২৬ নভেম্বর, ২০২২
ছবি: নেইমার
সবুজ মাঠে যখন হলুদ ফুল ফোটে, ফুটবল হয়ে ওঠে কবিতা। সেই কবিতা পড়ার সবচেয়ে ভালো সময় রাতের নির্জনতা। পরশু রাতে একটা কবিতা পড়লাম। চাইলে শিরোনাম দিতে পারেন ব্রাজিল অথবা রিচার্লিসন। আর কোনো নাম জুতসই হবে না। যখন শেষ বাঁশি বাজে, ঘড়ির কাঁটা তিনটা ছুঁই ছুঁই।
বারান্দায় এসে দেখি অনেক বাড়িতে আলো জ্বলছে তখনো। বাড়িগুলোকে মনে হলো একেকটা দ্বীপ। আর জানালাগুলো একেকটা লণ্ঠন। শাল মহুয়ার বনে জোনাকির আলো নিভছে না, জ্বলছেই। খেলা শেষ, রেশ রয়ে গেছে। একটু আগে লুসাইল স্টেডিয়ামে তিতের জোনাকিরা যে আলোর নাচন নেচেছে, শেষের পরও তার আবেশ রয়ে গিয়েছিল অনেকক্ষণ। যা দেখলাম তা কী নিছকই ফুটবল নাকি মায়াবী বিভ্রম! ফুটবল যদি হয় এত মাদকতাময়, সেটা দোহায় হোক কিংবা দোহারে, বনশ্রীতে কিংবা বনানীতে, তাতে কী এসে যায়। কিন্তু পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের জন্য বড় চিন্তার বিষয় ম্যাচে নেইমারের চোট পাওয়া।বৃহস্পতিবার রাতে হাসিমুখে স্টেডিয়াম ছাড়েননি নেইমার। তার চোট ভোগাতে পারে দলকে। গোড়ালির ইনজুরির পরিণতি কী হয়, কে জানে। ব্রাজিল কোচ যদিও আশ্বস্ত করেছেন, নেইমার চালিয়ে যাবেন। কিন্তু ৮০ মিনিটে তাকে তুলে নিতে বাধ্য হওয়ায় কোচের কথায় আশ্বস্ত হতে পারছেন না ব্রাজিল ভক্তরা। শুক্রবার ব্রাজিল দলের চিকিৎসক জানালেন, সোমবার সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে পরের ম্যাচ মিস করবেন নেইমার। এর পরের ম্যাচগুলোয় তার খেলার ব্যাপারে আশাবাদী চিকিৎসক।
তিতে কী শিখিয়ে রিচার্লিসনদের কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে মাঠে নামিয়েছিলেন। ব্রাজিল ফিরিয়ে আনল পুরোনো জাদু। সার্বিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে শুরুয়াতের জন্য নয় সেই সঙ্গে নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা করল মানে, জগৎকে জানিয়ে দিল ‘হেক্সা’ ষষ্ঠ শিরোপা) জয়ে তারা কতটা আত্মপ্রত্যয়ী, প্রস্তুত।
প্রথমার্ধে সার্বিয়া প্রবল প্রতিপক্ষকে গোলবঞ্চিত করতে সফল হয়। সেসময় কারও কারও মনে যদি আর্জেন্টিনা ও জার্মানি ম্যাচ উঁকি দিয়ে থাকে, দ্বিতীয়ার্ধে তাদের ভুল ভাঙালেন রিচার্লিসন। ব্রাজিলের দুটি গোলই তার। দ্বিতীয়টি ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মতো। ম্যাচে ব্রাজিলের আধিপত্য বোঝাতে একটি ছোট্ট পরিসংখ্যানের আশ্রয় নেওয়া যায়। বল দখলের লড়াইয়ে সার্বিয়ার (৪১%) চেয়ে ঢের এগিয়েছিল ব্রাজিল (৫৯%)। লক্ষ্যে ব্রাজিলের শট আটটি। সার্বিয়ার একটিও নেই। সেলেকাওদের পাসের সংখ্যা ৫০৪টি। ৩২৬টি সার্বিয়ার। ব্রাজিলের গোলরক্ষক অ্যালিসনকে একটিবারও পরীক্ষা দিতে হয়নি। কিন্তু সার্বিয়ার গোলপ্রহরীকে কমপক্ষে ছয়বার গোল বাঁচাতে হয়েছে।
সাদা চোখে দেখলে ম্যাচে সেলেকাওদের গোল মাত্র দুটি। কিন্তু গোল হতে পারত আরও গোটাচারেক। বিরতির কয়েক সেকেন্ড পর রাফিনিয়া ভানজা মিলিনকোভিচ-সাভিচকে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন। এই সাভিচ হচ্ছেন সার্বিয়ার গোলপ্রহরী। জীবনের চেয়ে বড় চরিত্র হয়ে ওঠার তার চেষ্টায় বাদ সাধেন প্রিমিয়ার লিগে টটেনহামের হয়ে খেলা ফরোয়ার্ড রিচার্লিসন।
৬২ মিনিটে রিয়াল মাদ্রিদের উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের শট সাভিচ রুখে দিলে ফিরতি বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি রিচার্লিসন। এটা কাকতাল যে, ব্রাজিলের দ্বিতীয় গোলেরও মদদদাতা সেই ভিনিসিয়ুস। গোলদাতা সেই রিচার্লিসন। তার দুর্দান্ত বাইসাইকেল কিকে স্কোরলাইন ২-০ হয়। ম্যাচের তখন বাকি ১৭ মিনিট। গোল আরও হতে পারত। কাসেমিরোর শট ক্রসবারে চুমু খেয়ে ফিরে আসে। ফ্রেডকে হতাশ করেন সাভিচ।
ভিনিসিয়ুস হার মানাতে অসফল হন সার্বীয় গোলরক্ষককে। এই জয়ে ব্রাজিল এখন জি-গ্রুপের শীর্ষে, সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে যুগ্মভাবে। বৃহস্পতিবার আগের ম্যাচে সুইসরা ১-০ গোলে হারায় ক্যামেরুনকে।