০৩ মার্চ, ২০২৩
ছবি: নিহত সাইফুল আলম
মোবাইলে টিকটক ভিডিও রেকর্ড করাকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জের ছাতকে দু’গ্রামবাসীর সংঘর্ষে সাইফুল আলম নামের এক ব্যক্তি নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। গুরুতর আহত অন্তত ২৫ জন কে ভর্তি করা হয়েছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে।
বুধবার রাতে পৌর শহরের ভাসখালা ও কালারুকা ইউনিয়নের মুক্তিরগাঁও গ্রামবাসীর মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত সাইফুল আলম মুক্তিরগাঁও গ্রামের চমক আলীর পুত্র। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রন করতে ছাতক ও দোয়ারা থানার পুলিশ যৌথভাবে শতাধিক রাউন্ড টিআরসেল ও ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে। প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপি সংঘর্ষে ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে সড়কের উভয় পাশে শতাধিক যাত্রী ও মালবাহী গাড়ি আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
রাত প্রায় ১১টার দিকে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আসলে যান চলাচল আবারো স্বাভাবিক হয়ে উঠে। সংঘর্ষের ঘটনায় ২০ জনকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছাতক সুরমা নদীর উপর নবনির্মিত সুরমা ব্রীজ ও ব্রীজের সংযোগ সড়কে প্রায়ই বিভিন্ন এলাকা থেকে যুবক-যুবতীরা আসে টিকটক ভিডিও ধারনের জন্য। এ নিয়ে প্রায়ই স্থানীয়দের সাথে টিকটককারীদের বাক-বিতন্ডা ঘটেছে। বুধবার সন্ধ্যায় ব্রীজের সংযোগ সড়কের গোল চত্ত্বরে এক জোড়া যুবক-যুবতী টিকটক ভিডিও ধারন করছিল। যুবক-যুবতিকে টিকটক ভিডিও করতে বাধা দিয়ে তাদের কাছে অর্থ দাবী করে স্থানীয় কতিপয় বখাটে। এ নিয়ে ভাসখালা গ্রামের আহাদ মিয়ার পুত্র আব্দুর রাজ্জাক, আহমদ আলীর পুত্র মান্নাসহ তাদের সহযোগিদের সাথে মুক্তিরগাঁও গ্রামের আব্দুস সোবহানের পুত্র মামুনের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এক পর্যায়ে মামুনকে প্রতিপক্ষরা ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে প্রতিপক্ষরা। এ ঘটনার জের ধরে রাতে উভয় গ্রামের মানুষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তুমুল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপি দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের শতাধিক লোক আহত হয়। সংঘর্ষকারীরা গোলচত্ত্বরে এলাকায় বেশ কয়েকটি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এসময় একটি পিকআপ ভ্যান, একটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়।
খবর পেয়ে ছাতক থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু ক্রমেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলে দোয়ারা থানা পুলিশও ঘটনাস্থলে এসে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চালায়। এসময় শতাধিক রাউন্ড ফাঁকাগুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
সংঘর্ষে গুরুতর আহত সাইফুল আলম, মামুন মিয়া, সজিব আহমদসহ অন্তত ২০ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় সাইফুল আলমের মৃত্যু হয়। রাজ্জাক, জসিম, কুটিলাল, আফতাব উদ্দিনসহ অন্যান্য আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে বর্তমানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
সংর্ঘষে জড়িত থাকার ঘটনায় বাঁশখলা এলাকার শাকিব মাহমুদ (২৫), আলী কাউছার (২১), মোশারফ হোসেন হেলাল (১৮), ছায়েদ আহমদ লিমন (১৮), রাসেল মিয়া (২৪), সালমান(২৫), ছেরাগ আলী(৫৭), রহিম আলী(৫৮), মোতাছির আলী(৬৮), আহাদ আলী(৬৩), সুরত আলী(৭০), দুলন (৩৮), নজির আলী(৭০), মামুন মিয়া (১৯), যোবায়েল আহম্মদ ইমন(২০), রাজিব মিয়া (২২), আব্দুস শহিদ (৩৬), লোকমান মিয়া ও ব্রাহ্মনগাঁও গ্রামের আবু বক্কর (২০)কে আটক করে সুনামগঞ্জ জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে। এদিকে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত থেকেই বাঁশখলা গ্রামের নারী-পুরুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।
সুনামগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার, ছাতক সার্কেল রনজয় চন্দ্র মল্লিক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে “তারুণ্য ২৪”কে জানান, '১৪ রাউন্ড টিআরসেল, ৬৯ রাউন্ড রাবার বুলেট এবং ৩১ রাউন্ড সীসা কার্তুজ ব্যবহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে।'