৩০ এপ্রিল ২০২৫
হোম স্বাস্থ্য সারাদেশ জাতীয় রাজনীতি অর্থনীতি ও বাণিজ্য খেলাধুলা বিনোদন আন্তর্জাতিক ধর্ম ও জীবন লাইফ স্টাইল শিক্ষা প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান পরিবেশ চাকরি বা ক্যারিয়ার মতামত আইন-আদালত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশেষ সংবাদ অপরাধ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বকাপ ফুটবল
জাতীয় / রাজনীতি

আওয়ামী লীগই প্রতিষ্ঠা করেছে ভোটের অধিকার: শেখ হাসিনা

২৪ ডিসেম্বর, ২০২২

জুয়েল রানা,
স্টাফ রিপোর্টার

ছবি: রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের ২২তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্য দেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোট দেয়ার যে অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, সেই অধিকার আওয়ামী লীগই নিশ্চিত করেছে। আমি জানি এই ভোট অনেকেই কন্ট্রোভার্সিয়াল করতে চায়, অনেকে অনেক কথা বলেন, কিন্তু আমরা সেটা করেছি।’

ভোটকে বিতর্কিত করে নানা মানুষ নানা কথা বললেও এ দেশের মানুষের নিজের ভোট নিজে দেয়ার যে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে তা আওয়ামী লীগই প্রতিষ্ঠা করেছে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও যুদ্ধের জের ধরে দেয়া নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সরকারপ্রধান। তাই রাশিয়া-ইউক্রেনকে উসকানি না দিয়ে যুদ্ধ বন্ধ ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের ২২তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোট দেয়ার যে অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, সেই অধিকার আওয়ামী লীগই নিশ্চিত করেছে। আমি জানি এই ভোট অনেকেই কন্ট্রোভার্সিয়াল করতে চায়, অনেকে অনেক কথা বলেন, কিন্তু আমরা সেটা করেছি।’

নির্বাচন কমিশন গঠনে তার সরকার আইন করে দিয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সেই আইন মোতাবেকই মহামান্য রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি করে নির্বাচন কমিশন গঠন করছে। সেখানে আমরা আওয়ামী লীগ কোনো হস্তক্ষেপ করি না। নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দিয়েছি।’

আগে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব আর্থিক সক্ষমতা ছিল না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে এটা রাখা ছিল। আমরা সেটা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে সম্পূর্ণ সেটা নির্বাচন কমিশনকে, এই আর্থিক সক্ষমতা তাদেরটা তাদের হাতে দিয়ে দিয়েছি। বাজেট থেকে সরাসরি তাদেরকে টাকা দেয়া হয়। যাতে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করেছি। ভোটার আইডি তৈরি করেছি। ইভিএম কিছু কিছু চালু হয়েছে। সেখানে কারচুপি করার কোনো সুযোগ আছে বলে আমরা জানি না।’

তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২ আমরা পাস করে দিয়েছি। আমাদের যদি জনগণের ভোট চুরির দুরভিসন্ধি থাকত, তাহলে আমরা সেটা কেন করব? খালেদা জিয়ার মতো ওই আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন আমরা করতাম, তাতো আমরা করি নাই। আমাদের জনগণের ওপর আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে, সেই বিশ্বাস নিয়েই আমরা চলি।’

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু কারও ভোট চুরি করলে বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয় না। এদেশের মানুষ মেনে নেয়নি। তখন গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, আন্দোলন হয়েছিল। খালেদা জিয়া ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল। আর ৩০ মার্চ পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। বাংলার জনগণ তাকে বাধ্য করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন কী ছিল? নির্বাচন মানেই ছিল, আমরা যেটা বলতাম ১০টা হোন্ডা, ২০টা গুন্ডা নির্বাচন ঠান্ডা। এই নির্বাচনি সংস্কার, এটা কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগ, ১৪ দল, মহাজোট মিলে আমরা একটা প্রস্তাব দিয়েছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর যে কাজ করুক, আমাদের জেল খাটাক আর যা-ই করুক তারা অন্তত সেই প্রস্তাবের কিছু কাজ বাস্তবায়ন করে গেছে।’

ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ্ব ব্যালেট বাক্সের প্রচলন আওয়ামী লীগের সদিচ্ছার কারণেই বাস্তবায়ন হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

 

উসকানি থামান, যুদ্ধ বন্ধ করুন

বিশ্ব জুড়ে শান্তি স্থাপনে ও সাধারণ মানুষের কল্যাণের কথা ভেবে রাশিয়া-ইউক্রেনকে আর উসকানি না দিয়ে যুদ্ধ বন্ধ ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বিশ্ব নেতাদের ভূমিকা নিয়ে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘সব বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে আমরা দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। এই যে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, একটা বাধা করোনা আর যুদ্ধ। এ জন্য আমার আহ্বান, আমরা যুদ্ধ চাই না। ওই যুদ্ধ চাই না, স্যাংশন চাই না। ওগুলো বন্ধ করেন। সকল দেশ স্বাধীন। স্বাধীনভাবে চলার অধিকার আছে। এই অধিকার সকল দেশের থাকতে হবে। যুদ্ধ মানুষের ক্ষতি করে। যুদ্ধের ভয়াবহতা কী আমরা জানি। ওই ৭১ সালে বন্দিখানায় ছিলাম। আমার প্রথম সন্তান জয় ওই বন্দিখানায় জন্ম নিয়েছিল। আমাদের পাকিস্তান হানাদার বাহিনী একটা কম্বল দিয়েছিল।’

