২১ নভেম্বর, ২০২২
ছবি: নিজেদের ছবিসহ প্রিয় দলের খেলোয়াড়দের ছবির ব্যানার শোভা পাচ্ছে সড়কে।
বাংলাদেশের মানুষের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা বেশ পুরোনো। অর্থাৎ স্বাধীনতারও আগে থেকে ক্লাব ফুটবল বেশ জনপ্রিয় ছিল এই অঞ্চলে। সেটা অব্যহত ছিলো ৯০ দশক পর্যন্ত৷ বর্তমান প্রজন্মের কাছে ব্যাপারটা একটু অবিশ্বাস্যই মনে হতে পারে৷ অথচ সে সময় আবাহনী-মোহামেডানের একটা ম্যাচকে কেন্দ্র করে দুই ভাগে ভাগ হয়ে যেত পুরো দেশ।বাড়িতে বাড়িতে উড়তো দুদলের পতাকা। খেলাকে কেন্দ্র করে ঝগড়াঝাটি, এমনকি মারামারি পর্যন্ত হতো আবাহনী-মোহামেডান সমর্থকদের মধ্যে। বাড়ির ছাদ, বারান্দা, কিংবা পাড়া মহল্লার অলিগলি সবখানে পতপত করে উড়তে থাকে হাজার হাজার মাইল দূরের দেশ ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি কিংবা স্পেনের পতাকা।
এই তো সপ্তাহ দুয়েক আগে চোখ আটকে গেলো পাশের বাসার ছাদে৷ বিশাল আকৃতির স্পেনের পতাকা। স্পেনের পতাকার উপরে অবশ্য ছোট করে বাংলাদেশের পতাকাও আছে। কিন্তু আমি খানিকটা অবাক হয়েছি, পতাকাটা স্পেনের বলে৷ কারণ বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ যেখানে আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলে বিভক্ত, সেখানে স্পেনের ভক্তের এমন সরব উপস্থিতি!
বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে উন্মাদনা যে শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক, তা কিন্তু নয়; ফেনী শহরে উন্মাদনা চোখে পড়ার মতো। পাড়া-মহল্লায়, শহরের রাস্তায়, বাসার ছাদে প্রিয় দলের ব্যানার ও পতাকা শোভা পাচ্ছে। শহরের প্রায় সব মহল্লায় প্রিয় দলের খেলা বড় পর্দায় উপভোগ করার জন্য প্রজেক্টরের ব্যবস্হা করা হয়েছে। সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে গিয়েও দেখতে পেলাম সমর্থকদের উন্মাদনার কমতি নেই গ্রামের রাস্তায় রাস্তায় ও বাড়িতে, বাজারে শোভা পাচ্ছে প্রিয় দলের পতাকা ও ব্যানার।
মোটকথা বিশ্বকাপের নিজের পছন্দের তথা প্রিয় দলের খেলার সময় যত ঘনিয়ে আসছে, উন্মাদনা ততোই বাড়ছে। আমার ধারণা বিশ্বকাপ নিয়ে এই যে তর্কাতর্কি এটা শুধু নিজের বাসা-বাড়ির
লোকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং অফিস-আদালত, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, চায়ের আড্ডায় ও খেলা যারা পছন্দ করে এমন সবার মধ্যে।
হাজার হাজার মাইল দূরের অচেনা-অজানা এই দেশগুলোকে নিয়ে বাংলাদেশিদের এই যে আবেগের বহি:প্রকাশ, তা দেখে প্রায়ই মনে প্রশ্নে জাগে, কেন এমন আবেগী আর জোরালো সমর্থন৷ শুধু কি একজন মেসি, নেইমারের কারণেই এতোটা মাতামাতি, নাকি অন্য কিছু!
এই কারণ খোঁজার আগে চলুন জানার চেষ্টা করি, ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের এই যে আগ্রহ আর উন্মাদনা ঠিক কবে থেকে শুরু। এটা একেবারে দিন তারিখ নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। তবে বাংলাদেশের মানুষের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা বেশ পুরোনো৷ অর্থাৎ স্বাধীনতারও আগে থেকে ক্লাব ফুটবল বেশ জনপ্রিয় ছিল এই অঞ্চলে৷ সেটা অব্যহত ছিলো ৯০ দশক পর্যন্ত।
কিন্তু ফুটবল কর্তাদের সূদুর প্রসারী কোনো পরিকল্পনা নাই! এই কারণ খোঁজার আগে চলুন জানার চেষ্টা করি, ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের এই যে আগ্রহ আর উন্মাদনা ঠিক কবে থেকে শুরু। এটা একেবারে দিন তারিখ নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। তবে বাংলাদেশের মানুষের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা বেশ পুরোনো৷ অর্থাৎ স্বাধীনতারও আগে থেকে ক্লাব ফুটবল বেশ জনপ্রিয় ছিল এই অঞ্চলে৷ সেটা অব্যহত ছিলো ৯০ এর দশক পর্যন্ত।
জাতিগত ভাবে আমরা বাংলাদেশীরা এমনিতেই খানিকটা উৎসব প্রেমী। উপলক্ষ পেলে, হাজারো সমস্যার মধ্যেও, আনন্দ খুঁজি নানাভাবে৷ যা অবশ্যই ইতিবাচক৷ তাই চার বছর পরপর আসা এই বিশ্বকাপ যদি কিছুসময়ের জন্যে হলেও কমিয়ে আনে শত্রু আর মিত্রের দূরত্ব, তবে আনন্দেই কাটুক না আগামী একমাস। তাতে জয় হবে ফুটবলেরই।