৩০ এপ্রিল ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
সারাদেশ / অপরাধ

মিরপুরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহীন শিকদার, ভয়ে মুখ খুলে না কেউই জনমনে আতঙ্ক - (পর্ব-২)

২৫ এপ্রিল, ২০২৫

ছবি: জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহীন শিকদার ও তার গ্যাংদের চিত্র

রাজধানী সহ সারাদেশে একযোগে শুরু হয়েছে চাঁদাবাজি, হত্যাকান্ড, সন্ত্রাসী, রাহাজানির মহড়া

এসব সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ আটক হলেও অধিকাংশই রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে সবমিলিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ, রীতিমতো আতঙ্কে দিনপার করছেন ভুক্তভোগী  পরিবার গুলো।

তবে দীর্ঘ ১৫-১৭ বছর যাবত যারা এমন সন্ত্রাস চালিয়ে আসছে, তাদেরকেও ধরতে না পারার অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

বিশেষ করে রাজধানীর মিরপুর, কাফরুল, ভাষানটেক সহ আশপাশের এলাকাগুলোতে এক আতঙ্কের নাম কুখ্যাত সন্ত্রাসী শাহীন শিকদার। যার ভয়ে কোনো মামলা তো দূরের কথা- অভিযোগ করতেও সাহস পায় না সাধারণ মানুষ। 

বিভিন্ন ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের আগস্ট মাস থেকে অনুসন্ধান শুরু হয়। বিগত সময়ের তুলনায় সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর, কাফরুল, ভাষানটেক,পল্লবীসহ বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, মানুষ হত্যা, ডাকাতি  দিন দিন বেড়েই চলেছে। চাঁদা না দিলে গুম, খুন, হত্যার চেষ্টার আতঙ্কে আছে অসংখ্য পরিবার। অবশেষে বাধ্য হয়ে তারা সাংবাদিকদের কাছে তাদের অসহায়ত্বের কথা বর্ণনা করে। 

 গত পর্বে এসব ঘটনার কয়েকটি বাস্তব প্রমাণ তুলে ধরেছিলাম,  এবার আরো কিছু তথ্য কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম এবং তাদের কাজের ধরন  উল্লেখ করছি ।  

>>>সন্ত্রাসীদের পরিচয়>>>

ক. নাম: "সন্ত্রাসী রবি শেখ"

পিতা- মৃত কুরবান শেখ,  মাতা- জরিনা বেগম,  স্ত্রী- তাসলিমা, পেশা- ড্রাইভার (আড়ালে সন্ত্রাসী), জন্ম তারিখ- ১৩.০৫.১৯৮৭ জাতীয় পরিচয় পত্র- 19872693014027960 স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম- শেখপাড়া, পোস্ট অফিস- বানরগাতী, থানা- সোনাডাঙ্গা  জেলা-খুলনা। বর্তমান ঠিকানা: গ্রাম সেনপাড়া পর্বতা, বাসা নম্বর ৫৮৪/২ ইসলামী ব্যাংক গলি, এক নম্বর বিল্ডিং, থানা- কাফরুল, জেলা ঢাকা, বাংলাদেশ।

সন্ত্রাসী পদ্ধতি:
সন্ত্রাসী রবি শেখের সন্ত্রাসের ধরণ: দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহীন শিকদারের গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে কাজ করছে। টাকার  বিনিময়ে টার্গেট ব্যক্তিকে কোপানো, জিম্মি, অপহরণ, মাদক চোরাচালান, নারী কেলেংকারী সহ নানা অপকর্মে জড়িত রবি শেখ।

 

খ.  আসিফ"

বাবা: ইসতিয়াক, মাতা: পিচ্চি, ক্যাম্পের ঠিকানা: এফজি ক্যাম্প, স্বর্ণপট্টি সংলগ্ন, মিরপুর ১১, ঢাকা। সন্ত্রাসী আসিফের সন্ত্রাসের ধরণ: শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহীন শিকদারের সাথে কাজ শুরু করে ২০০৯ সালে। অর্থাৎ কিশোর বয়সেই আসিফের সন্ত্রাসীর হাতেখড়ি। কিশোর গ্যাংদের নিয়ে শাহীন শিকদারের সকল অপকর্মের অন্যতম হোতা আসিফ ও তার গ্যাং। আসিফ ছাড়াও তার গ্রুপে রয়েছে আরও ১৭ জন সদস্য। যাকে সবাই ডেঞ্জার সেভেন্টিন বলে। অথচ সন্ত্রাসী আসিফ তার গ্রুপকে লাকি সেভেন্টিন বলে।

