০৭ মার্চ, ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে, রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন। তখন পলকে দারুন ঝলকে তরীতে উঠিল জল, হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিলো জোয়ার, সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী? গণসুর্য্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে, কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতা খানি:
"এবারের সংগ্রাম,আমাদের মুক্তির সংগ্রাম-
এবারের সংগ্রাম,স্বাধীনতার সংগ্রাম"
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেদিন বজ্রকণ্ঠে এই উচ্চারণ করেছিলেন, সেদিনই এ দেশের মানুষ বুঝে গিয়েছিল পাকিস্তানের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির সময় এসেছে। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটিই আসলে বাঙালির পরাধীনতা মুক্তির সনদ। আজ ঐতিহাসিক সেই দিনটির ৫২তম বার্ষিকী।
দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান দিবসটি উদযাপন করবে।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভাষণ দিতে শুরু করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এর আগে নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহের কারণে পুরো জাতি মুখিয়ে ছিল বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য শোনার জন্য। সেদিন রেসকোর্স ময়দান জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধু তাঁর বজ্রকণ্ঠে সেদিন পুরো জাতিকে যার যা কিছু আছে তা নিয়ে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেন। ঐতিহাসিক সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু যে নির্দেশনাগুলো দেন পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিন পর্যন্ত সেভাবেই দেশ পরিচালিত হতে থাকে। এ ভাষণটি পুরো জাতিকে এমনভাবে উজ্জীবিত করেছিল যে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশের মানুষের ওপর হামলে পড়লেও বাঙালি তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করতে পেরেছিল।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর বাণীতে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কেবল আমাদের নয়, বিশ্ববাসীর জন্য প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় দিন। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ পৃথিবীর কালজয়ী ভাষণগুলোর অন্যতম। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তিপাগল জনগণকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে ঐ ভাষণ ছিল এক মহামন্ত্র। একটি ভাষণ কিভাবে গোটা জাতিকে জাগিয়ে তোলে, স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহিত করে—বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ তার অনন্য উদাহরণ।
তিনি বলেন, “দেরিতে হলেও ইউনেসকো বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করে এবং ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর এই ভাষণকে ‘ওয়ার্ল্ড ডেমোক্রেসি হ্যারিটেজ’-এর মর্যাদা দিয়ে ‘মেমরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার’-এ অন্তর্ভুক্ত করে। বাঙালি হিসেবে এটি আমাদের বড় অর্জন।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অমিত শক্তির উৎস ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতার এই ভাষণের দিকনির্দেশনাই ছিল সে সময় বজ্রকঠিন জাতীয় ঐক্যের মূলমন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ আমাদের ইতিহাস এবং জাতীয় জীবনের এক অপরিহার্য ও অনস্বীকার্য অধ্যায়; যার আবেদন চির অম্লান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কালজয়ী এই ভাষণ বিশ্বের শোষিত বঞ্চিত ও মুক্তিকামী মানুষের সব সময় প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।