১৩ Jul, ২০২৪
ছবি: হরিণাকুন্ডু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
অ্যাম্বুলেন্স আছে, তবে নেই চালক। এমন বেহাল দশা ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। যার কারণে গত এক বছর ধরে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হরিণাকুণ্ডুবাসী।
একটিমাত্র অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও, চালক না থাকায় আসছেনা কোন কাজে। ফলে জরুরি ভিত্তিতে রোগী আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বজনদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগের সামনে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও মিলছেনা ডাক্তারের দেখা।
শত শত রোগীর চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন মাত্র তিনজন চিকিৎসক। এছাড়াও ওয়ার্ডগুলোতে শয্যা সংকটে মেঝেতে রয়েছেন অনেক রোগী।
বহির্বিভাগের সামনে ৫টাকার টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আমেন খাতুন নামে এক বৃদ্ধা মহিলা। তিনি জানান, সকাল ৯টায় এসেছি, এখনো ডাক্তারের কাছে যেতে পারিনি। যার কারণে অপেক্ষায় রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের ২৮টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট ও ১৮ জন মেডিকেল অফিসার।
অথচ কর্মরত আছেন মাত্র ১১ জন। জুনিয়র কনসালট্যান্টের ১০ পদের মধ্যে তিনজনের নিয়োগ থাকলেও দু'জন ডেপুটেশনে অন্যত্র কর্মরত।
একজন কনসালট্যান্ট দিয়ে নানা ধরনের অস্ত্রোপচার সেবা দেওয়া হয়। ১৮ জন মেডিকেল অফিসারের পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ১০ জন। এর মধ্যে চার-পাঁচ চিকিৎসক প্রশিক্ষণসহ নানা কাজে প্রায়ই বাইরে থাকেন। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
এদিকে রোগী বহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও এক বছর ধরে নেই চালক। ফলে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিনিয়ত এসব ভোগান্তি সহ্য করেই রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাধ্য হয়ে তিন-চার গুন ভাড়া বেশি দিয়ে মাইক্রোবাস-বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে জেলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটছেন স্বজনরা।
টানা ১বছর অতিবাহিত হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স সেবা দিতে না পাড়ায় ক্ষোভ বাড়ছে সেবা প্রত্যাশীদের। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি, বারবার চাহিদা পাঠিয়েও চালক ও চিকিৎসক পাওয়া যায়নি।
২০০৩ সালে ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। পরে ২০০৭ সালে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। শুরু থেকেই একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সেবা দেওয়া হচ্ছিল রোগীদের।
এরই মধ্যে গত বছরের জুলাই মাসে চালক শফিউদ্দীন অবসরে যান। তাঁর পরিবর্তে কোনো চালক নিয়োগ না হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় সেবা। ফলে গ্যারেজে পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ার উপক্রম অ্যাম্বুলেন্সটি।
বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রতিদিন অন্তত ৭৫০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তিন-চারজন চিকিৎসক দিয়ে এত মানুষের সেবা দিতে তাদের হিমশিম খেতে হয়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে একটানা আড়াইটা-৩টা পর্যন্ত চিকিৎসা দেন। তিনি প্রতিদিন অন্তঃত সাড়ে ৩৫০ রোগী দেখেন। রোগীর
স্বজনের ভাষ্য, হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন বেশ কিছু রোগী জেলা সদরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে বলা হয়। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা থাকলে মাত্র ২০ টাকা প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া দিয়ে বাইরে রোগী নিয়ে যাওয়া যায়। এতে অর্থ সাশ্রয়ও হয়, ভোগান্তিও কম হতো।
রেফার্ড হওয়া এক রোগীর স্বজন শাহিন হোসেন জানান, অবস্থার অবনতির কারণে তার আত্মীয়কে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সের চালক না থাকায় তাদেরকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে একটি মাইক্রোবাস ২ হাজার ২০০ টাকায় ভাড়া করে কুষ্টিয়া যেতে হয়েছে।
তিনি বলেন, জরুরি মূহূর্তে টাকাটা বড় কথা নয়। দ্রুত পৌঁছানোটাই বেশি প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সের চালক না থাকাটা দুঃখজনক।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জামিনুর রশিদ বলেন, ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সব সময় ৭০-৮০ জন রোগী ভর্তি থাকে। এতে চিকিৎসাসেবা দিতেও হিমশিম খেতে হয় তাদের। অ্যাম্বুলেন্সের চালকের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। তবে এসব সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে বলেও জানান তিনি।
Good news
Good