সন্ত্রাসী আসিফ মিরপুর অঞ্চলে একজন মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। তাকে সবাই ইয়াবা আসিফ বলেই ডাকে। তবে এই সন্ত্রাসী আসিফ সবখানে নিজেকে সেকেন্ড থানা বলে পরিচয় দেন। কারণ পল্লবী থানার কয়েকজন পুলিশকে সে ও তার পরিবার নিয়মিত মাসোয়ারা দেন। সাথে তার বোন শারমিন দেহব্যবসার মাধ্যমেও পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া আসিফ ভয়ংকর একজন ছিনতাইকারী। যেকোনো সময় যেকোনো যায়গায় ছিনতাই করতে তার কলিজা কাপে না। এমনকি মিরপুর ১১ স্বর্ণপট্টি লাইনে অনিক টেলিকম নামক বিকাশ এজেন্টের দোকান থেকে দিনেদুপুরে অস্ত্র ঠেকিয়ে ৩ লাখ টাকা ছিনতাই করে আসিফ। আর দামি মোবাইল, গহনা, টাকা, মানিব্যাগ ইত্যাদি ছিনতাই করা আসিফের কাছে নৈমিত্তিক ঘটনা। 

স্থানীয়দের মতে আসিফ পুরো মিরপুর জুড়েই ইয়াবার জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সে মিরপুর ১৩ চিহ্নিত সন্ত্রাসী জুম্মন শেখের মা জরিনা বেগম, মিরপুর ১১ ডুইপ প্লটের হেরোইন সম্রাট মোস্তাক ও তার ছেলে ইয়াবা সুমনদের সাথে নিয়মিত ইয়াবা ও মাদকের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত মিরপুর এলাকার প্রতিটি বিহারি ক্যাম্পে সন্ত্রাসী আসিফ ও তার গ্যাং মাদক ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। 

সন্ত্রাসী আসিফ ও তার ভয়ংকর পরিবার:

সন্ত্রাসী বিহারি আসিফ নিজে একজন ছিনতাইকারী, ইয়াবা সেবন ও চোরাকারবারি, ভয়ংকর সন্ত্রাসী চক্রের হোতা। কিন্তু তার পরিবারের মাফিয়া চক্র আরেক ধাপ এগিয়ে। 

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয়রা জানান, আসিফের বোন শারমিন হানি ট্র্যাপ শারমিন নামেই পরিচিত। অনেকে অবশ্য শারমিনকে এমপি ইলিয়াস মোল্লার রক্ষিতা হিসেবেও জানে। শারমিনের দেহব্যবসা ও টার্গেট করে ধনীর দুলালিদের ফাঁদে ফেলে টাকা, মোবাইল, স্বর্ণ হাতিয়ে নেয়ার অপকৌশল ওপেন সিক্রেট। আর মিরপুর ১৬ আসনের সাংসদ ইলিয়াস মোল্লা ও বড় নেতাদের মনোরঞ্জনের জন্য শারমিনের নাম সবাই জানে। অভিযোগ রয়েছে আওয়ামিলীগ সরকারের পতনের পর শারমিন বড় বড় ক্লায়েন্ট ধরে বিভিন্ন বাসা ও হোটেলে সার্ভিস দিচ্ছে আর আসিফের মামা বিহারি নেতা সাব্বির মিরপুরের চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে ইয়াবা সাব্বির সাদা পাঞ্জাবি গায়ে ভদ্রলোকের বেশে ঘুরে বেড়ালেও তার মূল কাজ ইয়াবা ব্যবসা করা। এমপি ইলিয়াস মোল্লার সাথে সাব্বিরের ছিলো দহরম মহরম সম্পর্ক। ইয়াবা ব্যাবসায়ী, পুলিশের সোর্স সাব্বির, ফিরোজ, আশফাক, বুদ্দু, জুম্মন, তান্নু, ছটু  ভায়েরা এখন সে তার পরিবারের অন্য সদস্যদের বিএনপির নেতাদের ভাও করার জন্য কৌশলে কাজ করছেন। 

 

অন্যদিকে আসিফের দুলাভাই রনি ও রনির ভাই সোহেল ওরফে চাপ্তানি সোহেল বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন। এমনকি সোহেল পল্লবী থানা ছাত্রদলের সভাপতি হতে বিএনপি নেতা আমিনুল হকের কাছে নিয়মিত ধর্না দিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, সোহেল নিজেও ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। সোহেল তার ভাই রনি, রনির স্ত্রী শারমিন, তার মামা সাব্বির, অন্যান্য মামা পুলিশের সোর্স, শ্যালক আসিফ মিলেই চালায় ইয়াবার রমরমা ব্যবসা। এমনকি সোহেল, রনি বাসার গেটে দাঁড়িয়ে পাহারা দেয়, আর রনির স্ত্রী শারমিন পল্লবী থানার পুলিশকে রুমে অনৈতিক সার্ভিস দেয় বলেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। 

ঠিক এভাবেই সন্ত্রাসী আসিফ, তার কয়েকটা পুলিশের সোর্স মামা ও পরিবার শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহীন শিকদারের সাথে মিলে চালিয়ে আসছে অপরাধের স্বর্গরাজ্য।

 

গ.  জুম্মন শেখ"

পিতা- মৃত কুরবান শেখ, মাতা- জরিনা বেগম । স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম- শেখপাড়া, পোস্ট অফিস- বানরগাতী, থানা- সোনাডাঙ্গা জেলা-খুলনা। বর্তমান ঠিকানা: গ্রাম- সেনপাড়া পর্বত, বাসা নম্বর- ৫৮৪/২ ইসলামী ব্যাংক গলি, এক নম্বর বিল্ডিং, থানা- কাফরুল, জেলা- ঢাকা।

