১৬ অগাস্ট, ২০২৪
ছবি: মীর মোঃ তানজীরুল ইসলাম (তুষার)
কুয়াশাবনের রহস্য
চট্টগ্রাম জেলার উত্তর হালিশহরের তরুণ আলিফ, পুরো নাম তাওহিদ তারুশ আলিফ, দুর্গা পূজার ছুটির দিনগুলোর জন্য পরিকল্পনা করছিল। তার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল নতুন নতুন জায়গা ঘুরে দেখা। প্রতি বছর পূজার ছুটিতে সে নতুন অভিজ্ঞতার জন্য বেরিয়ে পড়ত। এবারও সে এমন কিছু করার জন্য প্রস্তুত ছিল। তার পরিকল্পনা হলো একটি প্রাচীন ও রহস্যময় জায়গা অন্বেষণ করা।
“বন্ধুরা, এবারের পূজায় কোথাও ঘুরতে যাবো। তোমারা সবাই কি ভাব?” আলিফ উত্তেজিত কণ্ঠে বলল।
মাহিন, লামিয়া, সামির, রবিউল, এবং তানিয়া সবাই তার প্রস্তাবে আগ্রহী হয়ে উঠলো। “কিন্তু কোথায় যাবো?” লামিয়া জানতে চাইল।
“আমরা কোনো টুরিস্ট স্পটে যাবো না। বরং আমরা জঙ্গলে যাবো, যেখানে অ্যাডভেঞ্চার হবে এবং নতুন কিছু দেখার সুযোগ পাবো,” আলিফ বলল।
প্রথমে, বন্ধুদের মধ্যে কিছু দ্বিধা ছিল। “জঙ্গলে? বিপদ হতে পারে,” তানিয়া চিন্তিত কণ্ঠে বলল।
“আমি শুনেছি কুমিল্লার কুয়াশাবনে অনেক রহস্য রয়েছে। জায়গাটি নিষিদ্ধ হলেও আমাদের কিছু হবে না। এটি একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হতে পারে। আমি সবাইকে নিয়ে যাবো,” আলিফ তাদেরকে আশ্বস্ত করল।
বেশ কিছু আলোচনা ও তর্ক-বিতর্কের পর, আলিফের উত্তেজনার কারণে সবাই রাজি হয়ে গেল। কুয়াশাবন, একটি নিষিদ্ধ জঙ্গল, তাদের গন্তব্য হবে।
এরপর, আলিফ পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রস্তুতি নিতে শুরু করলো।
সে জরুরি কিট, প্রথমিক চিকিৎসা সামগ্রী, খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে লাগলো। একসাথে প্রস্তুতি সম্পন্ন করে, সবাই নির্ধারিত দিনে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
“যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। জঙ্গলে যাওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে,” আলিফ বলল।
বন্ধুরা নিজেদের প্রস্তুতি শুরু করলো। মাহিন খাবার এবং পানীয়ের ব্যবস্থা করলো, লামিয়া ও তানিয়া ক্যাম্পিং সামগ্রী পরীক্ষা করলো, এবং সামির ও রবিউল অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রস্তুত করলো।
“এই অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হবে,” আলিফ আশাবাদী কণ্ঠে বলল।
দিন কয়েক পর, আলিফ ও তার বন্ধুদের গ্রুপ প্রস্তুত হয়ে গেল। তারা একটি মিনি ভ্যান ভাড়া করে কুমিল্লার দিকে রওনা হলো। পথে, হাসি-আনন্দ এবং গল্পের মাধ্যমে যাত্রা আরও আনন্দময় হয়ে উঠলো।
রাস্তায় চলতে চলতে, আলিফ তাদের কুয়াশাবনের সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্য দিল। “এই জঙ্গলের পরিবেশ একটু ভিন্ন। কুয়াশার কারণে এখানে দৃশ্যমানতা কম থাকবে, তাই সাবধান থাকতে হবে।”
মিনি ভ্যানের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে, বন্ধুরা কুয়াশাবনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। “এই জায়গার সম্পর্কে আমরা অনেক গল্প শুনেছি। এখানে অনেক রহস্যময় ঘটনা ঘটে,” মাহিন বলল।
কুমিল্লার শহর পেরিয়ে, তারা কুয়াশাবনের কাছাকাছি পৌঁছালো। কুয়াশা ও ঘন জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করে, তারা এক নতুন জগতে প্রবেশ করার মতো অনুভব করছিল।
“আমরা এখানে আসার পর মনে হবে যেন অন্য কোনো জগতে প্রবেশ করেছি। কুয়াশার মধ্যে আমাদের সাবধান থাকতে হবে,” আলিফ বলল।
কুয়াশাবনের প্রবেশমুখে এসে, তারা ক্যাম্পিংয়ের জন্য একটি জায়গা খুঁজতে শুরু করলো। একটু পরে, তারা একটি সমতল জায়গা পেল এবং সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করলো।
“সবকিছু প্রস্তুত আছে। এবার আমরা ক্যাম্পফায়ার শুরু করতে পারি,” আলিফ বলল।
ক্যাম্পফায়ারের চারপাশে বসে, তারা নিজেদের নিরাপদ মনে করছিল। কিন্তু কুয়াশার কারণে অন্ধকার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
“আজ রাতটা আমরা নিরাপদে কাটানোর চেষ্টা করবো। রাতে কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলে, আমাদের একসাথে থাকতে হবে,” আলিফ সতর্কতার সাথে বলল।
সন্ধ্যা ১১টার দিকে, যখন সবাই ক্যাম্পফায়ারের চারপাশে বসে গল্প করছিল, হঠাৎ সামির একটি ভয়ঙ্কর চিৎকার দিয়ে উঠলো। “ওই দেখো! কুয়াশার মধ্যে লাল চোখগুলো!”
