১৭ অক্টোবর, ২০২২
ভুক্তভোগী সেতারা বেগম (৫৭) উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের আকবর হাজী বাড়ির মৃত আবু বক্কর ছিদ্দিকের স্ত্রী। গত শনিবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ থানার প্রধান ফটকে ও মুঠোফোনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর দিন সকালে ভুক্তভোগী ওই নারীকে বাড়ি গিয়েও বিভিন্ন রকম গালাগাল ও হুমকি ধামকি দিয়ে শাসিয়ে এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে বারণ করেন এসআই রতন।
ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করে বলেন, ৭ মাস আগে তার ছেলে নুরনবীকে (২৭) প্রতারণা করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সৌদি আরব আবাসিক হোটলের ভিসা দিবে বলে ৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের ৫ নাম্বার ওয়ার্ডের মেহের আলী কামলা বাড়ির সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলাম। কথা ছিল সাইফুল সৌদিআরব নিয়ে আমার ছেলেকে আবাসিক হোটেলে চাকরি দিবে।
বেতন হবে ১,৮০০/ (এক হাজার আটশত রিয়াল)। যাহা বাংলা টাকায় প্রায় ৪০,০০০/ (চল্লিশ হাজার টাকা) ভুক্তভোগী নারী জানান ভিসা পেয়ে আমার ছেলে সৌদিআরব যাওয়ার পর ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও সে আমার ছেলেকে কোন চাকরি দিতে পারেনি। একপর্যায়ে আকামা করার জন্য পুনরায় ১,হাজার রিয়াল দাবি করে যাহা বাংলা টাকায় প্রায় ২৩০০০ হাজার, পরে আমার ছেলে বন্ধুর থেকে হাওলাত করে সাইফুল কে এক হাজার রিয়াল দিয়েছে। টাকা পাওয়ার পর আমার ছেলেকে একটি আকামা প্রধান করে,আমার ছেলে চাকুরীর খোঁজ করতে গেলে জানতে পারে তাকে দেওয়া আকামাটি ডুবলিকেট অথবা জাল।
তিনি আরো জানান,আমার ছেলে সৌদিআরব থেকে ইমুর মাধ্যমে আমাকে বিস্তারিত জানায়, আমি সাইফুলের পরিবার পরিজনদের কে আমার ছেলের আকামা এবং হোটের চাকুরীর ব্যপারে যোগাযোগ করলে তারা আমাকে উল্টো হুমকি ধামকি দিয়ে থাকে।আমার ছেলের প্রতিনিয়ত কান্নাকাটিতে আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি।সর্বশেষ আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে প্রতারণার অভিযোগ তুলে গত ১৫-২০ দিন আগে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর তিন জন কে বিবাদি করে একটি লিখিত অভিযোগ করি। অভিযোগে বিবাদি গন সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলামের বাবা-মা ও স্ত্রী। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি এ অভিযোগের তদন্ত করার দায়িত্ব দেন এস,আই রতনকে। সমস্যার সমাধান করতে রতন আমাদের কাছে ৫হাজার টাকা দাবি করে। পরে তাকে ২হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকী টাকা পরে দেওয়ার কথা ছিল।
ওই নারী আরো বলেন, গত শুক্রবার প্রথম বৈঠকে থানায় বিবাদী পক্ষের কেউ উপস্থিত ছিলোনা। দ্বিতীয় বৈঠক বসার জন্য এসআই রতন বিবাদীদের বাড়িতে গিয়ে বৈঠকে বসার বিষয়ে অবহিত করে আসেন। তারপর গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে এস,আই রতন আমাকে (বাদী) ফোন দিয়ে জানায় থানায় কোন বৈঠক হবেনা। বৈঠক হবে বসুরহাট বাজারের হক হোটেলে।
এ নিয়ে অভিযোগকারী নারী রোঁস্তোরায় গিয়ে বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানালে এস,আই রতন ওই নারীকে মুঠোফোনে অশ্রাব্য-অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। তখন মুঠোফোনে ওই নারী এস,আই রতনকে জানায় থানায় অভিযোগ করেছি বৈঠকও থানায় হবে। এরপর এসআই তাকে থানার গেইটে আসতে বলে।
সেবা প্রত্যাশী নারী থানার গেইটের ভিতরে প্রবেশ করলে পুনরায় সে ওই নারীকে বিশ্রী ভাষায় প্রকাশ্যে সাধারণ মানুষের সামনে গালমন্দ করে। পরে ওই নারী কাঁদতে কাঁদতে থানা থেকে চলে যায়। এসআই রতনের অশ্রাব্য-অশ্লীল ভাষায় গালাগালের একটি অডিও রেকডিং ও ভিডিও তারুণ্য২৪ এর প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষতি আছে।
ভুক্তভোগী অভিযোগ করে আরো বলেন, আমাকে আমার ছেলের সামনে এবং উপস্থিত লোকজনের সামনে প্রকাশ্যে এভাবে কোন পুলিশ কর্মকর্তা গালিগালাজ করতে পারে না। ওই নারী আরো জানান তিনি পুলিশি আতঙ্কে আছেন, এবং ছেলে সন্তান নিয়ে নিজের বসত ভিটা ছেড়ে অন্যত্র জীবন যাপন করতেছে।এ ঘটনায় তিনি এসআই রতনের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে কোম্পানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোঃ রতন মিয়া মুঠো ফোনে বারবার কল করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
উক্ত ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সাদেকুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী নারী কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও সম্পর্কের কারণে বিষয়টি সমাধানে এস,আই রতন তৎপর ছিল। কিন্তু গালিগালাজের যে ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়েছে তা দুঃখজনক। গতকাল রাতেই তাকে ক্লোজড করা হয়েছে।