৩০ এপ্রিল ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
আন্তর্জাতিক

এরদোয়ানের বিজয়ে কি পেতে যাচ্ছে মুসলিম বিশ্ব?

১৪ মে, ২০২৩

আসাদুজ্জামান রিপন,
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রতিনিধি

ছবি: একটি মসজিদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোগান

১৪ মে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনকে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন বলছে পশ্চিমা মিডিয়া। শুধু তুরস্ক নয় মুসলিম বিশ্বের জন্যও একটি টার্নিং পয়েন্ট হবে এই নির্বাচন। এরদোয়ানের জয়-পরাজয়ের সাথে জড়িত হয়ে আছে একবিংশ শতাব্দিতে ইসলামি সভ্যতার উত্থান ও পতন। কিভাবে? ৮ টি পয়েন্টে এখানে তুলে ধরছি।

১. ১৯২৩ সালে খিলাফত পতনের পর থেকে মুসলিম বিশ্ব অবিভাবকহীন। ৫৬টি মুসলিম দেশের মধ্যে এখনো তুরস্কই মুসলিম জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার মতো প্রাতিষ্ঠানিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও ভৌগলিক অবস্থানের অধিকারী। ঘাটতি ছিল শুধু ইসলামি নেতৃত্বের।

এরদোয়ানের উত্থানে সেই অভাব পূরণ হয়েছে। তবে সেক্যুলার সামরিক বাহিনীর তৈরী করা সংবিধানে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের হাতে সীমিত ক্ষমতা ছিল। এরদোয়ান কয়েকদফা সংবিধান সংশোধন করেছে। তবে ২০২৩ সালে নির্বাচিত হলে একটি নতুন সংবিধান নিয়ে নতুন চেহারায় ফিরবে তুরস্ক। ধারণা করা হচ্ছে সেখানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামসহ আরো অনেক বিপ্লবী পরিবর্তন আনা হবে।

২. মুসলিম বিশ্বের সামরিক অভিভাবক তুরস্ক: গত ১০০ বছরের বিভিন্ন মুসলিম দেশের উপর যে বিদেশী আগ্রাসন চলেছে তাকে বন্ধ করার মতো কোন শক্তিশালী মুসলিম দেশ ছিলো না। যাদের শক্তিশালী আর্মি আছে তারাও সমরাস্ত্রের জন্য পশ্চিমাদের উপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু গত ১০ বছরে তুরস্ককে সমরাস্ত্রে ৮০ ভাগ স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন এরদোয়ান।

এবার নির্বাচিত হলে তা ১০০ ভাগে চলে আসবে। তুরস্ক নিমার্ন করেছে নিজস্ব ট্যাংক, কামান, মিসাইল, এয়ার ডিফেন্স, সাবমেরিন, ড্রোণ, বিমানবাহী জাহাজ। ২০২৮ সালের মধ্যে নির্মান শেষ হবে বৃহদাকার বিমানবাহী রনতরী। সেখানে মোতায়েন হবে তুরস্কে নিজস্ব ফিফথ জেনারেশন ফাইটার জেট। ফলে তুরস্ক মুসলিমদেশ গুলোকে রক্ষার করার ক্যাপাসিটি অর্জন করবে। সিরিয়া, কাতার, আজারবাইজান ও লিবিয়ার মুসলমানদের পর এবার ফিলিস্তিনি উইঘুরসহ নির্যাতিত মুসলমানদের পাশে দাড়াতে পারবে।

৩. ডিপ্লোমেটিক সহায়তা: বিবাদ-বিভাজনে বিভিক্ত মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশেই রক্ত ঝরছে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে। গত ২৩ বছরের এরদোয়ান অনেক মুসলিম দেশের সংকট নিরসনের নিরলস কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়কে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। বিশ্ব শান্তিতে বড় ভূমিকা পালন করার মতো দক্ষতা ও প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা অর্জন করেছে তুরস্ক।

৪. পারমানবিক শক্তি: তুরস্কের আদানা শহরে প্রথম পারমানবিক স্থাপনার কাজ শেষ প্রান্তে। সিনপ শহরে চলছে ২য় পারমানবিক প্রকল্পের কাজ। অচিরেই পারবমানবিক শক্তিধর তুরস্কের আবির্ভাব হবে। এই শক্তি মুসলিম বিশ্বের প্রতিরক্ষাসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার হবে।