সকলেই আতঙ্কিত হয়ে উঠলো। “দেখো, হয়তো কুয়াশার কারণে চোখের দৃষ্টি বিভ্রান্তি হতে পারে। সম্ভবত কিছুই নেই,” লামিয়া শান্ত করার চেষ্টা করল।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর, কুয়াশার মধ্যে অদ্ভুত অস্বাভাবিক শব্দ শোনা গেল। বাতাসে ভেসে আসা শব্দগুলো তাদের আতঙ্কিত করে তুললো। সামির আবারও ভয় পেয়েছে, “এটা কি হতে পারে? মনে হচ্ছে কিছু অস্বাভাবিক ঘটছে।”
“আমরা খুব সাবধান থাকবো। যদি কিছু অস্বাভাবিক ঘটে, তাহলে দ্রুত একযোগ হয়ে যাব,” আলিফ বলল।
রাতের অন্ধকারে কুয়াশার মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটছিল। চারপাশে গাছগুলোর ছায়া অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিল এবং বাতাসে সোঁদা গন্ধ ছিল।
একটি রহস্যময় শব্দ তাদের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছিল। যেন কোনো কিছু চলাচল করছে কুয়াশার মধ্যে। কিছুক্ষণের জন্য, তারা ভেবেছিল হয়তো তাদের কল্পনার অংশ। কিন্তু সন্দেহ তাদের মনের মধ্যে পোকা ধরেছিল।
“আমরা যদি এখান থেকে বের না হতে পারি, তাহলে সমস্যা হতে পারে। সকালে সবকিছু ভালোভাবে পরীক্ষা করবো,” আলিফ বলল।
অতঃপর, তারা একে অপরকে শক্তি দিয়ে এবং সাহসিকতার সাথে রাত কাটালো। যদিও তারা চুপচাপ ছিল, কিন্তু তাদের মনে কিছু একটা সৃষ্টির অনুভূতি ছিল।
পরদিন সকালে, আলিফ ও তার বন্ধুরা জঙ্গলের মধ্যে আরও গভীরে প্রবেশ করতে লাগলো। কুয়াশা কিছুটা কমেছে, কিন্তু অদ্ভুতভাবে পরিবেশ অচেনা এবং রহস্যময় ছিল। তারা দেখতে পেল একটি পুরনো মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ।
মন্দিরের ভেতরে কিছু প্রাচীন লিখিত চিহ্ন ছিল, যা তাদের কাছে অদ্ভুত মনে হচ্ছিল। রবিউল এগিয়ে গিয়ে লেখাগুলো পড়ার চেষ্টা করলো। “লেখাগুলো বেশ পুরনো ও অচেনা। কিছু সন্দেহজনক লাগছে।”
মন্দিরের ভিতরের অন্ধকার ঘরটি তাদের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিল। দেয়ালের চারপাশে কিছু অদ্ভুত প্রতিকৃতি এবং চিহ্ন ছিল, যা তাদের মনে ভয় সৃষ্টি করেছিল।
“আমরা সাবধান থাকা উচিত। এই মন্দিরে কিছু অতিপ্রাকৃত শক্তি থাকতে পারে,” আলিফ সতর্কতার সাথে বলল।
মন্দিরের ভেতরে গিয়ে, তারা একটি অদ্ভুত প্রতিকৃতি দেখতে পেল। এটি ছিল একটি অদ্ভুত জ্যামিতিক নকশা, যা তাদের অদ্ভুত মনে হচ্ছিল। তানিয়া বলল, “এটি কি কোনো প্রাচীন সাধনার চিহ্ন?”