যুদ্ধকালের নিজ পরিবারের অবর্ণনীয় কষ্টের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব থেকে বেশি মেয়েরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় যুদ্ধের সময়। শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের মানবাধিকার লংঘিত হয়। এই জন্য যুদ্ধ চাই না। আমি বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে আহ্বান করব, ওই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করেন। তাদের উসকানি দেয়া বন্ধ করেন। শান্তি চাই।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও যুদ্ধের জের ধরে দেয়া নিষেধাজ্ঞায় অর্থনৈতিক সংকটের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত। উন্নত ধনী দেশগুলো আজকে অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে। বাংলাদেশে আমরা এখনও আমাদের অর্থনীতি সচল রাখতে পেরেছি। কিন্তু তারপরেও এর আঘাতটাতো আমাদের ওপরে আসবে।’

কোভিড থেকে বেরিয়ে আসতে না আসতেই এই যুদ্ধ সব অগ্রযাত্রা নষ্ট করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই শীতের মধ্যে আজকে তারা বিদ্যুৎ পায় না। যান, ইউক্রেনের শিশুদের অবস্থা, শুধু ইউক্রেন কেন উন্নত দেশগুলোর অবস্থা আপনারা দেখেন। কতভাগ তারা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। আমরা বাংলাদেশ এখনও ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। সেই জন্য আমি আহ্বান করেছি সকলকেই যার যেটুকু জমি আছে চাষ করেন, উৎপাদন করেন।’

 

‘দুর্নীতি করে টাকা বানাতে আসিনি’

প্রধানমন্ত্রী তার দীর্ঘ বক্তব্যে নিজস্ব অর্থায়নের পদ্মা সেতু নির্মাণের গৌরবগাঁথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের ওপর দুর্নীতির অভিযোগ এসেছিল। দুর্নীতি করে টাকা বানাতে আসিনি। আমার বাবা রাষ্ট্রপতি ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আর আমি চার চারবার প্রধানমন্ত্রী। আমাদের পরিবার দুর্নীতি যদি করত, তাহলে দেশের মানুষকে কিছু দিতে পারতাম না। আমরা দেশের মানুষকে দিতে এসেছি, মানুষের জন্য করতে এসেছি। এ কারণেই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে এটা অন্তত আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে এটা মেনে নিতে পারি না।’

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগই পারে দেশের উন্নয়ন করতে, এটাই বাস্তবতা।’

করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সাফল্য, করোনা প্রতিরোধে বিনামূল্যে টিকা দেয়া এবং ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দেয়ার বিষয়গুলো তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

 

‘জীবন থাকতে দেশের স্বার্থ নষ্ট হবে না’

১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো সরকার গঠন করে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার আওয়ামী লীগের অবদান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তবে ২০০১ সালের নির্বাচনের হেরে যাওয়ার বিশদ বিবরণ না দিলেও দিয়েছেন ইঙ্গিত।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এতটুকু স্বার্থ আমার জীবন থাকতে নষ্ট হবে না। কারও হাতে তুলে দেব না। আমার এই প্রতিজ্ঞাই ছিল। হয়তো সে কারণে আমরা আবার আসতে পারিনি। তাতে আমার কোনো আফসোস নেই।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশের মানুষের ওপর আবার শোষণ, বঞ্চনা শুরু হয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা কী চেয়েছিলেন? তিনি চেয়েছিলেন, এ দেশটি হবে ক্ষুধা দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলাদেশ। অর্থ্যাৎ প্রতিটি মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এই সুযোগটা তিনি করে দিয়ে এদেশটাকে উন্নত সমৃদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় তিনি তা পারেননি।’

৬ বছরের নির্বাসন জীবন ছেড়ে ১৯৮১ সালে ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ সময়ে দেশে ফেরার কারণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই স্বাধীনতা যাতে ব্যর্থ না হয়, স্বাধীনতার ‍সুফল যেন বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছায়, তৃণমূলের মানুষ যেন সেই সুযোগ পায়, সেটা নিশ্চিত করাই ছিল আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে এই বাংলাদেশকে আমরা কিন্তু এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি।’

টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরিসহ এ খাতে সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছুদিন লোড শেডিং দিতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন ধীরে ধীরে সেখান থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। কিন্তু আমার অনুরোধ থাকবে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে, মিতব্যয়ী হতে হবে। কারণ এই বিদ্যুৎ উৎপাদন, গ্যাস ক্রয়ে অনেক খরচ হয়, এ কথা মাথায় রাখতে হবে।’

Related Article