২৭ নভেম্বর, ২০২৪
ছবি: তুফান সরকার
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় বগুড়ার আলোচিত শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত এক কোটি ৫৯ লাখ ৬৮ হাজার ১৮২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে বুধবার (২৭ নভেম্বর) বগুড়ার স্পেশাল জজ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এ রায় দেন।
বগুড়া শহরের চক্র সূত্রাপুর এলাকার মৃত মজিবর রহমান সরকারের ছেলে তুফান সরকার শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ ১৩টি মামলা রয়েছে। ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় ২০১৭ সালে গ্রেফতার হন। পরে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে জামিন দেওয়া হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর একাধিক হত্যা মামলায় আসামি হওয়ায় আত্মগোপনে আছেন তিনি।
দুদকের মামলা সূত্রে জানা যায়, তুফান সরকারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠার পর ২০১৮ সালের মার্চে দুদক থেকে তার কাছে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ পাঠানো হয়। ওই মাসেই দুদকে ৯১ লাখ ৭০ হাজার টাকার স্থাবর ও ৩৮ লাখ ৯ হাজার ১৫ টাকার অস্থাবর সম্পদের হিসাব দেওয়া হয়। সম্পদ যাচাই করে দুদক তুফানের জমি, বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংকে সঞ্চয়সহ এক কোটি ৫৯ লাখ ৬৮ হাজার ১৮২ টাকা মূল্যের সম্পদের সন্ধান পায়। আয়ের বৈধ কোনও উৎস, আয়কর রিটার্ন দাখিল কিংবা কোনও খাতের আয় প্রদর্শন ও আয়কর পরিশোধের প্রমাণ দিতে পারেননি তিনি। এ কারণে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে বগুড়া সমন্বিত দুর্নীতি দমন কার্যালয়ের (দুদক) তৎকালীন সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর দুদক আইন ২০০৪-এর ২৬ ও ২৭ (১) ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
দুদকের বগুড়ার আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তুফান সরকারকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের দণ্ড দেন আদালত। এ ছাড়া সম্পদের তথ্য গোপন করায় আরও তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, তিন হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাকে গ্রেফতারের পর এক মামলার সাজার মেয়াদ শেষে আরেক মামলার সাজা কার্যকর হবে বলেও আদেশে উল্লেখ করেন আদালত।’
বগুড়া সদর থানা সূত্র জানায়, তুফান সরকারের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা, নারী ও শিশু নির্যাতন, মাদকদ্রব্য, বিস্ফোরক দ্রব্য, বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি ৫ আগস্টের পরের মামলা। ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই তুফান সরকার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কলেজে ভর্তিচ্ছু এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে নিজ বাড়িতে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। পরে ধর্ষণের শিকার ছাত্রী ও তার মাকে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা হয়েছিল।
ওই বছরের ২৯ জুলাই ছাত্রীর মা বগুড়া সদর থানায় তুফান সরকার, তার স্ত্রী তাসমিন রহমান আশা, আশার বোন সাবেক পৌরসভার কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি, শাশুড়ি লাভলী রহমান রুমি, তুফান বাহিনীর সদস্য আতিকুর রহমান আতিক, মুন্না, আলী আজম, মেহেদী হাসান রূপম, সামিউল হক শিমুল এবং এমারত আলম খান জিতুর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন। ২০১৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ ধর্ষণ মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির আদেশ দিয়েছিলেন। পরে তুফান সরকার ছাড়া সব আসামি জামিনে ছাড়া পান। তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়। প্রায় সাড়ে চার বছর পর জেল থেকে জামিনে ছাড়া পান তুফান। কিন্তু মামলার কাজ ধীরগতিতে চলছে।