আলিফের মনে হল যে, তারা কিছু গভীর রহস্যের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। “আমরা এখানে বেশ কিছু সময় থাকতে পারবো না। দ্রুত বের হয়ে যাই,” আলিফ বলল।
মন্দিরের অন্ধকার থেকে বের হয়ে, তারা সেখানকার অস্বাভাবিকতা নিয়ে চিন্তিত ছিল। তাদের মনে হচ্ছিল যে, তাদের এখানে কিছু অতিপ্রাকৃত শক্তির সম্মুখীন হতে হতে পারে।
মন্দির থেকে বের হওয়ার পর, সন্ধ্যার অন্ধকার দ্রুত কুয়াশাবনে ঢেকে পড়লো। ঘন কুয়াশার মধ্যে দৃশ্যমানতা কমে গিয়েছিল এবং আলিফ ও তার বন্ধুদের মধ্যে আতঙ্ক এবং উদ্বেগ বাড়ছিল। তারা একটি নিরাপদ জায়গার খোঁজ করতে লাগলো, কিন্তু কুয়াশার কারণে তাদের পথ হারিয়ে ফেললো।
“আমরা পথ হারিয়েছি। চিন্তা করতে হবে কীভাবে বের হবো,” আলিফ বলল।
বন্ধুরা নির্ভেজাল চেষ্টা করতে লাগলো, কিন্তু কুয়াশার মধ্যে দিশাহীনভাবে হাঁটতে হাঁটতে তাদের শক্তি কমে যেতে লাগলো। সামির বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। “আমাদের এখানে কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে। আশেপাশের শব্দগুলো আমাদের শান্তি নষ্ট করে দিচ্ছে।”
একটা সময়, তারা একটি অদ্ভুত পাথর দেখতে পেল। পাথরের পাশে কিছু প্রাচীন লেখা ছিল, যা তাদের চিন্তিত করলো। রবিউল বলল, “এই লেখাগুলো কিছু বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমাদের কিছু পথ দেখাচ্ছে।”
আলিফ পাথরের দিকে অগ্রসর হয়ে লেখাগুলো পড়ার চেষ্টা করলো। লেখাগুলো অসম্পূর্ণ এবং রহস্যময় ছিল, কিন্তু তাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনার ইঙ্গিত ছিল। “আমরা এখানে কিছু অদ্ভুত পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছি। তবে, এই পাথর আমাদের পথ দেখাতে পারে।”
এরপর, তারা একসাথে সিদ্ধান্ত নিল যে, পাথরের দিকে অনুসরণ করবে এবং কোনো নিরাপদ জায়গায় পৌঁছানোর চেষ্টা করবে। কুয়াশার মধ্যে দিয়ে যাত্রা করে, তারা কিছু সময় পর একটি পুরনো, ভগ্নস্তূপের মতো বাড়ি দেখতে পেলো।
“এটি সম্ভবত একটি পুরনো বসতি। এখানে আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারবো,” আলিফ বলল।
বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে, তারা কিছু পুরনো আসবাব এবং উচ্ছিষ্ট দেখতে পেল। বাড়ির অভ্যন্তরে এক অদ্ভুত শীতলতা ছিল, যা তাদের আরেকটু আতঙ্কিত করে তুললো। তানিয়া বলল, “এখানে কোনো কিছু অস্বাভাবিক হতে পারে। সাবধান থাকাটা ভালো।”
বাড়ির ভেতরের শান্তি তাদের কিছুটা স্বস্তি দিল, কিন্তু কুয়াশার মধ্যে নিঃসঙ্গতা তাদের মনে অস্থিরতা সৃষ্টি করছিল। তারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে লাগলো।
পরদিন সকালে, আলিফ ও তার বন্ধুরা বাড়ির চারপাশের এলাকা খতিয়ে দেখতে লাগলো। তাদের মনে হচ্ছিল, কুয়াশাবনে কিছু গভীর রহস্য লুকানো রয়েছে। বাড়ির বাইরে বের হয়ে তারা আশেপাশের অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।
হঠাৎ, মাহিন একটি অদ্ভুত চিহ্ন দেখতে পেল। এটি ছিল একটি প্রাচীন পাথরের উপর খোদাই করা জ্যামিতিক নকশা। “এটি কি কোনো ধরনের সঙ্কেত?” মাহিন জানতে চাইলো।
