২৬ অক্টোবর, ২০২২
ছবি: অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী ড. জহিরুল আলম সিদ্দিকী (মুহাম্মদ জে. এ. সিদ্দিকী শামীম)।
’'হৃদরোগের পর দ্বিতীয় বড় ঘাতক রোগ ক্যান্সার। প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ক্যান্সারের চিকিৎসায় ১০ থেকে ৪০-৫০ লাখ টাকা খরচ হয়। খুব ব্যয়বহুল চিকিৎসা। টাকা খরচ করেও অনেক সময় রোগীকে বাঁচানো যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ক্যান্সার যখন ধরা পড়ে, তখন শুধু মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ক্যান্সার নিরাময় করা সম্ভব।” কথাগুলো অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. জহিরুল আলম সিদ্দিকীর (মুহাম্মদ জে. এ. সিদ্দিকী শামীম)।
শুধু কথাগুলো বলেই দায়িত্ব শেষ করেননি তিনি। উদ্ভাবনও করেছেন প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্তের ডিভাইস। ড. সিদ্দিকী মূলত প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার শনাক্তকরণের ডিভাইস ডেভেলপমেন্টের ওপর কাজ করছেন। কম টাকায় কিভাবে ক্যান্সার চিকিৎসা করা যায়। দরিদ্র দেশগুলো বেশি টাকা ব্যয় করেও এর চিকিৎসা করাতে পারেন না।
সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের ছোট্ট গ্রাম ধর্মপাশার জয়শ্রী গ্রামের সন্তান ড. জহিরুল আলম সিদ্দিকী মুহাম্মদ জে. এ. সিদ্দিকী (শামীম)। ধর্মপাশার জয়শ্রীর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের ছেলে মুহাম্মদ জে. এ. সিদ্দিকী (শামীম)। গ্রামের স্কুলে শামীম প্রাথমিক শিক্ষাটা টেনেটুনে শেষ করার পর শুরু হয় মাধ্যমিক। সিলেটের রেবতি-রমণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৩ সালে স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন।
১৯৯৫ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে প্রায় সাড়ে আটশত মার্কস পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক, ২০০১ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর করেন। এরপর পেয়ে যান কোরিয়া যাওয়ার সুযোগ। ২০০৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার পুসান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেন 'ব্রেইন কোরিয়া-২১' নামের শ্রেষ্ঠ গবেষণা পদক। প্রতিবছর কোরিয়ার বিভিন্ন বিজ্ঞান সাময়িকীতে যেসব গবেষণা নিবন্ধ ছাপা হয়, তার ওপর ভিত্তি করেই দেওয়া হয় এই পদক।
২০০৭ সালে পিএইচডিতে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য পুসান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা ছাত্র নির্বাচিত হন শামীম। বিষয় বিশ্লেষণী রসায়ন। এরপর তিন বছর অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এলান এম বন্ডের কাছে পোস্ট ডক্টরাল করেন। ২০১০ সালে ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট ফর বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এবং ন্যানো টেকনোলজিতে (এআইবিএন) যোগ দেন। সেখানে জ্যেষ্ঠ গবেষক ও সহযোগী দলনেতা হিসাবে কাজ করেন ২০১৫ সাল পর্যন্ত।
২০১৫ সাল থেকে আমাদের শামিম অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে কাজ করছেন । বর্তমানে তাঁর অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৭ জন গবেষক মানুষ ও উদ্ভিদের বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের সহজলভ্য পদ্ধতি ও ডিভাইস উদ্ভাবনের ওপর কাজ করছেন ।