৩০ এপ্রিল ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
স্বাস্থ্য / সারাদেশ / ধর্ম ও জীবন / লাইফ স্টাইল

লবণ থেকে সাবধান !

১৭ জানুয়ারী, ২০২৩

জুয়েল রানা,
দেলদুয়ার উপজেলা (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

ছবি: খাবার লবণ

লবণ ছাড়া কোন খাবারে স্বাদ আসেনা। লবণ ছাড়া কোনও খাবারই রান্না করা সম্ভব নয়। চিনি এবং লবণের হাত ধরেই তো খাবারে স্বাদ আসে। কিন্তু বেশি মাত্রায় লবণ খাওয়াও একেবারে উচিত নয়।

এক চামচ লবণে থাকে দুই হাজার মিলিগ্রাম সোডিয়াম, একজন ব্যক্তির প্রতিদিন দুই হাজার ৩০০ মিলিগ্রামের নিচে লবণ খাওয়া প্রয়োজন। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার পিছনে লবণ এর একটা বড় ভূমিকা রয়েছে।

আবার শরীরে লবণের যোগান ঠিক মতো না হলেও বিপদ !
লবণ কমে গেলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে না। সেই সঙ্গে রক্তচাপ এবং হজম ক্ষমতাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

তাহলে উপায়?
অল্প করে লবণ খাওয়া যেতেই পারে। রান্নার সময় প্রয়োজন মতো লবণ দিন। কিন্তু কাঁচা লবণ যতটা পারবেন, কম খাবেন। কারণ প্রচুর মাত্রায় কাঁচা লবণ খেলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহু গুণে বৃদ্ধি পায়।

প্রসঙ্গত, আজকাল চিকিৎসক মহল লবণ খাওয়া নিয়ে খুবই চিন্তিত। কারণ গত কয়েক বছরে আমাদের দেশের পাশাপাশি সারা বিশ্বেই নন-কমিউনিকেবল ডিজিজে আক্রান্তের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বেড়ে গেছে, আর তার পেছনে অন্যতম কারণ হল অতিরিক্ত মাত্রায় লবণ খাওয়া। এমনকি বাচ্চাদের মধ্যেও অসুস্থতা বাড়ছে- বেশি মাত্রায় লবণ খাওয়ার কারণে। তাই এই বিষয়টির দিকে যদি এখন থেকেই খেয়াল রাখা না যায়, তাহলে কিন্তু বিপদ!

চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার কারণে কী কী শারীরিক সমস্যা হতে পারে, সে সম্পর্কে।

১. উচ্চ রক্তচাপঃ
অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খেলে রক্তচাপ আর স্বাভাবিক থাকে না, বাড়তে শুরু করে। আর যদি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা যায়, তাহলে কিন্তু আর্টারিরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা বহু গুণে বেড়ে যায়। তাই তো অতিরিক্ত কাঁচা লবণ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। না হলে আসন্ন মৃত্যুর জন্য তৈরি হন।

২. হার্টের রোগঃ
বেশি মাত্রায় লবণ শরীরে প্রবেশ করলে হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিওর সহ একাধিক হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে হার্ট ফেইলিওর হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। তাই হার্টকে যদি বেশি দিন সুস্থ্য রাখতে চান, তাহলে লবণ খাওয়ার পরিমাণ যে কমাতে হবে।

৩. ক্যান্সারঃ
একেবারে ঠিক পড়েছেন। বেশি লবণ খেলে ক্যান্সারের মতো মরণ ব্যাধি রোগেও আক্রান্ত হতে পারেন। একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খেলে পাকস্থলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বৃদ্ধি পায়।

৪. কিডনি খারাপ হতে শুরু করেঃ
শরীরে ইলোকট্রোলাইটসের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে লবণের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। কিন্তু তাই বলে বেশি মাত্রায় লবণ খাওয়া একেবারেই চলবে না। কারণ যত বেশি করে লবণ আমাদের শরীরে প্রবেশ করবে, তত কিডনির কর্মক্ষমতা কমে যেতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে বাড়বে রক্তচাপও, যা- যে কোনও মানুষকে ধীরে ধীরে শেষ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

৫. পাকস্থলির আলসারঃ
শরীরে বেশি মাত্রায় লবণের প্রবেশ ঘটলে পাকস্থলির আবরণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ফলে পাকস্থলি আলসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে শরীরে জলের ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারণে নানা রকমের জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়।

৬. অস্টিওপোরোসিসঃ
শরীরে লবণের মাত্রা যত বাড়বে, তত পানির পিপাসা পাবে। আর পানি বেশি করে খেলে প্রস্রাবও বেশি করে হবে। ফলে শরীর থেকে ক্যালসিয়াম বেরিয়ে যেতে শুরু করবে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে। আর এমনটা হলেই ধীরে ধীরে হাড় দুর্বল হয়ে গিয়ে দেখা দেবে অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগ।

৭. মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমবেঃ
বেশি মাত্রায় লবণ খেলে ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি কমে যেতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে ব্রেণ ফাংশন ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং কমবে মনোযোগও। আর এই লক্ষণগুলি দেখা গেলে দৈনন্দিন জীবন যে কতটা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে, তা নিশ্চয় বলে দিতে হবে না।

পরিশেষে, লবণ খান, কিন্তু বেশি মাত্রায় খাবেন না। তাহলেই দেখবেন সুস্থ্য-স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন। সু- স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।

-------জুয়েল রানা--------
-----চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ----
---------এম.ডি.সি.----------

Related Article