আলিফ পাথরের কাছে গিয়ে দেখলো। “মনে হচ্ছে, এই চিহ্নগুলো আমাদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পৌঁছানোর নির্দেশ দেয়।”
আলিফের কথার ভিত্তিতে, তারা চিহ্নগুলোর অনুসরণ করতে লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা একটি গোপন গুহার মুখে পৌঁছালো। গুহার ভিতরে প্রবেশ করে, তারা দেখতে পেল কিছু প্রাচীন গ্রন্থ ও চিত্র।
“এগুলো নিশ্চয়ই এখানে কুয়াশাবনের ইতিহাস ও রহস্য সম্পর্কে কিছু বলছে,” আলিফ বলল।
গ্রন্থের মধ্যে কিছু অতিপ্রাকৃত ঘটনার বিবরণ ছিল। সেগুলো পড়তে গিয়ে তাদের মনে হলো, কুয়াশাবনে যে রহস্যপূর্ণ শক্তি রয়েছে, তা অতীতের কিছু অন্ধকার ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত।
“আমরা সম্ভবত এখানে কিছু খুঁজে পেয়েছি। এই গ্রন্থে থাকা তথ্য আমাদের রহস্য সমাধানে সাহায্য করতে পারে,” আলিফ বলল।
গুহার মধ্যে আরও গভীরে প্রবেশ করে, তারা একটি প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেল। মন্দিরের দেয়ালে কিছু প্রাচীন চিত্র ছিল, যা অতিপ্রাকৃত শক্তির আভাস দিচ্ছিল।
“এই মন্দিরের মাধ্যমে কুয়াশাবনের ইতিহাস আরও পরিষ্কার হতে পারে। আমরা সাবধানে এই জায়গা অনুসন্ধান করবো,” আলিফ বলল।
মন্দিরের অভ্যন্তরে কিছু প্রাচীন লেখার চিহ্ন ছিল, যা তাদের গবেষণার জন্য উপকারী হতে পারে। তবে, মন্দিরে প্রবেশ করলেই তারা অস্বস্তিকর অনুভূতি পেতে শুরু করলো।
মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার পর, সন্ধ্যা নেমে এলো এবং কুয়াশা আরও ঘনীভূত হতে লাগলো। আলিফ ও তার বন্ধুরা বুঝতে পারছিল যে, কুয়াশাবনে কিছু অস্বাভাবিক ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্দিরের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে, তারা কিছু পুরনো মূর্তি দেখতে পেল। মূর্তিগুলোর চোখগুলো অদ্ভুতভাবে চকচক করছিল এবং সেগুলো দেখে তাদের মনে ভয় জন্মাচ্ছিল।
“এই মূর্তিগুলো খুব অদ্ভুত মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, এসবের সঙ্গে কোনো অতিপ্রাকৃত শক্তি জড়িত,” আলিফ বলল।
তাদের কিছুক্ষণের মধ্যে একটি ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে হলো। কুয়াশার মধ্যে থেকে অদ্ভুত এক কালো ধোঁয়া বের হতে লাগলো। ধোঁয়াটুকু তাদের চারপাশে ঘুরছিল এবং অস্বাভাবিক গন্ধ ছড়াচ্ছিল।
“আমরা এখানে অনেকক্ষণ থাকতে পারবো না। দ্রুত বের হওয়া উচিত,” আলিফ বলল।
তারা দ্রুত মন্দির থেকে বের হয়ে আসলো, কিন্তু কুয়াশার মধ্যে আবারও পথ হারিয়ে ফেললো। কুয়াশার মধ্যে অদ্ভুত স্রোত ও ভৌতিক কণ্ঠ শোনা যাচ্ছিল, যা তাদের আতঙ্কিত করে তুলছিল।
“এই জায়গা আমাদের জন্য আরও বিপদজনক হতে পারে। সাবধান থাকতে হবে,” আলিফ বলল।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমে এলো এবং কুয়াশাবনের পরিবেশ আরও ভয়াবহ হয়ে উঠলো। আলিফ ও তার বন্ধুরা এক অদ্ভুত গাছের নিচে আশ্রয় নিল। তারা জানতো যে, তাদের বিপদ থেকে বের হওয়া খুবই জরুরি।
রাতের অন্ধকারে, কুয়াশার মধ্যে একটি অদ্ভুত সুর শোনা যাচ্ছিল। “কোনোভাবে বিচ্ছিন্ন হলে সমস্যা আমরা একসাথে থাকবো,” আলিফ সতর্ক করে বলল।