৫. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিখাতে তুরস্কের বিপ্লব: এরদোয়ানের নেতৃত্ব গত ১০ বছরে তুরস্কের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে এক অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করছে তুরস্ক। গত রমজানের আমার আসেলসান, রকেটসানের মতো তুরস্কের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সফরের সুযোগ হয়েছে। নিজের চোখে দেখে এসেছি যে, তুরস্ক এখন ল্যাপটপ, ফোন, গাড়িসহ সব ধরনের যন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় মাইক্রোচিপ তৈরী করছে। আগামীর বিশ্ব বন্দি এই চিপের ভেতর। বিশ্বের অল্প কয়েকটি দেশ চিপ তৈরী করতে পারে। তুরস্ক তার একটি।

৬. সাংস্কৃতিক বিপ্লব: তুরস্কে সরকারী চ্যানেলগুলোতে আগে পশ্চিমাদেশ থেকে আমদানি করা ও নিজেদের তৈরী অর্থহীন ও অশ্লীল নাটক-সিনেমা চালানো হত। সেই স্রোত পাল্টে দিচ্ছে এরদোয়ান। তুরস্কে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে এরতুরুল, পাইতাহ, কুরতুলুস উসমানের মতো সিরিয়াল তৈরী করেছে। ইতিমধ্যে তুরস্ক নেটফ্লিক্সের বিকল্প হিসেবে বাজারে এনেছে তাবি নামক ডিজিটাল প্লাটফর্ম। একই সাথে ৫ টি ভাষায় বিনামূল্যে দেখা যাচ্ছে তাবি। ইবনে সীনা, ফাতিহ সুলতানদের মতো চরিত্রগুলোকে জীবন্ত ভাবে তুলে ধরছে তরুন সমাজের সামনে।

৭. এরদোয়ানের যুগে তুরস্কের স্বর্ণের রিজার্ভ ছাড়িয়ে গেছে ইংল্যান্ডকে। নিজেদের দেশের স্বর্ণখনির তোলা স্বর্নের সাথে সাথে বিদেশী বাজার থেকেও প্রতিবছর স্বর্ণ কিনে রিজার্ভ বাড়াচ্ছে এরদোয়ান। যে কোন সময়ে ডলার পতন হলে নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নেতৃত্ব দিতে চায় তুরস্ক।

৮. উচ্চ শিক্ষায় সুবিধা: এরদোয়ানের আমলে তুরস্কের প্রতিটি প্রদেশে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। মুসলিম বিশ্ব থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার বিদেশী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে তুরস্কে। বিদেশী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। জ্ঞান ও বিজ্ঞানকে একসাথে আয়ত্ব করার মাধ্যমে নতুন করে ইসলামী সভ্যতার উত্থানে পরিকল্পিতভাবে কাজ করে গেছে এরদোয়ান।

শেষ কথা গত ৮০ বছর তুরস্ক পশ্চিমাদের দাসত্ব করতে বাধ্য হয়েছিল। নিজের জাতির উপর জুলুম করেছে পশ্চিমাদের পুতুল সরকারগুলো। মাত্র ২১ বছরে এরদোয়ান ১০০ বছরের ফেলে রাখা কাজ করে গেছে। আগামী ১০০ বছর তুরস্ক যাতে মুসলিম বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারে তার অবকাঠামোই তৈরী করা হয়েছে গত ২১ বছর ধরে। ২০২৩ সালে নির্বাচিত হতে পারলে লিবারেলিজম ও সেক্যুলারিজমের খোলস ছেড়ে আসল পরিচয়ে ফিরবে তুরস্ক। আয়া সোফিয়ায় নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করার মাধ্যমে সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে এরদোয়ান।

তাইতো সারা বিশ্বের মুসলমানরা আজ দোয়া করছে এরদোয়ানের জন্য। দোয়া হচ্ছে মক্কা-মদীনায়। চারদিকে আজ ইসলামের উত্থানের গুঞ্জরন।

লেখক: জাহিদুল ইসলাম সরকার 

Related Article