 

সন্ত্রাসী জুম্মন শেখের সন্ত্রাসের ধরণ:

সন্ত্রাসী জুম্মন শেখ ও তার মা জরিনা বেগম দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহীন শিকদারের গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে কাজ করছে। টাকার  বিনিময়ে টার্গেট ব্যক্তিকে কোপানো, জিম্মি, অপহরণ, মাদক চোরাচালান, নারী কেলেংকারী সহ নানা অপকর্মে জড়িত জুম্ম শেখ। আর এসব অপকর্মে সহায়তা করে তার মা জরিনা বেগম। ছোট্ট একটা দোকানের আড়ালে মাদকের ব্যবসা এবং টার্গেট ব্যক্তিদের তথ্য দিয়ে ছেলে জুম্মন শেখকে সহায়তা করেন জরিনা বেগম।

 

ঘ.  মুরাদ হোসেন"

বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি । বর্তমানে মিরপুর ১৩ ও ১৪ এলাকায় ভাড়া থাকেন। প্রায়শই মুরাদ গ্যারেজে কাজ করে, তবে আড়ালে চলে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। সন্ত্রাসের ধরণ: দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহীন শিকদারের গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে কাজ করছে। টাকার বিনিময়ে টার্গেট ব্যক্তিকে কোপানো, জিম্মি, অপহরণ, মাদক চোরাচালান, নারী কেলেংকারী সহ নানা অপকর্মে জড়িত মুরাদ হোসেন। জানা যায় সন্ত্রাসী শাহীন শিকদার বড় বড় অপারেশন করায় মুরাদকে দিয়ে। এমনকি মুরাদ সবচেয়ে বেশি টাকা নিয়ে শাহীনের কাজ করে দেয়।

 

ঙ. "ট্যাবলেট হেলেনা ওরফে ক্যাশিয়ার হেলেনা"

নাম:হেলেনা, স্বামী- বাচ্চু  বর্তমান ঠিকানা- মিরপুর ১৪, কচুক্ষেত। পেশা- ইয়াবা ও মাদক চোরাচালান, দেহব্যবসায়ী ও অনৈতিক কাজে মেয়ে সাপ্লাই। 

শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহীন শিকদারের সকল অপকর্মের অন্যতম সহযোগী হেলেনা। এমনকি হেলেনা শাহীন শিকদারের ব্যক্তিগত ক্যাশিয়ার বলেও পরিচিত। হেলেনার স্বামী বাচ্চু মিরপুর ১৩,১৪ তথা কামরুলের চিহ্নিত ইয়াবা ও মাদক কারবারি। পুরাতন কচুক্ষেতে তাদের বাসা। হেলেনা আগে গার্মন্টেসে টিফিন দিতো। পরে বিভিন্ন নেতার বিছানায় শুয়ে ফায়দা লুটে ঝুট ব্যবসা শুরু করে। সেই সাথে হোটেল সহ বিভিন্ন টার্গেট ব্যক্তিদের বাসায় মেয়ে সাপ্লাই দেয়া শুরু করে। এমনকি হেলেনা নিজেও একজন দেহব্যবসায়ী।

 

দর্শক এটা ছিলো শাহীন ও তার গ্যাংয়ের চাঁদাবাজি, রাহাজানি, সন্ত্রাসের কিছু নমুনা মাত্র। যেখানে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ শাহীন ও তার গাংয়ের সবার ফাঁসি চান। ভারতের জেল থেকে ছাড়া পেলেও শাহীন যেনো বাইরে না থাকে, সে বিষয়ে তারা পুলিশের সহায়তা চান। এই পর্বে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহীন শিকদার ও তার সন্ত্রাসী গ্যাংদের কালো জগতের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো  কারণ প্রথম পর্বের সংবাদ প্রকাশের পরও ভারতীয় বিভিন্ন নাম্বার থেকে ভুক্তভোগীদের কাছে ফোন করে টাকা চাওয়া হচ্ছে। যা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে আছে সাধারণ মানুষ ও ভুক্তভোগী। 

শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহীন শিকদারের গ্যাংদের সহযোগী অনেকেই রয়েছে। উপরোক্ত নামগুলোর বাইরেও শাহীনের বিরাট এক চক্র। যাদের মাধ্যমে শাহীন তার অপকর্মগুলো দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে।দুঃখজনক হলেও সত্য, মিরপুর তথা রাজধানীর আতঙ্ক সন্ত্রাসী চক্রটি দেশের বাইরে থেকেও নিউজ প্রকাশের দিন পর্যন্ত বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। অতি শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে দেশের চলমান আইন শৃঙ্খলা অবনতি হতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে বিশেষভাবে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্ৰহণের দাবি সাধারণ জনগণের। হয়তো তখনই কিছুটা স্বস্তি পাবে ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষ।

Related Article