রাতের গভীরে, একটি ভৌতিক চিত্র তাদের সামনে ফুটে উঠলো। কুয়াশার মধ্যে থেকে একটি অদ্ভুত সাদা রূপকার তাদের সামনে আসলো এবং ভয়ঙ্কর চিৎকার দিয়ে উঠলো।
“এটা কি? আমাদের আশেপাশে কিছু ভৌতিক শক্তি রয়েছে,” তানিয়া আতঙ্কিত কণ্ঠে বলল।
আলিফ দ্রুত তার বন্ধুদের একত্রিত করে। “আমরা একে অপরের হাত ধরে থাকবো। কুয়াশার মধ্যে হারিয়ে গেলে বিপদ বাড়বে,” সে বলল।
হঠাৎ, কুয়াশার ঘনত্ব বাড়তে শুরু করলো, আর চারপাশে অন্ধকার আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো। সামির পায়ে অদ্ভুত কিছুর স্পর্শ পেল, যেন মাটি তার পায়ের নিচ থেকে সরে যাচ্ছে। “আমাদের চলতে হবে, এখান থেকে দ্রুত বের হতে হবে!” সামির চিৎকার করে বলল।
কিন্তু সমস্যা আরও ঘনীভূত হতে লাগলো। তারা একটি অদ্ভুত আলো দেখতে পেল, যা তাদের দিকে এগিয়ে আসছিল। সেই আলোর মধ্যে থেকে একটি ছায়ামূর্তি বেরিয়ে আসলো এবং তাদের ঘিরে ধরলো। আলিফ সাহস করে বলল, “আমরা এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না, চলো!”
তারা ছুটতে শুরু করলো, কিন্তু ছায়ামূর্তিটি তাদের তাড়া করতে লাগলো। আলিফ আর তার বন্ধুরা ছুটতে ছুটতে ঘুরপাক খেতে লাগলো, কিন্তু কুয়াশার কারণে পথ খুঁজে পাচ্ছিল না। ছায়ামূর্তিটি ক্রমশ তাদের কাছে চলে আসছিল এবং বাতাসে ভৌতিক কণ্ঠ ভেসে আসছিল।
“এটা একটা ফাঁদ, আমাদের বের হতে হবে!” রবিউল বলল।
তারা জানতো যে, কুয়াশাবন থেকে বের হওয়ার একটাই উপায় হলো, একে অপরের পাশে থাকা। সবাই নিজেদের শক্তি ও সাহস একত্রিত করে ছুটতে থাকলো। তারা শেষ পর্যন্ত একটি পুরনো, ধ্বংসপ্রাপ্ত টাওয়ারের কাছে এসে পৌঁছালো। টাওয়ারের ভেতরে আশ্রয় নেয়ার পর, ছায়ামূর্তিটি তাদের চোখের আড়াল হয়ে গেল।
“আমরা কি নিরাপদ?” লামিয়া জিজ্ঞাসা করলো।
“নিশ্চিত নই,” আলিফ ধীরে ধীরে বলল। “কিন্তু আমাদের এই টাওয়ারে থাকতেই হবে যতক্ষণ না কুয়াশা পরিষ্কার হয়।”
রাতটি দীর্ঘ এবং কষ্টকর ছিল। তারা টাওয়ারের দেয়ালে চেপে বসে ছিল, প্রার্থনা করছিল যে যেন নতুন কোনো বিপদ তাদের দিকে না আসে। তবুও, ভৌতিক সুর আর অদ্ভুত ছায়া যেন তাদের অনুসরণ করছিল।
শেষ পর্যন্ত, রাতের আলো কেটে ভোর হলো। কুয়াশা একটু একটু করে হালকা হতে শুরু করলো।
তারা অনুভব করলো যে, তাদের জীবন এখন নতুন একটি পর্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।
“আমরা বেঁচে আছি, তবে এই কুয়াশাবন আমাদের মনে চিরস্থায়ী দাগ রেখে যাবে,” আলিফ বলল।
তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে সান্ত্বনা পেলো। কুয়াশাবনের রহস্য এখনও সমাধান হয়নি, কিন্তু তারা জানতো যে, এখান থেকে বের হওয়ার সময় এসেছে।
তারা ধীরে ধীরে টাওয়ারের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো এবং সূর্যের আলো তাদের মুখে পড়লো। কুয়াশাবন থেকে বের হয়ে তারা আবার নতুন দিনের মুখোমুখি হলো, কিন্তু কুয়াশার মধ্যে ঘটে যাওয়া সেই ভয়ঙ্কর রাত তাদের স্মৃতিতে চিরকাল থেকে যাবে।
লেখক: মীর মোঃ তানজিরুল ইসলাম (তুষার)
শাহজালাল সরকারি কলেজ
বিজ্ঞান বিভাগ