১৭ Jun ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
সারাদেশ

কক্সবাজার সৈকতে লাখো পর্যটকের মিলন মেলা

১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩

কাজল কান্তি দে,
কক্সবাজার জেলা (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

ছবি: কক্সবাজার লাখো পর্যটকের ভিড়

সরকার পতনের এক দফা দাবীতে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দল সারাদেশে টানা অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। গেল ৪৭ দিনের চলমান অবরোধে কক্সবাজারের পর্যটন ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে।

এই সময়ে এই খাতের ব্যবসায়ী লোকসান গুনেছে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা। তবে সেই ক্ষতের ঘা শুকাতে মলম হিসেবে কাজ করছে এবারের বিজয় দিবস। সংশ্লিষ্ঠরা ধারণা করছেন এবারের বিজয় দিবস উপলক্ষে জেলার পর্যটন খাতে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার লেনদেন হবে। 

পর্যটন সংশ্লিষ্ঠ নানা সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয় পর্যটন মৌসুম। তবে এবারের মৌসুম শুরু হতে না হতেই  ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপির ডাকা টানা অবরোধ কর্মসূচি পর্যটন বিকাশে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাড়ায়। পর্যটক শূণ্য হয়ে পড়ে কক্সবাজার। ফলে ভরা মৌসুমে প্রতিদিন কমপক্ষে এই খাতের ব্যবসায়ীদের গড়ে প্রায় সোয়া ৪ কোটি টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে পর্যটনের এই অন্ধকার যাত্রায় আলো হয়ে আসে রেল। ১ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ঢাকা-কক্সবাজারের পথে রেল যোগাযোগ চালু হলে ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে পর্যটক।

সর্বশেষ এবছরের বিজয় দিবস উপলক্ষে গেল ১৩ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত হোটেল মোটেলের প্রায় ৮০ শতাংশ বুকিং হয়ে গেছে। আর এই থেকেই অবরোধের ক্ষত কিছুটা পোষানোর স্বপ্ন দেখছেন সংশ্লিষ্ঠরা। 
 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচ তারকা হোটেল সহ কক্সবাজারে প্রায় ৫ শতাধিক হোটেল, মোটেল, কটেজ ও ফ্লাট রয়েছে। এসব হোটেলের অধিকাংশই আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বুকিং রয়েছে। এছাড়া ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর সেন্টমার্টিন গামী  জাহাজের কোন টিকেট নাই।
 

এবিষয়ে হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন,  অক্টোবর থেকে পর্যটনের ভরা মৌসুম শুরু হয়। কিন্তু এবার রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভরা মৌসুমেও পর্যটন শুণ্য ছিল কক্সবাজার। তবে আশার কথা হচ্ছে বিজয় দিবস উপলক্ষে গেল ১৩ ডিসেম্বর থেকে বেশিরভাগ হোটেল মোটেল ও কটেজের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। আপাতত বুকিং রয়েছে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। 

তিনি আরো বলেন, গত বুধবার থেকে কক্সবাজারে লাখের কাছাকাছি পর্যটক রয়েছে। বিজয় দিবসের এটি দেড় লাখ হবে বলে আমরা আশাবাদী। 

সভাপতি বলেন, অবরোধের কারনে শুধু মাত্র হোটেল সেক্টরে প্রতিদিন কর্মচারী বেতন, রক্ষনাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ ও জেনারেটর সহ অন্যান্য খাতে একটি হোটেলে কমপক্ষে গড়ে ৩০ হাজার টাকা করে লোকসান গুনতে হয়েছে আমাদের। সেই হিসেবে থাকার আবাসন খাতেই দিনের খরচ বাবদ লস হয়েছে দেড় কোটি টাকা।
 

গতকাল বিকেলে সরেজমিনে সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার পর্যটকের পদভারে মুখরিত সৈকত। এখানে দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি রয়েছে বিদেশীদের আনাগোনা। তাদের কেউ গোসলে ব্যস্ত। কেউ বা বালিয়াড়িতে আকুবুকি করছে। কেউ ব্যস্ত প্রিয়জনের হাত ধরে হাটতে। 

কেউ বা কিটকটে শুয়ে অপলক নয়নে সমুদ্র দেখছে। কেউ বা জেটস্কি নিয়ে ঢেউ ভাঙ্গছে, কেউ চড়ছে ঘোড়ায়। আবার অনেকেই ছুটছে বীচ বাইক নিয়ে। শিশুরাও আপন মনে খেলছে । 
এই নেপাল থেকে আগত পর্যটক বেহরেশ রাজ বলেন, প্রাকৃতিভাবে কক্সবাজার অপরুপ। বিশ্বে এমন শহর বিরল যেখানে সাগর, পাহাড়, ঝর্ণা  একসাথে দেখতে পাবেন। আমি ও আমার সঙ্গীরা এখানকার সৌন্দর্যে মুগ্ধ। তবে এখানে অনেক বেশি কিটকট, ফটোগ্রাফার ও হকারের যন্ত্রনা রয়েছে। 

তাছাড়া ছোট ছোট শিশুরা ভিক্ষার জন্য হাত পাতে । এটিও যন্ত্রনা দায়ক। 
নেপারে কাঠমুন্ডু থেকে আগত আরেক পর্যটক ধীরাজ ঘোরাং বলেন, ১২ অক্টোবর কাঠমুন্ডু থেকে ঢাকায় পৌছেঁছি। ১৩ তারিখ কক্সবাজার এসেছি।

