৩০ এপ্রিল ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
সারাদেশ / জাতীয় / আন্তর্জাতিক / শিক্ষা / সাহিত্য ও সংস্কৃতি

অমর একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

জুয়েল রানা,
দেলদুয়ার উপজেলা (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

ছবি: শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ

‘অপমানে তুমি জ্বলে উঠেছিলে সেদিন বর্ণমালা, সেই থেকে শুরু দিন বদলের পালা...’

কবির ভাষায় দিনবদলের পালা শুরু হয়েছিল যেদিন, সেদিন বাংলা মায়ের বীর সন্তানদের শোণিত রক্ত ধারায় সিক্ত হয়েছিল এ মাটি। আজ চিরভাস্বর সেই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি অহংকারে মহিমান্বিত মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

রক্তের আখরে লেখা বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে বেদনার পাশাপাশি চিরগৌরবদীপ্ত ও অহংকারে মহিমান্বিত দিন আজ। সালাম, বরকত. রফিক, জব্বার, সফিউদ্দিনসহ নাম না জানা অগণিত মৃত্যুঞ্জয়ী ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি আজ। বাঙ্গালী জাতির মননে অনন্য মহিমায় সমুজ্জ্বল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও আজ। শোক, বেদনা, আর আত্মত্যাগের অহংকারে ভাস্বর সেই মহান শহীদ দিবসে ভোরের আকাশ বাতাস বিষণ্ন করে আজ অযুত কণ্ঠে বেজে উঠবে-
'"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি; আমি কি ভুলিতে পারি...'"

১৯৫২ সালের এই দিনে যারা আমাদের মায়ের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে সাহসে জ্যোতির্মান বাঙ্গালী মাথার ওপর অগ্নিগোলক নিয়ে ধুলোধূসরিত পায়ে, ঘামে ভেজা চুলে, অনলঝরা চোখে, বাংলাদেশের সব শহরের রাস্তায় রাস্তায় মুষ্টিবদ্ধ হাতে রুখে দাঁড়িয়েছিল এক অলৌকিক প্রত্যয়ে। মায়ের মুখের ভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলার দামাল ছেলেরা বুকের তপ্ত শোণিতে রক্তে রঞ্জিত করেছিল রাজপথ। এক একটি বাংলা অক্ষর সেদিন পরিণত হয়েছিল বাঙালির এক একটি জীবনে। বীর বাঙ্গালী শহীদ ভাইয়ের সেই আত্মবলিদান আজ ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে সারাবিশ্বে। একমাত্র বাঙ্গালীরাই রয়েছে বিশ্বে মাতৃভাষার জন্য জীবন বলিদানের নজির। তাই এই দিনটিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সারাবিশ্ব আজ পালন করবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

আজ শুধু বেদনার দিন নয়- সাহসে, প্রেরণায়, প্রত্যয়ে, উদ্দীপনায়, সকল প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাবার দিন। আঁধার সরিয়ে আলোয় উদ্ভাসিত হবার দিন। অশুভ, অন্ধকার প্রতিহত করার প্রত্যয়ে জাতি উদ্দীপিত হবে আজকের এই পবিত্র ক্ষণে। শোক, শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও অর্জনের এক অপূর্ব সম্মিলনে জাতি পালন করবে এই দিনটি। সকলের সব পথ আজ মিশে যাবে শহীদ মিনারে। বাহারি ডিজাইনের সাদাকালো রঙের শোকের পোশাক পরে আজ শিশু, বুড়ো, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী সবাই নেমে আসবে রাজপথে। অনেকের হাতে, কপালে থাকবে জাতীয় পতাকা, চিবুকে ও কপালে থাকবে অহংকার ও শক্তির প্রতীক শহীদ মিনার।

মহান শহীদ দিবস শুধু আমাদের অর্জনেরই দিন নয়, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হারানোর বেদনারও দিন। তাই শুধু আনন্দে মেতে থাকলেই আমাদের চলবে না, তাদের সেই ত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে ও শক্তি অর্জন করে বর্তমানের অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে হবে। ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক শক্তি জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে লড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যেতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে সব প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে।

অমর একুশে উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও এর আশপাশের এলাকায় জারি করা হয়েছে রেড এ্যালার্ট। গড়ে তোলা হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুরো এলাকায় বসানো হয়েছে হাইভোল্টেজ মুভি ক্যামেরা। অসহস্রাধিক র্যাব, পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সাদা পোশাকের সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকবেন।

শুধু রাজধানীতেই নয়, আজ সারাদেশের মানুষ আঁধার চিরে দিনের আলো ফোটার অনেক আগেই নগ্নপদে রাশি রাশি ফুলের মালা ও স্তবক নিয়ে ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে যাবেন নিজ নিজ এলাকার শহীদ মিনারে। বসন্ত শাখায় শাখায় ফুটিয়েছে যে অজস্র ফুল, প্রকৃতির সেই অর্ঘ্য আজ বাঙ্গালীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সিক্ত হয়ে নিবেদিত হবে শহীদদের প্রতি। আত্মোৎসর্গকারীদের জন্য হৃদয় মথিত করা শোকের প্রতীকরূপে কালো পতাকা উড়বে প্রভাতফেরিতে।

আজ সরকারি ছুটির দিন। তাই সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং শোকের প্রতীক কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। মহান শহীদ দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা বাণী দিয়েছেন। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। দিবসটি স্মরণে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পালন করছে বিশেষ কর্মসূচি। এর মধ্যে রয়েছে প্রভাতফেরি করে শহীদ মিনার, শহীদদের কবর জিয়ারত, দোয়া মাহফিল, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

-----জুয়েল রানা------
-চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ-
------এম.ডি.সি--------

Related Article