন্ন ফোরামে তৎপরতা বাড়িয়েছেন।

যুবলীগের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির নানক সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই তার সাংগঠনিক দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছিলেন। ছাত্রলীগের নানা সংকট মোকাবিলা করেও প্রশংসিত হয়েছেন। তিনি এই সম্মেলন আয়োজনেও তার ছিল ভূমিকা।

হানিফ ও হাছানের আর একটি পদোন্নতিই তাদের এনে দিতে পারে রাজনৈতিক জীবনের সেরা সাফল্য। এই ‍দুই নেতাকে নিয়েও শেষ সময়ে আলোচনা আছে।

সাধারণত দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, নেতা-কর্মীদের চাওয়া, সাংগঠনিক ক্ষমতা, জনপ্রিয়তা, পরিস্থিতি সামাল দেয়ার সামর্থ্য, অভ্যন্তরীণ পাওয়ার ফ্যাক্টর (হাউস) এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিত মিলিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়।

গত কয়েকবারের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, এ পদে ভোট হলেও সাধারণত প্রার্থীর নাম প্রস্তাব হয় একজনেরই। আর সমঝোতার মাধ্যমে তাকে আগেই চূড়ান্ত করা হয়।

আওয়ামী লীগের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, দলে টানা তৃতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক পদে কেউ থাকেননি। ওবায়দুল কাদের যদি আবারও সাধারণ সম্পাদক হন তাহলে এই নিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুরও রেকর্ড ছোঁবেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৩, ১৯৫৫ ও ১৯৫৭ সালে টানা তিনবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এর বাইরে প্রয়াত জিল্লুর রহমান দুই দফায় চার মেয়াদে এবং তাজউদ্দীন আহমদ দুই দফায় তিন মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

নিজের পদে ফেরার প্রত্যাশা নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনস্থল পরিদর্শনকালে বৃহস্পতিবার ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এবারের যে সম্মেলন, যে কমিটি হবে, এখানে তেমন একটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রয়োজনে পরবর্তী সম্মেলন নির্বাচনের পর আগামও করতে পারি। তখন একটা বড় ধরনের পরিবর্তন হয়তো হবে। আপাতত আমরা বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের ব্যাপারে ভাবছি না।’

সাধারণ সম্পাদক পদে হ্যাটট্রিক করছেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো প্রেডিকশন করতে চাই না। টাইম ইজ নট ম্যাচিউরড টু প্রেডিক্ট। এটা আমি করতে পারি না। তাহলে কাউন্সিলরদের চিন্তা-ভাবনাকে অবমূল্যায়ন করা হয়।

অন্তত ১০ জন আছে, যারা সাধারণ সম্পাদক হওয়ার যোগ্য। সে ধরনের অভিজ্ঞ নেতৃত্ব আমাদের দলে আছে। এটা নেত্রীর ইচ্ছা এবং কাউন্সিলরদের মতামতের ওপর নির্ভর করছে।’

তবে শুক্রবার তার বক্তব্য খানিকটা বদলে যায়। তিনি বলেন, ‘কাজ করতে গেলে ভুল-ত্রুটি হবেই। আই এম নট পার্ফেক্ট লিডার, আমি মনে করি একেবারে পারফেক্ট হওয়া সম্ভব না। ভুল-ত্রুটি তো থাকবেই।… দায়িত্ব বদলালেও এই দলেই আছি, দলের জন্যই কাজ করব।’

রংপুর থেকে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কাউন্সিলর হিসেবে যোগ দিতে আসা আবুল কাসেম  বলেন, ‘এবারের সম্মেলনের গুরুত্ব অন্যবারের চেয়ে বেশি। কারণ ২২তম সম্মেলনের নেতৃত্বর মধ্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে দলে যেখানেই দ্বন্দ্ব-বিভেদ, গ্রুপিং-কোন্দল, সেখানেই কেন্দ্রের কঠোর হস্তক্ষেপ করতে হবে সাধারণ সম্পাদককে।’

Related Article