৩০ এপ্রিল ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
রাজনীতি

বিএনপির ৭ এমপির পদত্যাগ ঘোষণা

১১ ডিসেম্বর, ২০২২

জুয়েল রানা,
স্টাফ রিপোর্টার

ছবি: বিএনপির ৭ এমপি

দেশে ‘চরম স্বৈরশাসন’ চলছে অভিযোগ করে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির সাত সংসদ সদস্য। শনিবার দলের গণসমাবেশ থেকে পদত্যাগের এই ঘোষণা আসে। বিএনপির এই আইনপ্রণেতারা জানান, তারা পদত্যাগপত্র সংসদে ইমেইল করে পাঠিয়েছেন। রোববার সংসদে গিয়ে তারা পদত্যাগ পত্র জমা দেবেন। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়।

সংসদের বিএনপির সংসদ সদস্যরা হলেন- ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান, বগুড়া-৪ এর মোশারফ হোসেন, বগুড়া-৬ এর গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ২ আসনের আবদুস সাত্তার ভুঞা এবং সংরক্ষিত আসনের রুমিন ফরহানা।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ভোটে অংশ নিয়েছিল। জোটের অংশীদার গণফোরামের দুই সদস্য আগেই শপথ নেন। ওই সময় তাদের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাস ভঙ্গের’ অভিযোগ তুলেছিল বিএনপি। ওই নির্বাচনে বিএনপির ছয়জন বিজয়ী হন, পরে সংরক্ষিত নারী আসনের একটি পায় দলটি।

নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে শুরুতে বিএনপি জানিয়েছিল, তারা সংসদে যাবে না। পরে সিদ্ধান্ত বদলে শপথ নেন দলটির সংসদ সদস্যরা। চার বছর পর সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে সংসদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল দলটি।

সংবিধানের ৬৭(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, “কোন সংসদ-সদস্য স্পিকারের নিকট স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন, এবং স্পিকার- কিংবা স্পিকারের পদ শূন্য থাকিলে বা অন্য কোন কারণে স্পিকার স্বীয় দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ডেপুটি স্পিকার- যখন উক্ত পত্র প্রাপ্ত হন, তখন হইতে উক্ত সদস্যের আসন শূন্য হইবে।” অর্থাৎ, স্পিকারের কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দেয়ার পর তাদের আসন শূন্য হবে। সমাবেশে ঠাকুরগাওয়ের জাহিদুর রহমান বলেন, ‘জনগণকে সামনে রেখে পদত্যাগের ঘোষণা দিলাম। ভেবেছিলাম সংসদে জনগণের কথা বলব। কিন্তু, চেষ্টা করেও কাজ হয়নি। জালেম সরকারকে পতনের দাবি জনগণের।’

২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর নানা নাটকীয়তার মধ্যে বিএনপির বিজয়ীদের মধ্যে প্রথম শপথ নেন জাহিদুর রহমান।

পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, ‘আমি নির্বাচিত এমপি, কিন্তু অনির্বাচিত সংসদ। সাড়ে তিন বছর এই সংসদে ছিলাম। এই সংসদে জনগণের কোনো কথা আওয়ামী লীগ বলে নাই। আওয়ামী লীগ এই সংসদকে বানিয়েছে বন্দনার বাক্স। যেখানে শেখ হাসিনার বন্দনা ছাড়া আর কোনো বন্দনা চলে না।

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সংসদ জনগণের সংসদ নয়। যে কারণে আজ লক্ষ লক্ষ জনতা জড়ো হয়েছে, কারণ একটাই। এই সংসদকে জনতার সংসদ বানাতে হবে। এই সংসদে আসতে হবে জনগণের অধিকার নিয়ে। জনগণের ভোটে নির্বাচিতরা আসবেন এই সংসদে। আমরা সাতজন এমপি এই সংসদে আছি। আমাদের স্থায়ী কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই বিশাল জনসমুদ্রকে সাক্ষী রেখে আমরা সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা করলাম।’

বগুড়ার মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সারা দেশে মানুষকে পাখির মতো গুলি করে মারা হচ্ছে। যে গণতন্ত্রের জন্য দেশ স্বাধীন করা হয়েছিল, তা লুন্ঠিত। সরকার কোনো কিছুকে তোয়াক্কা করে না। এই অবৈধ সরকারের সঙ্গে আমরা আর নাই।

চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের হারুনুর রশীদ দেশের বাইরে থাকায় সমাবেশে যোগ দিতে পারেনি।

রুমিন ফারহানা বলেন, ‘এখনো বিএনপি খেলা শুরু করেনি। তার আগেই সরকারের কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। গোলাপবাগ মাঠের চারপাশে শুধু মানুষ আর মানুষ। গণসমাবেশ ঠেকাতে পারেনি। আওয়ামী লীগ নেই। সাধারণ মানুষ তাদের লাল কার্ড দেখিয়েছে। মানুষ জেগে উঠেছে।’

তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্তে সংসদে যোগ দেই। সংসদে মানুষের কথা বলতে গেলে মাইক বন্ধ করে দেয়। এ সংসদে থাকা না থাকার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সরকারের গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, দুর্নীতি, লুটপাটের প্রতিবাদে পদত্যাগ করছি। মেইল করেছি পদত্যাগপত্র। যে সংসদ ভোটচোরের সংসদ, সে সংসদে থাকার প্রয়োজন মনে করি না।’

আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ভোটাধিকার ফিরে আসুক, তারেক রহমান ফিরে আসুক। এ প্রত্যাশায় আজকে পদত্যাগ করলাম।’

২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ছয়টি আসন পায়। নানা নাটকীয়তার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া বাকিরা সংসদে যোগ দেন। পরে সংরক্ষিত আসনে সংসদে ঢোকেন রুমিন ফারহানা। আর ফখরুলের আসনে উপনির্বাচনে সংসদে বসেন গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ।

সংসদ নির্বাচিত নয় দাবি করে ওই সময় বিএনপি বলে আসছিল তারা সংসদে যাবে না। তবে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের বিষয়ে ওই সময় মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, ‘ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সংসদে কথা বলার সীমিত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সংসদ ও রাজপথের সংগ্রামকে যুগপৎভাবে চালিয়ে যাওয়াকে আমরা যুক্তিযুক্ত মনে করছি।’

Related Article