২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
ছবি: কক্সবাজার শহরের গোলদীঘির পাড় ইন্দ্রসেন দূর্গাবাড়ী
কক্সবাজার প্রতিটি মণ্ডপে প্রস্তুতি শেষ, মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে কাল শুরু হচ্ছে শারদীয় দূর্গাপুজা
সনাতন সম্প্রদায়ের বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপুজা কাল থেকে শুরু হচ্ছে। মহালয়ার পর থেকে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও আজ ২৭ সেপ্টেম্বর দেবীর বোধনের মধ্যদিয়ে শুরু হচ্ছে দূর্গাপুজার মূল অনুষ্ঠানমালা। দেবী দুর্গার আগমনী সুরে ভরপুর হয়ে উঠছে শহর ও গ্রামের প্রতিটি পূজামণ্ডপ। শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা নির্মাতা কারিগররা। দিন-রাত এক করে প্রতিমা রঙ ও সাজসজ্জার কাজে প্রাণপাত করছেন তারা। কাঠামো তৈরি থেকে শুরু করে প্রতিমায় রঙ তোলা, অলঙ্কার বসানো সবকিছুতেই চলছে শেষ মুহূর্তের ছোঁয়া। সারা দেশের ন্যায় কক্সবাজার জেলার সদর, চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, ঈদগাঁও, কুতুবদিয়াসহ ৮টি উপজেলার ৪টি পৌরসভায় এবং জেলার ৭১টি ইউনিয়নের ৩১৭টি পূজামণ্ডপে সনাতনী সম্প্রদায় দুর্গাপূজা পালন করছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
জেলা পূজা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক স্বপন দাশ বলেন, দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কেউ যেন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সেজন্য পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। যেকোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বর অথবা নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করার জন্য পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়াও পূজা চলাকালে সিসিটিভি সক্রিয় রাখা, প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক দ্বারা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য পূজা উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্গাপূজা চলাকালে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশের পাশাপাশি সোয়াট, ক্রাইম রেসপন্স টিম (সিআরটি) ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে।
কক্সবাজার শহরের গোলদীঘির পাড় ইন্দ্রসেন দূর্গাবাড়ী, শ্রীশ্রী কৃষ্ণানন্দধাম মন্দির, সরস্বতী বাড়ী, কালী বাড়ী, বঙ্গপাহাড়, বিজিবি ক্যাম্প, হরিজন পাড়া সহ বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, পূজামণ্ডপে সাজসজ্জার কাজ ইতোমধ্যে প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রতিমা বিসর্জনের দিন পর্যন্ত দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে প্রস্তুত আয়োজকরা। এছাড়াও জেলা শহরের পাশ্ববর্তী ইউনিয়ন খুরুশকুল, ঝিলংজা, ভারুয়াখালী, পিএমখালী, চৌফলদন্ডী এলাকায়ও দুর্গামন্ডপগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা শিল্পিরা।
প্রতিমা শিল্পীরা বলেন, মহালয়ার পর থেকেই আমরা দিনরাত কাজ করছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সবকিছু শেষ করতে হবে। আজ সায়ংকালে শ্রীশ্রী দেবীর বোধন। তাই আজকের মধ্যেই সমস্ত কাজ সমাপ্ত করতে হবে।
এদিকে, শারদীয় দূর্গাপূজাকে ঘিরে পূজার শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী সবার মধ্যে চলছে উৎসবের আমেজ। নতুন পোশাক, সাজগোজ আর পূজা মণ্ডপ ঘুরে বেড়ানো সব মিলিয়ে দুর্গাপূজাকে ঘিরে জেলায় সৃষ্টি হয়েছে এক ভিন্ন মাত্রার আনন্দঘন পরিবেশ।
পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আসন্ন দুর্গাপূজা নিরাপদে সুন্দরভাবে উদযাপিত হবে। পুলিশ পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থায় থাকবে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে পুলিশ তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে জেলা, উপজেলা ও পৌর পূজা উদযাপন পরিষদ সহ সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দের সাথে পুলিশ প্রশাসনের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে পুলিশ প্রাক-পূজা, -পূজা, পূজা চলাকালীন এবং প্রতিমা বিসর্জন ও পূজা পরবর্তী তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে পূজাকেন্দ্রিক পুলিশের নিরাপত্তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন আরও বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আসন্ন দুর্গাপূজা উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে নিরাপদে নির্বিঘ্নে উদযাপিত হবে। এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন পুলিশ প্রশাসন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়েছেন, নবাগত জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান কক্সবাজার শহরের পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া রামু উপজেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজার মণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন নবাগত জেলা প্রশাসক মো: আ: মান্নান। তিনি জেলা পুজা কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেছেন এবং মন্ডপের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন বলে জানানো হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
জেলা প্রশাসন জানান, জেলাজুড়ে যথাযথ মর্যাদায় এবং সুষ্ঠ ও উৎসব মুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনের ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।নিরাপত্তা ব্যবস্থায়ও সকল আইন শৃংখলা বাহিনী ও পূজা কমিটির সাথে ইতিমধ্যে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদারে সকল আইন-শৃংখলাবাহিনীর কঠোর নজরদারী থাকবে। পাশাপাশি কোনো ধরনের গুজব ছড়ানো ও অপ্রীতিকর ঘটনা যেনো না ঘটে সেদিকেও সকলকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি পূজা মণ্ডপে পূজা কমিটির নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিমের ২৪ ঘণ্টার পাহারার ব্যবস্থা, নিজস্ব জেনারেটর ব্যবস্থা,সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং প্রতিমা তৈরির সময় ও পূজা শেষে মধ্য রাত থেকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে সংশ্রিষ্টদের প্রতি আহবান জানান জেলা প্রশাসন।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শংকর পাল মিঠু বলেন, কক্সবাজার জেলায় এবছর ৩১৭টি পূজা উদযাপিত হবে। যারমধ্যে ১৫২টি প্রতিমা পূজা ও ১৬৫টি ঘট পূজা। নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক চলছে। পূজামণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি প্রতিটি মণ্ডপে থাকবে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীও। এছাড়া পূজা মন্ডপে ভক্তিমূলক ও ধর্মীয় গান ছাড়া অপ্রাসঙ্গিক গান বাজনা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রাখার সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, আজ ২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার মহাপঞ্চমী, ২৮ সেপ্টেম্বর রবিবার মহাষষ্ঠী, ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার মহা সপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার মহা অষ্টমী, ১ অক্টোবর বুধবার মহা নবমী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীর মধ্যদিয়ে ২০২৫ ইং সনের দুর্গাপূজার সমাপ্তি ঘটবে।
ধন্যবাদ 🌸💚
Good news