১৫ তারিখ আবার ঢাকা ফেরত যাব। বৃহস্পতিবার মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে টেকনাফ পর্যন্ত গিয়েছি। অপরুপ, মনমুগ্ধকর দৃশ্য দেখেছি। মন বলছে এই শহরে থেকে যাই। কিন্তু এই শহরে সবকিছুর দাম আকাশচুম্বী। আমরা ঢাকা থেকে ফ্লাইটে আসতে গুনেছি দশ হাজার টাকা করে যা দুরত্ব অনুযায়ী অনেক বেশি।
 

এবিষয়ে হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, অবরোধে ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছে পর্যটন শিল্প। রেল চালু হওয়ায় ব্যবসায়ীরা কিছুটা স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললেও পর্যটনের ঘা শুকাতে যেন মলমের ভুমিকা পালন করছে এবারের বিজয় দিবস। 

তিনি আরো বলেন, গেল বিজয় দিবস উপলক্ষে পর্যটন খাতে হাজার কোটি টাকার লেনদেন হলেও এবার তা অর্ধেকে নেমে আসবে। এবার বিজয় দিবসের দিন কক্সবাজারে কমপক্ষে দেড়লাখ পর্যটকের সমাগম হবে বলে ধারণা করছি।

এবিষয়ে বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতির কক্সবাজার জেলা সাধারন সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, পর্যটক সেবার জন্য শুধুমাত্র কক্সবাজার শহরে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৪৫০ টি রেস্তোরা রয়েছে। একেকটি রেস্তোরায় প্রতিদিন গড় ব্যয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। অথচ অবরোধে বিকিকিনি হয়েছে হাজার দশেক টাকা। এই কারণে রেস্তোরা মালিকদের প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে আমাদের সেই লসের ঘা শুকাতে কিছুটা হলেও মলমের কাজ করছে এ বিজয় দিবস। 
 

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরা মালিক সমিতির মুখপাত্র কলিম উল্লাহ বলেন, অবরোধের কারণে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল পর্যটন শিল্প। তবে রেল যোগাযোগ শুরু হওয়ার পর ধীরে ধীরে ঘুরে দাড়াতে শুরু করে পর্যটন শিল্প। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের বিজয় দিবস উপলক্ষে ফের চাঙ্গা হতে শুরু করেছে কক্সবাজারের পর্যটন। 
 

তিনি আরো বলেন, গেল ১৩ ডিসেম্বর থেকে লাখো পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয়েছে সমুদ্র সৈকত। ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর সেন্টমার্টিন পর্যটকে ভরপুর থাকবে। বিজয় দিবসের পরদিন পর্যন্ত তেমনই থাকবে। এরপর কিছুটা কমে গেলেও থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে আবারো সমুদ্র সৈকতে জড়ো হবে পর্যটকরা।
তিনি আরো বলেন, দেখুন অবরোধে গণ পরিবহন বন্ধ থাকে।

এই কারণে পর্যটনে ধ্বস নামছে। আর এই থেকে উত্তোরনের উপায় হচ্ছে কক্সবাজারে রেলের সংখ্যা বাড়ানো। সারাদেশকে যুক্ত করা।
ট্যুর অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি মিজানুর রহমান মিল্কী বলেন, পর্যটন মানেই আবাসিক প্রতিষ্ঠান ও রেস্তোরা নয়।

এর সাথে সংশ্লিষ্ট গণপরিবহন, জাহাজ, ট্যুর অপারেটর, দর্শনীয় স্থান সহ পর্যটন এলাকায় অবস্থিত প্রায়ই সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এভাবে হিসেব করলে গেল ৪৭ দিনে পর্যন্ত এ খাতে কমপক্ষে ২০০ কোটি ক্ষতি হয়েছে।
 

তিনি আরো বলেন, পর্যটন শহরে প্রায় ১৫০ টি ট্যুর অপারেটরের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এতে গড়ে ভরা মৌসুমে তিনজন করে কাজ করলেও এবার অবরোধের কারণে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই কর্মচারী নাই। 

এছাড়া এই সেক্টরে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৭ লাখ ক্ষতি হয়েছে। তবে  রেল চলাচল চালু হওয়া ও বিজয় দিবস এই অবরোধের ক্ষত শুকাতে মলমের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। সরাদেশের রেল নেটওয়ার্কে কক্সবাজারে দ্রুত যুক্ত করার দাবী জানিয়েছেন তিনি।
শহরের পাঁচ তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের মুখপাত্র সায়ীদ আলমগীর বলেন, দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারে লাখের কাছাকাছি পর্যটক আসছে এটি সত্য। তবে এটিকে আপনি মৌসুমের পর্যটক বলতে পারবেন না। টানা ছুটিতে এমনিতে এখানে লোকজন আসে। তাছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠান এখানে তাদের সেমিনার, সভা সহ নানা বার্ষিক কাজ করতে একত্রিত হয়েছে। তাদেরকে পর্যটক বলা যাবেনা। তবুও আপনি বলতে পারেন অবরোধ পর্যটন সেক্টরে যা ঘা তৈরি করেছিল সেই ঘায়ে কিছুটা প্রলেপ দিচ্ছে বিজয় দিবস। 
 

তিনি আরো বলেন, রেল চালু হওয়ার পর মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ জন পর্যটক আসার সুযোগ পাচ্ছে। এটিকে বাড়ানো দরকার। কক্সবাজারের সাথে দ্রুত অন্যান্য জেলার রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি করলেই পর্যটক এমনিতেই বেড়ে যাবে।

Related Article
comment
মোঃ মনির হোসেন বকাউল
29-Sep-23 | 10:09

Good news

মোঃ মনির হোসেন বকাউল
10-Dec-23 | 04:12

Good